আহমদ গিয়াস কক্সবাজার
কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর পর্যটন কেন্দ্রের পাশে ‘বানরের পাহাড়’ ঘিরে গড়ে উঠতে পারে নতুন একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। বানরের দল ছাড়াও বিরল প্রজাতির নানা ধরনের পাখ-পাখালি, সরীসৃপ ও বৈচিত্র্যময় লতাগুল্ম সমৃদ্ধ এই পাহাড়টির জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের মাধ্যমে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে যুক্ত হতে পারে একটি নতুন সম্ভাবনা। তাই কক্সবাজারের সমুদ্র তীরবর্তী মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন এই পাহাড়টি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানান, মাত্র দুই-তিন দশক আগেও কক্সবাজার বনাঞ্চলের প্রায় সর্বত্র দলে দলে বন্য বানর দেখা যেত। কিন্তু পরবর্তীতে বনাঞ্চল কমে যাওয়ায় আবাস ও খাদ্য সংকটে পড়ে বানরের সংখ্যা কমে গেছে। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে কক্সবাজার শহরতলীর দক্ষিণ কলাতলীর দরিয়ানগরের ‘বানরের পাহাড়ে’ এখনো দেখা মেলে বানরের দলের। কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে দক্ষিণে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ গেলেই রাস্তার পূর্ব পাশে দেখা যায় এই ‘বানরের পাহাড়’। দরিয়ানগর পর্যটন কেন্দ্রের পাশে বড়ছড়া খালের উত্তর পাশ থেকে শুকনাছড়ি পর্যন্ত প্রায় ১০ একর এলাকা জুড়ে পাহাড়টির অবস্থান। এই পাহাড়ে রয়েছে ঘন বাঁশ বন ও সেগুন বাগান ছাড়াও নানা প্রজাতির বৃক্ষ ও গুল্মের সমাহার। পাহাড়ে খাঁজে খাঁজে বাস করে নানা প্রজাতির পাখি। বিভিন্ন গাছেও বাসা বেঁধে থাকে পাখির দল। এরই মাঝে এখানে বাস করে বন্য বানরের কয়েকটি দল। মাঝেমধ্যে দলটি খালের পানিতে নেমে এসে জলকেলিতে মাতে এবং মানুষকে আনন্দ দেয়। তাই মেরিন ড্রাইভ ভ্রমণকারীদের দৃষ্টি কাড়ে এই ‘বানরের পাহাড়’।
কিন্তু সম্প্রতি ভূমিদস্যুদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে পাহাড়টির উপর। কতিপয় ভূমিদস্যু পাহাড়টি জবর দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে ইতিমধ্যে তারা বনাঞ্চল ভাগ করে বাঁশের বেড়াও দিয়েছে। এতে বানরের বাসস্থান বিপন্ন হতে চলেছে। এভাবে দখলবাজি অব্যাহত থাকলে বানরের দল শীঘ্রই হয়তো পাহাড় ছেড়ে পালাবে। স্থানীয় বাসিন্দা ছৈয়দ আলম জানান, বানরের দল প্রায় প্রতিদিন সকালে ও বিকালে পাহাড়ের প্রান্তে নেমে এসে নিজেরা খেলাধুলা করে, গাছের এক ডাল থেকে লাফিয়ে অপর ডালে যায়। আবার খালের পানিতে নেমে এসেও মানুষকে প্রচুর আনন্দ দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মস্তুরা আকতারসহ অনেকের মতে, এই পাহাড়কে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। তবে তার আগে বানরের জীবন ব্যবস্থা যাতে বিঘ্নিত না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। পাহাড়টি পর্যটনের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টোয়াক বাংলাদেশ) এর সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুল আওয়াল সরকার জানান, বনাঞ্চলে আগের তুলনায় বানরের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। তাই ‘বানরের পাহাড়’টি যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য শিগগিরই উদ্যোগ নেয়া হবে। সূত্র : ইত্তেফাক