Skip to content

প্রাচীন জলদুর্গ

Durgo

একদিকে প্রাচীন শতাব্দীর ইতিহাস-ঐতিহ্য, অন্যদিকে আধুনিক শহুরে জীবনেও মেলে মোগল আমলের ছোঁয়া। স্মৃতি এখানে বহমান, প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক জলদুর্গ। ইট-পাথুরের দুর্গে রচিত হয়েছিল মোগল আমলের অজস্র ঘটনা। শহুরে ক্লান্তি মুছে হারিয়ে যেতে পারেন শতাব্দীর স্মৃতিমাখা প্রান্তরে।

গোটা বাংলায় বহু প্রাচীন নিদর্শন এখনো মানুষের রহস্যের কেন্দ্রবিন্দু। এখনো বিদ্যমান রয়েছে এসব প্রাচীন স্থাপত্যের ধুলোমাখা প্রান্তর। এক সময় এসব প্রাচীন স্থাপনায় দাপিয়ে বেড়াত মোগল রাজা-বাদশা এবং তাদের সৈন্যসামন্ত। রচিত হয়েছিল অসংখ্য বীরদর্পণের ইতিহাস। এসব মোগল স্থাপনার কোনোটি ব্যবহার হতো রাজা-বাদশাদের রাজ্য পরিচালনায় আবার কোনোটি ব্যবহার হতো তাদের মনোরঞ্জনে। কোনোটি আবার ব্যবহার হতো রাজ্য সুরক্ষায়। তবে, এসব প্রাচীন স্থাপনার মধ্যে জলদুর্গের সংখ্যা নেহায়েতই ছিল কম।

রাজধানীর পাশে অবস্থিত তিনটি প্রাচীন জলদুর্গ। হাজীগঞ্জ দুর্গ, সোনাকান্দা দুর্গ এবং ইদ্রাকপুর দুর্গ এর মধ্যে অন্যতম। এসব দুর্গ নিয়ে রয়েছে আবার বহু মর্মস্পর্শী কাহিনী। ষোলশ শতাব্দীর এসব প্রাচীন জলদুর্গ সচক্ষে দেখলে চোখের সামনে ভেসে উঠবে মোগলদের রাজ্য পরিচালনার দৃশ্য।

► ইদ্রাকপুর দুর্গ
ইতিহাস এখানে কথা বলে। ইছামতির তীর ঘেঁষে এখনো ঐতিহ্যের বাহক হয়ে আছে ইদ্রাকপুর দুর্গ। কথিত আছে, মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে পুরাকালের ঢাকাকে সুরক্ষিত রাখতে এ দুর্গটি তৈরি করা হয়েছিল।

ধারণা করা হয়, ১৬৬০ খিস্ট্রাব্দে মোগল সুবেদার মীর জুমলা দুর্গটি তৈরি করেন। ৩৫০ বছরেরও বেশি পুরনো স্থাপনাটি মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রাণ। কালের পরিক্রমায় ইছামতী তার রূপ পাল্টেছে। কিন্তু মোগল সুবেদার মীর জুমলার দুর্গটি এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মুন্সীগঞ্জ সদরে। ধারণা করা হয়, দুর্গকে ঘিরেই মুন্সীগঞ্জের বসতি গড়ে ওঠে। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহে মোগলদের পতন হলে দুর্গটি ইংরেজরা দখলে নেয়। পরবর্তীতে ১৯০৯ সালে ব্রিটিশ ভারতে প্রত্নতাত্ত্বিক কর্তৃপক্ষ দুর্গটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়।

কালের পরিক্রমায় দুর্গটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। লাল ইটে নির্মিত দুর্গটির দৈর্ঘ্য ৮৬.৮৭ মিটার এবং প্রস্থ ৫৯.৬০ মিটার। দুর্গটির গায়ে বন্দুকের গুলি চালানো ফোকর রয়েছে। রয়েছে মাটির নিচের কুঠুরি এবং সিঁড়ি। কুঠুরিটি গোপন আশ্রয়স্থল হলেও সিঁড়িটি ছিল গোপন কক্ষের পথ। আর কক্ষটি ছিল অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদঘর। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর দুর্গটির সংস্করণ করে।

Durgo2

► হাজীগঞ্জ দুর্গ
নদীপথে জলদস্যুদের ওপর নজর রাখতে শীতলক্ষ্যার কোল ঘেঁষে তৈরি করা হয় হাজীগঞ্জ জলদুর্গ। ১৬৫০ সালে নির্মিত দুর্গটি সে সময়ের প্রধান জলদুর্গের মধ্যে অন্যতম।

বাংলাপিডিয়ায় লেখা আছে, মোগল সুবেদার মীর জুমলাই দুর্গটি নির্মাণ করেছেন। তবে, আহম্মাদ হাসান দানি তার ‘মুসলিম আর্কিটেকচার ইন বেঙ্গল’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইসলাম খান ১৬১০ সালে ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করার পর এটি নির্মাণ করেন।

পাঁচ কোণার দুর্গটির বাহুর আয়তন প্রায় ২৫০ থেকে ২০০ ফুট এবং দেয়াল বেশ উঁচু এবং ২০ ফুট পুরু। দুর্গে কামান বসানোর বুরুজ এখনো টিকে আছে। দুর্গের পূর্ব-দক্ষিণে রয়েছে চৌকো ওয়াচ টাওয়ার। বর্তমানে ধ্বংসপ্রায় হলেও টাওয়ারে ঢোকার পথটি পূর্বমুখী দরজা আর ভিতরে ঠিক মাঝখানে মোটা গোল পিলারে ঘোরানো সিঁড়ি। দুর্গের আশপাশে কোনো স্থাপনা ছিল না। সৈন্যরা এখানে তাঁবু টেনে অবস্থান করত। ধারণা করা হয় এখানে অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। দুর্গটি সম্পূর্ণ ইট দ্বারা নির্মিত আর প্লাস্টার করা হয়েছিল। বর্তমানে লাল ইটগুলো খসে পড়ছে। অবহেলায় দুর্গটি হারাতে বসেছে নিজস্ব রূপ।

► সোনাকান্দা দুর্গ
দুর্গের নামানুসারে এলাকার নামকরণ করা হয়। কথিত আছে, বারভূঁইয়াদের অধিপতি ঈশা খাঁ বিক্রমপুরের জমিদার কেদার রায়ের বিধবা কন্যা সোনাবিবিকে জোরপূর্বক বিয়ে করে দুর্গে নিয়ে আসেন। বিষয়টা মানতে না পেরে সোনাবিবি নীরবে নিভৃতে দুর্গে অসহায় জীবনযাপন করতেন। সেই থেকে দুর্গের নাম সোনাকান্দা।

এ জলদুর্গটিও সুবেদার মীর জুমলা ষোলশ’ শতাব্দীতে নির্মাণ করেন। দুর্গের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৬ মিটার এবং প্রস্থ ৫৮ মিটার। দুর্গটি মোগল স্থাপত্যরীতিতে তৈরি। উত্তর দিকে বেশ চওড়া তোড়ন। দুর্গের দেয়ালও বেশ পুরু। দুর্গের পশ্চিমাংশে রয়েছে সিঁড়িযুক্ত খিলান পথ ও উঁচু বেদি। দুর্গের প্রতিরক্ষা প্রাচীরের চূড়ায় মার্লন নকশা এবং বুরুজ রয়েছে। উঁচু প্রাচীর থেকে বন্দুকের গুলি ও কামানের গোলা ছোড়ার ফোকর রয়েছে। সোনাকান্দাটি ১৯৫০ সালে জাতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতায় নিয়ে সংস্কার করা হয়।

► কীভাবে যাবেন
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট ও হকি স্টেডিয়ামের সামনে বিআরটিসির এসি বাস, বন্ধন ও উৎসব পরিবহনসহ আরও অনেক বাস পাবেন নারায়ণগঞ্জের। নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া বাসস্টেশনে নেমে সেখান থেকে রিকশা কিংবা অটোরিকশায় যেতে হবে হাজীগঞ্জ দুর্গে।

হাজীগঞ্জ দুর্গ দেখে রিকশায় চলে যান নারায়ণগঞ্জ শহরের গুদারাঘাটে। সেখান থেকে নৌকায় শীতলক্ষ্যা নদী পেরিয়ে অটোরিকশায় চলে যেতে পারবেন বন্দর থানা সোনাকান্দায়। এখানেই সোনাকান্দা জলদুর্গ।

এর থেকে স্বল্প দূরত্বেই মুন্সীগঞ্জে আছে ইদ্রাকপুর দুর্গ।

এক দিনেই দেখে আসতে পারবেন তিনটি দুর্গ। বেড়ানো শেষে ঢাকায় ফিরতে পারেন সড়ক কিংবা নদীপথে। মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে ঢাকায় ফেরার প্রচুর লঞ্চ পাবেন। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট, কুসুম পরিবহনসহ আরও অনেক বাস ঢাকায় ফেরে। সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *