Skip to content

বরিশাল থেকে ঝালকাঠি

সুগন্ধা, বিষখালী, ধানসিঁড়ি ও গাবখান নদীর মোহনা। ছবি: লেখক

সুগন্ধা, বিষখালী, ধানসিঁড়ি ও গাবখান নদীর মোহনা। ছবি: লেখক

আক্কাস সিকদার
লঞ্চে করে বরিশাল গিয়ে রাতেই আবার ফেরা। এমন ভ্রমণে এখন অনেকেই বেরোচ্ছেন। লঞ্চযাত্রাটাই তাঁদের মূল আকর্ষণ। তবে বরিশালে যাঁদের চেনাজানা মানুষ নেই তাঁরা দ্বিধায় পড়েন যে সারা দিন বরিশাল শহরে কোথায় ঘুরবেন এই ভেবে। বরিশাল শুধু নয়, ঘুরে দেখতে পারেন ঝালকাঠিও। বরিশাল থেকে ঝালকঠির দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। এক দিনেই তাই ঘুরে দেখতে পারেন দুই শহর।

ঝালকাঠিতে দেখার জায়গা বললে শুরুতেই বলা যায় কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ির কথা। এ বংশের রোহিনী রায় চৌধুরী ও তাঁর নাতি তপন রায় চৌধুরী দুটি পরিচিত নাম। জমিদার বাড়ির সম্পত্তিতে তৈরি হয়েছে প্রসন্ন কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মূল জমিদার বাড়ি এবং দুর্গামন্দির এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। জমিদার বাড়ির নাট্যশালার চিহ্ন রয়েছে এখনো। নাট্যমঞ্চের গ্রিনরুম এবং হলরুমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কমলিকন্দর নবীন চন্দ্র বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পারিবারিক শিবমন্দির এবং একটি শিবমূর্তি আছে এখনো।

রাতন জমিদার বাড়ি পরিদর্শনের সময় দেখতে পাবেন অন্ধকূপসহ জমিদারদের নানা নিদর্শন। ইট-সুরকির ভবন তৈরি হয়েছে অসামান্য স্থাপত্যশৈলীতে। ঝালকাঠি শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ির অবস্থান। বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ঝালকাঠির কীর্তিপাশা মোড়ে নেমে রিকশায় কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ি যেতে পারেন। এ ছাড়া শহরের অতুল মাঝির খেয়াঘাট থেকে ৩০ মিনিট পর পর টেম্পো ছাড়ে।

ঝালকাঠি শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-বরিশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে রয়েছে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মস্থান সাতুরিয়া মিয়া বাড়ি।

Barisal2আরও যেতে পারেন রাজাপুর উপজেলার হাইলাকাঠি ও ডহরশংকর গ্রামে শীতলপাটিপল্লিতে। এখানে আড়াই থেকে তিন শ বছর ধরে বংশপরম্পরায় শীতলপাটি তৈরির কাজ করছে শতাধিক পরিবার। ঝালকাঠি শহরের কাঠপট্রি ট্রলার ঘাট থেকে এক ঘণ্টা পর পর ট্রলার ছাড়ে হাইলাকাঠি ও ডহরশংকরের উদ্দেশে। সময় লাগে মাত্র ৪০ মিনিট। ঘুরে দেখতে পারেন ঝালকাঠি শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বাসন্ডা নদীর পশ্চিম তীরে বাসন্ডা গ্রামের তাঁতপল্লিও।

ঝালকাঠি শহরতলির গাবখান নদের ওপর নির্মিত পঞ্চম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে আপনি দেখতে পাবেন কবি জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের ধানসিঁড়ি নদী। যদিও নদীটি এখন প্রায় মরে গেছে। কোনোমতে নৌকা ও ট্রলার চলতে পারে।

ঝালকাঠি সদর উপজেলার নবগ্রাম, কীর্তিপাশা ও গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামে রয়েছে পেয়ারাবাগান। এ পেয়ারাকে স্থানীয় ভাষায় গৈয়া কিংবা সবরি বলা হয়। ডুমুরিয়া, হিমানন্দকাঠি, শতদশকাঠি, কাপড়কাঠি, কাচাবালিয়া, রামপুর, মীরাকাঠি, শাওরাকাঠি, জগদীশপুর, আদমকাঠিসহ আরও কিছু গ্রামে পেয়ারাবাগান রয়েছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এসব গ্রামে গেলে দেখা যাবে পেয়ারার ভারে নুয়ে পড়েছে গাছগুলো। ছোট ছোট খালে ডিঙি নৌকায় পেয়ারা তুলছেন চাষিরা। বড় নৌকা বা ট্রলার নিয়ে এসব খালে ঢোকার সুযোগ নেই। পর্যটকেরা এখানে যত খুশি পেয়ারা খেতে পারবেন বিনা মূল্যে। কিন্তু সঙ্গে করে নিতে হলে কিনে নিতে হবে।

যেভাবে যাবেন
ঢাকার সদরঘাট থেকে ঝালকাঠি ও বরিশালের উদ্দেশে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাত-আটটি বিলাসবহুল লঞ্চ ছেড়ে যায়। অনেকে বরিশাল নেমে লোকাল বাসে করেও ঝালকাঠি যান। সরাসরি বাসে করেও ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে পারেন। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশে বিভিন্ন বাস ছাড়ে। ঝালকাঠিতে পর্যটকদের থাকার জন্য ভালো তেমন কোনো হোটেল নেই। ধানসিঁড়ি রেস্ট হাউস ও হোটেল আরাফাত নামে মধ্যম মানের দুটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। তবে এলজিইডি, জেলা পরিষদ ও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে রেস্ট হাউস রয়েছে। বরিশাল শহরে অ্যাথেনা, এরিনা, হোটেল আলী ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কিছু ভালোমানের হোটেল রয়েছে। সূত্র : প্রথম আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *