Skip to content

বিমানের জেট ইঞ্জিন পরীক্ষা করা হয় যেভাবে

জার্মান লুফৎহানসার ইঞ্জিনিয়ার ও মেকানিকরা অনেক সময় শুধু নিজের চোখ আর অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে জেট ইঞ্জিনগুলোকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন, কোথাও কোনো ফাটল আছে কিনা৷

আকাশে বিমান চলাচলের কোনো অন্ত নেই৷ শুধু জার্মানিতেই প্রতিবছর ২০ লাখ বার হয় কোনো বিমান আকাশে উঠছে, অথবা আকাশ থেকে নামছে৷ বিমানগুলোর জন্যও এটা একটানা চাপ৷ বিমানের কোথাও কোনো কিছু খারাপ হয়েছে কিনা, তা জানার জন্য নিয়মিত চেক করা প্রয়োজন৷

হামবুর্গে লুফৎহানসার প্রযুক্তি বিভাগ, মানে ওয়ার্কশপ, অর্থাৎ কর্মশালা৷ ইঞ্জিনিয়ার আর মেকানিকরা এখানে জেট বিমানের ইঞ্জিনগুলো খুলে দেখেন, ভেতরে সব ঠিক আছে কিনা৷ ইঞ্জিনের অনেক ভেতরে কমবাশন চেম্বার; এটা হলো বিমানের সেই অংশ, ওড়ার সময় যার ওপর সবচেয়ে বেশি চাপ পড়ে৷ এই ‘দহনকক্ষ’-কে ২,০০০ সেন্টিগ্রেডের বেশি তাপমাত্রা সহ্য করতে হয়, তাও আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে৷ এখানে কোনো কিছু খারাপ হলে, গোটা ইঞ্জিনটাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে৷

ওদিকে এই বহুমূল্য অংশগুলোকে যথেচ্ছ বদলে দেওয়া যায় না৷ কাজেই মেকানিকরা ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করে নিলে অনেক সাশ্রয় হয়৷ এ কারণে মেকানিকরা ইঞ্জিনের প্রতিটি অংশ খুঁটিয়ে দেখেন৷ দেখেন কোথাও কিছু বিকল হয়েছে কিনা৷ তাঁদের অভিজ্ঞতার উপর বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তা নির্ভর করবে৷

ড. রাইনহোল্ড লেন্ডার বলেন, ‘‘ধাতুর উপর একটা চুলচেরা ফাটল বা ফাটা আবিষ্কার করায় মানুষের বদলে যন্ত্র ব্যবহার করার অনেক চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু ওটা একটা ফাটল, নাকি একটা স্ক্র্যাচ বা আঁচড়, নাকি ওপরের কোনো অমসৃণ অংশ, একটা যন্ত্র কিংবা একটা কম্পিউটার প্রোগ্রামের পক্ষে তা নির্ধারণ করা অত্যন্ত শক্ত৷ মানুষ আরো অনেক দক্ষভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, ওটা একটা ফাটল কিনা৷’’

প্রায় সম্পূর্ণ অন্ধকারে ধাতুর ওপর সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতম ফাটলের খোঁজ চলে৷ সেজন্য প্রতিটি অংশের ওপর ফ্লুওরেসেন্ট – মানে আলো বিকীরণকারী তেল স্প্রে করা হয়৷ এই তেল এতই পাতলা যে, তা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম ফাটলেও ঢুকে পড়ে৷ পরে তেলটা ধুয়ে ফেললেও, ফাটলের মধ্যে তার রেশ থেকে যায়, ফলে ফাটলটা দেখা যায়৷ইঞ্জিনিয়ার ও মেকানিকদের ভালো হাতের কাজ জানা থাকা চাই৷ একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে তাদের শেখানো হয়েছে যে, কাজের চাপ আর ক্লান্তির ফলে তাদের কাজের মান কমে যেতে পারে৷

আবার শার্লক হোল্মস

তারপর শুরু হয় শার্লক হোল্মসের কাজ৷ অতিবেগুনি রশ্মির আলোয় কমবাশন চেম্বারের উপরিভাগটা পরীক্ষা করে দেখা হয়, কোথাও ফ্লুওরেসেন্ট তেলের কোনো চিহ্ন আছে কিনা৷ মিলিমিটার মিলিমিটার করে খুঁটিয়ে দেখেন, ভরসা শুধু নিজের চোখ আর বহু বছরের অভিজ্ঞতা৷ এখানে যারা কাজ করেন, তাদের ওপর অনেক দায়িত্ব৷

ড. রাইনহোল্ড লেন্ডার জানালেন, ‘‘কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে, বা কোনো বিমানের ইঞ্জিনে কিছু খারাপ হলে, আমরা সেটা বোধ করি বৈকি৷ সব সহকর্মীই ভাবেন, ব্যাপারটা আমার কোনো ভুলের জন্য ঘটেনি তো? সেক্ষেত্রে সবাই যার যার দায়িত্বের কথা খুব ভালোভাবেই জানেন বলে আমার ধারণা৷’’

কোনো একটা সন্দেহজনক অংশ খুঁজে পেলেই পরীক্ষক সেই অংশটিকে একটা ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে দেখেন৷ তার পরেও যদি রঙের হদিস থেকে যায়, তাহলে তিনি একটি ফাটল খুঁজে পেয়েছেন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে৷ সাথে সাথে লাল রঙ দিয়ে ফাটলটিকে চিহ্নিত করেন৷ এ কাজের জন্য সর্বোচ্চ মনঃসংযোগ দরকার৷ প্রতি ৫০ মিনিট অন্তর কর্মীদের বিরতি থাকে৷ সৌজন্যে : ডয়েচেভেলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *