:: দেওয়ান মোঃ সামছুর রহমান ::
বিশাল বালুকারাশি, ছোট ছোট ঢেউ আছড়ে এসে পড়ছে কিনারায়। রবিঠাকুরের ভাষায় ‘চিক চিক করে বালি কোথা নাই কাঁদা,’ ঠিক যেন তাই। মন,-প্রাণ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মেঘনা নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা একটি চর। পতেঙ্গা কিংবা কক্সবাজারের মতো সি-বিচ না হলেও মেঘনার বুকে বালুকাময় অনিন্দ্যসুন্দর রূপবতী স্বপ্নিল মায়াদ্বীপ।
ঋতু বৈচিত্র্যের এ দেশে এ চর যেন একেক ঋতুতে একেক রূপে ধরা দেয়। বর্ষায় বিশাল জলরাশি যেন মেঘনার রূপকে সাগরের আকার ধরা দেয়, আবার শরতে সারি সারি কাশবনের সমাহারে যেন হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির মাঝে। কিংবা হালকা শীতে মিষ্টি রোদে বালুকাময় তটভূমির ওপর দিয়ে সকাল কিংবা অন্তগামী সূর্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পথ চলা যেন স্নিগ্ধতায় শান্তির পথে হাঁটা আর গ্রীষ্মের ধু ধু বালি যেন অন্যরূপে ধরা দেয় এ চরে, অথবা জ্যোৎস্না রাতে, ভরা চাঁদের হাসিতে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করবে অসীমের মাঝে।
মোটকথা, কোনো বিশেষণই যেন উপযুক্ত নয় এর জন্য।
চমৎকার একটি স্থান ঘুরে বেড়ানোর জন্য।
ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী বারদী ইউনিয়নের অন্তর্গত নুনেরটেক একটি গ্রাম, যা মেঘনা নদী দ্বারা সোনারগাঁয়ের মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন।
নদীপথে সোনারগাঁ থেকে যার দূরত্ব প্রায় চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার।
আজ থেকে প্রায় শত বছর আগে মেঘনার বুক চিরে জেগে ওঠা চরের নাম রেখেছিল স্থানীয়রা নুনেরটেক।
সাগরের পানি নোনতা কিন্তু মেঘনার পানি মিঠা হওয়া সত্ত্বেও নুনেরটেকের নামকরণ ছিল সত্যি অভিনব।
সেই নুনেরটেকের কোল ঘেঁষেই প্রায় ৩৫-৩৬ বছর আগে জেগে ওঠে আরও একটি চর, যার তিনটি অংশ রয়েছে এবং তিনটি অংশের তিনটি নাম হল গুচ্ছগ্রাম, সবুজবাগ আর রঘুনার চর।
এরশাদ সরকার আমলে ২৬টি পরিবারকে স্থাপনা তৈরি করে দিয়ে গুচ্ছগ্রামের উদ্বোধন। এ গুচ্ছগ্রামের সামনে বিশাল অংশই হলো মায়াদ্বীপ। বর্ষায় এর অস্তিত্ব পানির তলদেশে হলেও শুকনো মৌসুমে বিরাট অঞ্চল নিয়ে তা দৃশ্যমান হয়।
মায়াদ্বীপের পাঠশালা
সোনারগাঁয়ের প্রাচীন নাম সুবর্ণ গ্রাম। এ নামধারী সামাজিক সংগঠন সুবর্ণ গ্রাম ফাউন্ডেশন ২০০৭ সালে এ চরে সুবিধাবঞ্চিত জেলে শিশুদের শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে মায়াদ্বীপ জেলে শিশু পাঠশালা নামে একটি বিদ্যালয় চালু করে। এর মাধ্যমে নিরক্ষর শিশুদের মাঝে আলোক শিখা জ্বালানোর প্রচেষ্টা চলছে। মায়াদ্বীপের উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় এটি।
মেঘনায় মাছ ধরার দৃশ্য
এ চরে দাঁড়িয়ে চারদিকে মেঘনায় নৌকায় মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে সত্যিই চমৎকার লাগে। ছোট-বড় অসংখ্য নৌকায় করে জেলেরা মাছ ধরছে। এ চরবাসী লোকদের প্রধান জীবিকাই হল মাছ ধরা। পাইকরা এসে সে মাছ নিয়ে যান শহরে বিক্রির জন্য।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে করে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় নেমে সিএনজিতে বৈদ্যেরবাজার ঘাটে। সেখান থেকে ট্রলারে করে প্রায় ৪০ মিনিট সময় লাগে এ চরে পৌঁছতে। অথবা মোগড়াপাড়া থেকে সিএনজিতে আনন্দ বাজার। আনন্দবাজার থেকে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ট্রলার যায় নুনেরটেকে। ট্রলারের ভট ভট শব্দ কিছুটা বিরক্তিকর হলেও বাদবাকি সব কিছুই চমৎকার। সৌজন্যে: যুগান্তর