Skip to content

বনের টানে

সাতছড়ি। ছবি : মুস্তাফিজ মামুন

সাতছড়ি। ছবি : মুস্তাফিজ মামুন

শীতে বনে বেড়ানোর মজাই আলাদা। পায়ে চলা পথগুলো শুকনো থাকায় ঘোরাঘুরি করা যায় সহজে। এ মৌসুমে জোঁক কিংবা সাপের প্রকোপ না থাকায় অরণ্য ভ্রমণের মজা মাটি হওয়ারও আশঙ্কা নেই। জঙ্গলগুলো ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন ইশতিয়াক হাসান

কাপ্তাই সংরক্ষিত অরণ্য

রাম পাহাড়, সীতা পাহাড়, কর্ণফুলী বিট, কাপ্তাই মুখ খাল-সব কিছুই পড়েছে কাপ্তাই সংরক্ষিত বনের মধ্যে। বুনো হাতির পালের দেখা পেতে হলেও এ বন আদর্শ। দেখা কঠিন হলেও লাম চিতা বা মেছো বাঘের বিচরণের প্রমাণও মিলেছে। বনের আশপাশে আছে বেশ কিছু মারমাপাড়া। চিৎমরমের বৌদ্ধ মন্দিরগুলো দেখার কথাও ভুলবেন না যেন।

যেতে চাইলে

ঢাকা থেকে কাপ্তাইয়ে বাস যায় শ্যামলী, ডলফিন আর এস আলম পরিবহনের। আবার চাইলে রাঙামাটি গিয়ে সেখান থেকেও কাপ্তাই যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে লেকের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া দারুণ সুন্দর একটি পথও দর্শন হয়ে যাবে।

থাকা-খাওয়া

কাপ্তাইয়ে থাকার জন্য সেরকম ভালো কোনো হোটেল নেই। তবে রাঙামাটিতে আছে পর্যটন করপোরেশনের মোটেল, হোটেল সুফিয়াসহ ভালো মানের বেশ কয়েকটি হোটেল। ভাড়া ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা। কাপ্তাইয়ে খেতে পারেন জুম রেস্তোরাঁয়।

রেমা-কালেঙ্গা

জঙ্গলে মায়া হরিণ, বন মোরগ, বুনো শুয়োর, কাঠবিড়ালি, উদবিড়াল আর নানা জাতের পাখি আছে প্রচুর। বাংলাদেশে অস্তিত্ব সংকটে থাকা শকুনদের বড় একটা দলও আছে সেখানে। কখনো বনে চিতাবাঘ আর বন কুকুরদের আস্তানা গাড়ার খবরও মেলে। বনের ভেতরেই পাবেন আদিবাসী ত্রিপুরাদের পাড়া।

যেতে চাইলে

ঢাকা থেকে সিলেট বা মৌলভীবাজারের বাসে উঠে শায়েস্তাগঞ্জ মোড়ে নামবেন। শ্যামলী, হানিফ ও টিআর ট্রাভেলসের বাস মৌলভীবাজার ও সিলেট যায়। নন এসি ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। ঢাকা-সিলেটগামী জয়ন্তিকা, পারাবত বা উপবন এক্সপ্রেসে উঠেও নামতে পারেন শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে। সেখান থেকে লোকাল বাস বা টেম্পোতে চুনারুঘাট। তারপর অটো বা রিকশায় চেপে সোজা কালেঙ্গার বনে।

থাকা-খাওয়া

নিসর্গের একটি ইকো কটেজ আছে কালেঙ্গার বনের ধারেই। এক রাতের ভাড়া এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা। খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে এতে।

লাউয়াছড়া

জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা পাহাড়ি ছড়া আর পাহাড়ে খাসিয়া গ্রাম বাড়িয়েছে বনের আকর্ষণ। বনের ভেতর হঠাৎ শোরগোলে চমকে উঠে ভাববেন, শখানেক প্রাণী বুঝি খেপে চিৎকার করছে। আসলে কেবল চার-পাঁচটি উল্লুকের ডাকে প্রতিধ্বনি হয়ে এ অবস্থা। অরণ্যের ভেতর দিয়ে কু ঝিক ঝিক শব্দে রেলগাড়ির চলে যাওয়াটাও চমৎকার লাগে দেখতে।

যেতে চাইলে

ঢাকা-সিলেটগামী জয়ন্তিকা, পারাবত বা উপবন এক্সপ্রেসে উঠে নামতে হবে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে। এখান থেকে লোকাল বাস বা গাড়ি রিজার্ভ করে লাউয়াছড়া পৌঁছতে বড়জোর আধা ঘণ্টা। আবার চাইলে মৌলভীবাজারের বাসেও যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল। শ্যামলী, ডলফিনসহ বেশ কিছু পরিবহনের গাড়ি যায় মৌলভীবাজার।

থাকা-খাওয়া

নিসর্গের কয়েকটি ইকো কটেজও পাবেন বনের ধারেই। ভাড়া এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা। এখানে খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। থাকতে পারেন ভানুগাছ টি রিসোর্টেও। ভাড়া এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। খাবারের জন্য বেছে নিতে পারেন শ্রীমঙ্গল শহরের কুটুমবাড়ী হোটেলকে।

সাতছড়ি

ছোট্ট বন সাতছড়ি পড়েছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায়। একটু ঘোরাঘুরি করলেই উল্লুক, হনুমান আর বানরের দলের দেখা পেয়ে যাবেন। বিশাল বিশাল চাপালিশ গাছ দেখে চোখ টাটাবে। বনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা ছড়ার নরম মাটি আর বালুতে পাবেন মেছো বাঘসহ হরেক প্রাণীর পায়ের ছাপ। ছোট বন হলেও ভালুকের বসতি আছে এখানে।

যেতে চাইলে

ঢাকা থেকে সিলেট বা মৌলভীবাজারের বাসে উঠে মাধবপুর নামবেন। সেখান থেকে লোকাল বাস বা টেম্পোতে সাতছড়ি।

থাকা-খাওয়া

চুনারুঘাটে মাঝারি মাপের কিছু হোটেল আছে। কিংবা এখান থেকে দিনে দিনে রওনা হয়ে কালেঙ্গা গিয়ে রাত কাটাতে পারেন।

হাতি আছে টেকনাফ গেম রিজার্ভে

মোট আয়তন প্রায় ১১ হাজার হেক্টর। তৈংগা পাহাড়ের ওপরে উঠে একপাশে দেখবেন বঙ্গোপসাগর আর আরেক পাশে নাফ নদী। কুদং গুহাটা দেখে আসতেও ভুলবেন না যেন। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা পেয়ে যেতে পারেন বুনো হাতির পালের। টেকনাফ গেলে সাগরসৈকত আর মাথিনের কূপটিও দেখে নেবেন।

যেতে চাইলে

ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাবেন প্রথমে। শ্যামলী, গ্রিনলাইন, এস আলমসহ বেশ কিছু পরিবহনের গাড়ি যায় কক্সবাজার। এসি ১৭০০+, নন এসি ৮০০ টাকা। এখান থেকে বাস বা মাইক্রোবাসে চেপে টেকনাফ যাওয়ার পথেই নেমে পড়তে পারবেন গেম রিজার্ভে। বড় দল হলে জিপ রিজার্ভ করেও ঘুরে আসতে পারেন বনটি।

থাকা-খাওয়া

পর্যটন করপোরেশনের নেটং মোটেলে থাকতে পারেন। প্রতি কামরার ভাড়া এক হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার টাকা। এ ছাড়া বনের ধারে নিসর্গের একটি কটেজ আছে।

খাদিমনগর

সিলেট শহরের এত কাছেই যে দারুণ একটি অরণ্য আছে জানেন না অনেকেই। বনে হাঁটার সময় একটু পর পরই পাহাড়ি ছড়া পাবেন। অবশ্য শীতে পানি কম হওয়ায় ছড়ার পানিতে কেবল পা ভিজবে। বাঁশগাছ দেখবেন প্রচুর। বনে আছে মেছো বাঘ, বানর, মায়া হরিণসহ হরেক প্রাণী। পথে পড়া চা বাগানগুলোও মুগ্ধতা ছড়াবে।

যেতে চাইলে

সিলেট শহর থেকে অটোরিকশায়ই চলে যেতে পারবেন বনে। যাওয়া-আসার ভাড়া এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা নেবে।

থাকা-খাওয়া

সিলেটে বেশ কিছু ভালো মাপের হোটেল আছে। পর্যটন মোটেলেও থাকতে পারেন। খাদিমনগরেই বিখ্যাত নাজিমগড় রিসোর্টের অবস্থান। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *