Skip to content

বকের বাড়িতে অতিথি

এমরান হাসান সোহেল
এ বছরই প্রথম বকের বাড়িতে অতিথি এসেছে। অতিথির নাম পানকৌড়ি। ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে শুধু বকের বসবাস। এবার অতিথি আসায় বেড়েছে আকর্ষণ। একসময় নাম ছিল পাটনিবাড়ি। কিন্তু পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নুরাইনপুর বাজারে গিয়ে ওই নামে বাড়ি খুঁজলে পাওয়া যাবে না। কারণ দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে ওই বাড়ি বকের দখলে চলে গেছে। এ বছরও বক এসেছে। শত শত বকের দিনরাত ডাকাডাকিতে মুখর থাকে বাড়ি। তাই এলাকার লোকজন বকের বাড়ি নামে চেনে। বক ও পানকৌড়ির ডাকে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় পাটনিবাড়ির সীমানা ছাড়িয়ে ওরা ছড়িয়ে পড়েছে পাশের বিভিন্ন বাড়ির গাছে।

পটুয়াখালীর বাউফলের নুরাইনপুরে বকের বাড়িতে এসেছে পানকৌড়ি।

পটুয়াখালীর বাউফলের নুরাইনপুরে বকের বাড়িতে এসেছে পানকৌড়ি।

ওই উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার উত্তরে নুরাইনপুর বাজারে বকের বাড়ির অবস্থান। বাজারের দক্ষিণ পাশে পাটনিবাড়ি। পাটনিবাড়ির গাছের চূড়ায় বকের বাস। বকের কোলাহলে মুগ্ধ পথিক। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পানকৌড়ির কলতান। দূর থেকে দেখে বোঝা যায়, অসংখ্য বক আর পানকৌড়ির বাস ওখানে। শোনা যায় ডাকাডাকি। ধবধবে বকেরা ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাচ্ছে অথবা আসছে। কেউ খড়কুটো কিংবা গাছের ডালপালা দিয়ে বাসা বুনতে ব্যস্ত। আর কালো পানকৌড়িও বকের মতো একই কাজে ব্যস্ত। পাটনিবাড়ির আম, মান্দার, সুপারি, মেহগনি, রেইনট্রিসহ ১৫টি গাছে বাসা। এই বক দেখতে আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন অনেকে আসছে।

ওই বাড়ির বিজয় পাটনি জানান, ছয় প্রজাতির বক আছে এখানে। সংখ্যায় বেশি বড় বক ও ময়ূরপঙ্খি বক, সবুজ ঠোঁটের বক, হলুদ ঠোঁটের বক। এসব প্রজাতির বক প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন মগডাল দখল করে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। লতাপাতা আর ডালপালা দিয়ে বাসা বোনে ওরা। একটি বক তিন থেকে সাতটি ডিম দেয়। ২৮ থেকে ৩২ দিনে বাচ্চা ফোটে। দুই মাস বয়স পেরোলে আকাশে উড়তে শুরু করে বকের ছানা। বকেরা এ আবাসে থাকে বছরের প্রায় ৯ মাস। চৈত্র মাসে নদীনালা ও খালবিলে পানি এলে ওরা চলে আসে এই বাড়িতে। প্রায় অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত থেকে পানি শুকালে অন্যত্র চলে যায়। এর মধ্যে বর্ষার প্রজনন মৌসুমে হাজারো বকের ছানা জন্ম নেয়। আর এ বছর ওই সব গাছেই অতিথি হিসেবে আসা পানকৌড়ি হয়তো বকের মতো একই সময় পর্যন্ত ওখানে বাস করবে। গত মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ বক আর পানকৌড়ির নীড়ে ছোট ছোট ছানা উঁকি দিচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, সংখ্যা ও প্রজাতি বেড়ে যাওয়ায় বকগুলো ছড়িয়ে পড়েছে পাশের মজিদ মৌলভী, হাবিব কাজী, মো. বশির খান ওরফে বশির আর্ট, হিরালাল ও আবুল বশার হেলালির বাড়ির গাছগুলোতে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ফুহাদ বিশ্বাস বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা দেখে আসছি, বকগুলো ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আসে। আবার অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে চলে যায়। প্রতিবছর সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর পানকৌড়ি এসে আরো আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে।’

বক দেখার লোভে অনেকে ছুটে আসে পাশের নারাইনপুর লঞ্চঘাটে কিংবা বাজারে। পাশের দশমিনা উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী মো. রায়হান সিকদার এসেছেন বক দেখতে। তিনি বলেন, ‘দশমিনায় ঢাকা যাওয়ার লঞ্চঘাট আছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে তিনি ৩৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নারাইনপুর লঞ্চঘাট দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেন। বক দেখার জন্য প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা তিনি ঘাটে থাকেন।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার বক আমি আর কোথাও দেখিনি। বকগুলো দেখতে খুব ভালো লাগে।’

বকবাড়ির সদস্য মো. বশির খান ওরফে বশির আর্ট বলেন, ‘বকগুলোকে কেউ আঘাত করে না, কেউ তাড়ায়ও না।’ পাখি বিশেষজ্ঞ ও পটুয়াখালী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক পিযুষ কান্তি হরি বলেন, ‘এরা সাধারণত জলাশয়ের কাছাকাছি বড় গাছের ডালে কলোনি গড়ে তোলে। মানুষের আক্রমণ না হলে ২৫ থেকে ৩০ বছর একই কলোনিতে থাকে। বক ও পানকৌড়ি প্রায় একই স্বভাবের। বিশেষ করে এরা সবাই জলজ প্রাণী, মাছ, ব্যাঙ ও কীটপতঙ্গ একই ধরনের জলাশয় থেকে আহার করে। তাই কখনো কখনো এক জায়গায় কলোনি করে বাস করে।’ সূত্র : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *