Skip to content

প্রজাপতির শীতযাত্রা

Butterfly2

সাদমান সৌভিক
হাড় কাঁপানো শীতের কবল থেকে বাঁচতে সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান এলাকা থেকে গরমের দেশগুলোতে পাড়ি জমায় পাখিরা। কিন্তু শুনে অবাক হবেন অনেকটা এমন অভ্যাস আছে মনার্ক বাটারফ্লাই বা সম্রাট প্রজাপতিরও।

প্রতিবছর শীতকালের আগে এ প্রজাতির প্রজাপতিগুলো উত্তর আমেরিকার উত্তরাঞ্চল থেকে তুলনামূলক গরম দক্ষিণাঞ্চলে পরিযায়ী হয়।

অর্থাৎ কানাডা থেকে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বা মেক্সিকোর দিকে যাত্রা করে এরা।

উজ্জ্বল লালচে-কমলা রঙের মাঝে কালো শিরাযুক্ত ডানা আর ডানার কিনারায় সাদা ছোপ ছোপ দাগ দেখে সহজেই চেনা যায় এদের।

প্রতিবছর শরত্কালে এই প্রজাতির লাখ লাখ প্রজাপতি এদের শীতকালীন আবাসের দিকে রওনা হয়। এ সময় ক্যালিফোর্নিয়া ও মেক্সিকোর বিভিন্ন অঞ্চলের গাছগুলো এদের ডানার চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল রঙে ছেয়ে যায়।

প্রজাপতিগুলো দলবেঁধে পাইনজাতীয় গাছের ডালে বসে থাকে। এরা এত ঘনভাবে থাকে যে গাছের আসল রং ঢেকে গিয়ে ওগুলোকে কমলা মনে হয়। অনেক সময় গাছের ডালও ঝুলে পড়ে। এই চমত্কার দৃশ্য দেখার জন্য প্রতিবছর পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে মেক্সিকো আর ক্যালিফোর্নিয়ায়।

বহু বছর ধরে মানুষ মনার্কদের এই শীতযাত্রা দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ভেবেছে, কানাডায় গ্রীষ্মকাল কাটানো এই প্রজাপতিগুলো শীতকালে কোথায় যায়। ১৯৩৭ সালে কানাডিয়ান প্রাণীবিজ্ঞানী এফ এ আর্কাহার্ট প্রজাপতির ডানায় ট্যাগ লাগিয়ে এদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেন। প্রচুর সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের সাহায্য নিয়ে বহু দিন গবেষণার পর তিনি মনার্কদের প্রথম শীতকালীন আবাসটি খুঁজে পান মেক্সিকোর মিচোয়াকানের একটি পর্বত চূড়ায়। এটি প্রজাপতিগুলোর যাত্রা শুরুর জায়গা থেকে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার দূরে।

এলাকাটি এখন ‘মনার্ক বাটারফ্লাই বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ’ নামে পরিচিত, যা ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা। মেক্সিকোতে এ রকম অনেক জায়গাই রয়েছে, যেখানে মনার্ক বাটারফ্লাইগুলো অবস্থান করে। এসব জায়গাকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করেছে মেক্সিকান সরকার।

আমাদের দেশে শীতের সময় সাইবেরিয়া থেকে আসা অতিথি পাখির মতোই মনার্ক বাটারফ্লাই কানাডার বরফ শীতল আবহাওয়া সহ্য করতে পারে না। মূলত শীতনিদ্রায় যাওয়ার জন্যই পরিযায়ী হয় এরা।

Butterfly

সম্রাট প্রজাপতিরা সাধারণত অক্টোবরের দিকে তাদের পরিযান শুরু করে, তবে শীত একটু আগে আগে চলে এলে এদের সময়টাও এগিয়ে আসে। মনার্ক বাটারফ্লাইকে কানাডা থেকে মধ্য মেক্সিকোর বনভূমির উষ্ণ অঞ্চলে আসতে দুই হাজার থেকে চার হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরত্ব পেরোতে হয়।

ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে আসা প্রজাপতিগুলো রকি পর্বতমালার পশ্চিমাঞ্চলের বনভূমির ইউক্যালিপটাস-জাতীয় গাছগুলোতে শীতনিদ্রায় যায়। আর প্রজাপতিদের যে দলগুলো মেক্সিকোর ওয়ামেল বনে পরিযায়ী হয়, তারা শীতনিদ্রায় যায় ‘ওয়ামেল ফার’ গাছে।

শীতের শেষে শুরু হয় ফিরতি অভিযান। তবে এদের ফিরতি অভিযানটিও বেশ আশ্চর্যজনক। প্রজাপতিগুলোর ফিরতি পথ কোনোভাবেই বিচ্যুত হয় না।

কিভাবে এই প্রজাপতিগুলো দিক নির্ণয় করে, তা নিয়ে গবেষণা চলছে এখনো। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে নির্দিষ্ট পথে ফিরতে পারার এই গুণটি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। আবার কারো কারো ধারণা, প্রজাপতিগুলো আকাশে সূর্যের অবস্থান আর পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের বিন্যাস যাচাই করে পথ খুঁজে নেয়।

তবে নির্বিচারে বন উজাড়ের জন্য মনার্ক বাটারফ্লাইদের এই শীতকালীন আবাসগুলো আজ হুমকির মুখে। ২০১৩ সালের হিসাবে দেখা গেছে, যে পরিমাণ প্রজাপতি পরিযান শুরু করেছিল তার একটা বিরাট অংশই মেক্সিকোতে পৌঁছতে পারেনি।

এর কারণ হিসেবে ব্যাপক জলবায়ু পরিবর্তন আর কৃষিজমির ব্যাপক বৃদ্ধিকেই দায়ী করা হচ্ছে।

মনার্ক বাটারফ্লাই বিলুপ্ত হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে মেক্সিকোর, কারণ প্রচুর পর্যটক মেক্সিকো আসে শীতনিদ্রায় আসা এসব সম্রাট প্রজাপতিকে এক নজর দেখতে। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *