Skip to content

বিমানের অলৌকিক ঘটনা

এ রিয়াজ
বিমান দুর্ঘটনা মানেই ভয়াবহ এক ঘটনা। আরোহীদের মৃত্যু। আহতদের আহাজারি। অনেক সময় দুর্ঘটনা কবলিত বিমানেটির হদিশও মেলে না। যাত্রীরাও থাকেন নিখোঁজ। কিন্তু বিমান উড্ডয়নের ইতিহাসে এমন ঘটনাও আছে যা অলৌকিক। বিমান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আরোহীরা ছিলেন অক্ষত। এমনই অলৌকিক ঘটনা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

Biman-Accident

কুর্তিস সি-৪৬ কমাণ্ডো, মানিতোবা, কানাডা

১৯৭৯ সালের দিকে চার্চিলে কুর্তিস সি-৪৬ বিমানটি ভূপাতিত হয়। বিমানটি দীর্ঘসময় বরফের তলায় চাপা পড়ে ছিল। তাই স্থানীয়দের পক্ষেও জানা সম্ভব হয়নি তাদের হাতের নাগালেই বরফের তলায় আসলে কী আছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, ১৯৭৯ সালের শেষের দিকে গোটা ইউরোপ জুড়ে ভয়াবহ শৈত্যপ্রবাহ এবং তুষার ঝড় হয়েছিল। সেই ঝড়ে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং রাতারাতি অনেক ঘরবাড়ি বরফে চাপা পড়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেরকমই কোনো এক তুষার ঝড়ের রাতে বিমানটি ভূপাতিত হয় এবং বরফের তলায় ঢাকা পড়ে যায়। ঢাকা পড়ার আগে যাত্রীরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান।

বি-২৪ লিবারেটর, পাপুয়া নিউ গিনি

পাপুয়া নিউ গিনির স্থানীয়দের ভাষায় এ বিমানটির ধ্বংসাবশেষকে ‘জলাভূমির ভূত’ নামে ডাকা হয়। ব্রিটিশ এক আলোকচিত্রী দীর্ঘদিন হারিয়ে যাওয়া বিমান খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। খুঁজে বেড়ানোর অংশ হিসেবে পাপুয়া নিউ গিনির গহীন বনে খুঁজে পান ১৯৪৩ সালে ভূপাতিত এই বিমানটি। দুজন পাইলট নিয়ে বিমানটি একটি গোপন মিশনে যাচ্ছিল। যেহেতু বোমারু বিমান, তাই ধরে নেয়া যায় পাইলটদ্বয়ের সেই গোপন মিশন ছিল কোথাও বোমা ফেলার। তেল শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বিমান ফেলে পাইলট দুজন পালিয়েছিলেন তা পরবর্তী সময়ে জানা যায়। কারণ ২০১৩ সালে যখন ব্রিটিশ ওই আলোকচিত্রী ছবি তোলেন তখনও বিমানটির পেটের মধ্যে বোমা বাঁধা ছিল। দীর্ঘদিন পানির মধ্যে থাকার কারণে বিমানটির ইঞ্জিনের ক্ষতি ছাড়া তেমন কিছু হয়নি।

গ্রুম্মান এইচইউ-১৬ অ্যালবাট্রস, মেক্সিকো

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধক্ষেত্রের কিছু ছবি তুলতে বিমান নিয়ে রওনা হয়েছিলেন একেল নামের এক আলোচিত্রী। আকাশপথে ক্যামেরা দিয়ে কিছু ছবিও তুললেন তিনি। কিন্তু মেক্সিকোর পুয়ের্তো এসকনদিদোর কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ শুরু হওয়া এক ঝড়ের মধ্যে পড়ে যায় বিমানটি। আলোকচিত্রী বিমান রক্ষা করবেন নাকি নিজেকে রক্ষা করবেন এই ভাবতে ভাবতে প্যারাগ্লাইড করে বিমান থেকে লাফ দিয়ে নেমে যান। এতে অবশ্য পায়ের গোড়ালিতে তিনি চোট পান। এরপর আর তিনি বিমানটির কোনো খোঁজ পাননি। ঘটনার চার বছর পর ২০০৬ সালে অনলাইনে আরেক ফটোগ্রাফারের তোলা ছবি দেখে একেল নিজের বিমানটি চিনতে পারেন। এরপর সেখানে গিয়ে দেখতে পান বিমানটির তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি, ইঞ্জিন প্রায় ভালো আছে বললেই চলে।

ফেয়ারচাইল্ড সি-৮২ এ প্যাকেট, আলাস্কা

১৯৬৫ সালের জানুয়ারি মাসে ফেয়ারচাইল্ড সি-৮২ বিমানটি উত্তর মেরুর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় যান্ত্রিক গোলোযোগের মুখোমুখি হয়। বিমানটির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তুন্দ্রা অঞ্চলের বরফাচ্ছন্ন জঙ্গলে ভূপাতিত হয়। একদিকে বিমান দুর্ঘটনার বিপদ, অন্যদিকে বৈরি আবহাওয়া সবকিছু মিলিয়ে বিমানটির বেঁচে যাওয়া আরোহীদের জন্যে সময়টা ছিল ভীষণ ভয়ংকর। তারপরেও বিমানটির আঘাতে যে গাছগুলো ভেঙে গিয়েছিল সেগুলোতে আগুন জ্বালিয়ে মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বিপরীতে লড়াই করতে শুরু করেন আরোহীরা। এ ঘটনার তিনদিন পরে তাদের জ্বালানো আগুনের ধোঁয়া দেখতে পায় আরেকটি বিমান। পরবর্তী সময়ে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রে। আশ্চর্যের বিষয়, অত বড় একটি বিমান দুর্ঘটনায় একজন মানুষও মারা যাননি, এমনকি কেউ একটু আঘাতপ্রাপ্তও হননি। সূত্র : যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *