Skip to content

বর্ষায় উন্মাতাল আলীকদমের দামতুয়া ঝরনা

বর্ষায় উন্মাতাল কলতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে আলীকদম উপজেলার অসংখ্য ঝরনা ও জলপ্রপাত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- দামতুয়া ঝরনা, ওয়াংপা ঝরনা, রূপমুহুরী ঝরনা ও নুনার ঝিরি ঝরনা। এসব ঝরনার হিমশীতল জলে সিক্ত হতে প্রতিনিয়ত আসছে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা। সম্প্রতি আলীকদম উপজেলার নয় তরুনের অনুসন্ধানে পাওয়া ‘ওয়াংপা ঝরনা’ ও ‘দামতুয়া ঝরনা’কে নিয়ে আজকের আয়োজন। লিখেছেন মমতাজ উদ্দিন আহমদ

আলীকদম উপজেলার সবুজাভ পাহাড়ে লুকিয়ে আছে অসংখ্য গিরিনির্ঝর। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের নজর পড়েছে ‘ওয়াংপা ঝরনা’, ‘দামতুয়া ঝরনা’র ওপর। প্রকৃতির অপরূপ নিদর্শন এ ঝরনার উপচেপড়া যৌবন দেখার মোক্ষম সময় এই শ্রাবণ। বর্ষা শুরু হলে ঝরনাগুলোতে যেন টিকরে পড়ে যৌবন স্রোত। সবুজ পাহাড়ের নিস্তব্ধতায় ঝরনা রাণীরা যেন আঁচল বিছিয়ে দেয় পর্যটকদের অভ্যার্থনা জানাতে! তাই সবুজের টানে প্রাণের উচ্ছ্বাসে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত এসব দেখতে ছুটে আসছেন পর্যটকরা।

গহীন পাহাড়ের বুকে বয়ে চলে দামতুয়া ঝরনা

আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটার পয়েন্টের আদু মুরুং পাড়া থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে দামতুয়া ঝরনার অবস্থান। এই ১৭ কিলোমিটার পথ জিপ অথবা মোটরবাইকে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হয় পায়ে হেঁটে।

‘ওয়াংপা ঝরনা’ এবং ‘দামতুয়া ঝরনা’র আকার ও গঠনশৈলী মনোমুগ্ধকর। পাথুরে মাটির ধাপগুলো বিস্ময়কর। যেন সুদক্ষ রাজমিস্ত্রির নিপুণ হাতে সৃষ্ট কোনো আলপনা। দামতুয়া ঝরনার অনেকগুলো ধাপ প্রমাণ করে এটি প্রাকৃতিকভাবে নির্মিত অসাধারণ এক স্থাপত্যশৈলী।

দামতুয়া ঝরনার দু’দিকের খাড়া পাহাড়ি দেয়াল বেয়ে কলকল, ঝমঝম রবে সুরের অনুরণন তুলে উন্মাতাল স্রোত গড়িয়ে পড়ছে নিচের গভীর জলাশয়ে। পাহাড়ের নিস্তব্ধতা যেন সেখানে ম্লান। উঁচু থেকে পড়া পানির কিছু অংশ আবার জলীয় বাষ্প হয়ে বাতাসে মিশে সেখানে এক ধোঁয়াশাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এ যেন পাহাড়ের গভীরে মেঘমালা!

দামতুয়া ঝরনায় যেতে হলে খাড়া পাহাড়ের কিছুটা পথ ডিঙিয়ে নিচে নামতে হয়। অন্য ধাপে নামার পথ পাথুরে মাটি। সেখানে যেতে তেমন সমস্যা হয় না। ঝরনার নিচে মাঝারী ধরণের জলাশয় আছে। এ জলশায়ে সাঁতার কাটতে ও গোসল করতে বেশ ভালো লাগে।

দামতুয়া ঝরনায় পৌঁছার অন্তত একঘণ্টা আগে দেখা মিলবে ওয়াংপা ঝরনা। মূল ওয়াংপা ঝরনা দেখতে হলে খাড়া পাহাড় বেয়ে নিচে নামতে হবে। চলাচল পথে অসংখ্য ছোট বড় পাথরের ভাজে শীতল জল যেন জানান দেয় ওয়াংপা ঝরনা কেমন হবে। ওপর থেকে ওয়াংপা ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ার দৃশ্য আরো মনোহর লাগে।

প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। রাতে যদিও সেখানে অবস্থান করা নিরাপদ নয়। তবে তাবু খাটিয়ে অবস্থান করলে বুঝা যাবে রাতে চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য ও কলতান।

কিভাবে যাবেন : চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজার থেকে বাসে করে চকরিয়া বাস স্টেশন নামতে হবে। চকরিয়া থেকে অন্য বাসে আলীকদম বাসস্টেশন নামবেন। সেখান থেকে জিপ গাড়ি ভাড়া নেয়া যায়। বাস স্টেশন থেকে অটোরিক্সায় পানবাজার এসে ভাড়ায়চালিত মোটর বাইক নিয়ে আলীকদম-থানচি সড়কের ১৭ কিলোমিটারের আদু মুরুং পাড়ায় নামবেন। সেখান থেকে স্থানীয় মুরুং গাইড নিয়ে উত্তর দিকে এক ঘণ্টা হাঁটলেই পেয়ে যাবেন ওয়াংপা ঝরনার ওপরের অংশ। ওখান থেকে আপনাকে দামতুয়া ঝরনায় যেতে আরো একঘণ্টা হাঁটতে হবে। পথে যেতে যেতে তিনটি স্থানে দেখা মিলবে পাহাড়ের ঢালে সবুজের বুকে ১০-১২টি করে টংঘর। এসব স্থানীয় নৃ-জনগোষ্ঠী মুরুং পাড়া। ভয় নেই। এখানকার মুরুংরা অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ। তারা পর্যটক দেখলে প্রাণখোলা হাসি দেয়। অসংখ্য ঝিরি ও জঙ্গল মাড়িয়ে দেখা মিলবে দামতুয়া ঝরনা!

দামতুয়া ঝরনার বুকে পর্যটকদের উল্লাস

থাকার জায়গা : আলীকদমে গত কয়েকবছর ধরে পর্যটক থাকার স্থানের বড়ই আকাল চলছে। পার্বত্য জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রিত একমাত্র রেস্টহাউজটি বর্তমানে বিজিবির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সুতরাং পর্যটকরা স্থানীয় সেনাবাহিনীকে জানিয়ে পাহাড়ি পরিবেশে মুরুং পাড়ায় থাকতে পারেন।

মনে রাখবেন : চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, পানির বোতলসহ অন্যান্য আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। পাহাড়ের ঝরনাসমুহ দেশের মানুষের সম্পদ। অপচনশীল এসব আবর্জনা ফেললে পরিবেশ নষ্ট হয়। পথে জোঁক থাকতে পারে, তাই সতর্ক থাকবেন। লবণ সঙ্গে রাখলে ভালো হয়। জোঁক কামড়ালে লবণ ছিটিয়ে দিলে কাজ হয়। সিগারেটের তামাকও ব্যবহার করা যায়। ঝরনায় যাওয়ার রাস্তা অতি দুর্গম। যাঁরা পাহাড়ি পরিবেশে হাঁটতে পারেন না তারা সেখানে না গেলেই ভালো। শিশু, বয়স্ক বা অপ্রাপ্তবয়স্কদের সেখানে না নেওয়াই সঙ্গত। হাঁটতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে ফিরে আসা দুরহ। কাজেই পাহাড়ে হাঁটার অভিজ্ঞতা না থাকলে সেখানে না যাওয়ার সিদ্ধান্তই ভালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *