বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করেন অসংখ্য বাংলাদেশি। তাদের অনেকেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এসব রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশি খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। কোনো কোনো রেস্টুরেন্ট নামে ‘ইন্ডিয়ান’ হলেও এগুলোর বেশির ভাগেরই মালিক বাংলাদেশি। বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট মালিকরা সেখানে অত্যন্ত সফল। এই দৃশ্য যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে সুইডেন, দুবাই সবখানেই এক। সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টের জয়জয়কার। এ নিয়ে লিখেছেন- তানভীর আহমেদ
এশিয়ান খাবারের স্বাদে কই রেস্টুরেন্ট
কই রেস্টুরেন্ট। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে আবুধাবি পর্যন্ত এই রেস্টুরেন্টের সুনাম ছড়িয়ে আছে। মূলত জাপানিজ সুশি আপ্যায়নের জন্য প্রসিদ্ধ হলেও এ রেস্টুরেন্টে মিলবে এশিয়ান মেন্যু। আন্তর্জাতিক মানের এ রেস্টুরেন্টে মাস্টারমাইন্ড বলে খ্যাতি রয়েছে এক বাংলাদেশির। তার নাম নিক হক। একজন সফল বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তুলে নিয়েছেন অন্য উচ্চতায়। কই রেস্টুরেন্টে এশিয়ান খাবারের দেখা মেলার পেছনে তার অবদান আলোচিত। এ রেস্টুরেন্টের বিখ্যাত খাবারের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসবে ‘কই ক্রিসপি রাইস’ এবং ‘স্পাইসি টুনা’। মাছ ও ভাতের এই সম্মিলন বাঙালিয়ানার কথাই প্রথমে মনে করিয়ে দেয়। খাবারে এশিয়ান স্বাদই এ রেস্টুরেন্টের আলাদা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখানে মাছ-ভাত খেতে ছুটে আসেন বিভিন্ন দেশের মানুষ। তবে এই রেস্টুরেন্ট ভিন্ন বৈচিত্রপূর্ণ স্বাদের খাবারে লম্বা তালিকা নিয়ে বসে আছে। অতিথিদের পছন্দের খাবার এখানে পাওয়া যাবে না- এমনটি হতে পারে না। ভাজা মাছ ছাড়াও এখানে আলুপুরি, টোবান ইয়াকি, ইচিমির সঙ্গে চিলিয়ান সি বেস ও কই রেস্টুরেন্টের নিজস্ব সেফের অনবদ্য সুশি তো রয়েছেই। খাবারে এ বৈচিত্র্যের কারণে কই রেস্টুরেন্টের খ্যাতি লস অ্যাঞ্জেলেস পেরিয়ে পৌঁছে গেছে লাস ভেগাস, নিউইয়র্ক, ব্যাংকক ও আবুধাবি পর্যন্ত। এই রেস্টুরেন্টটি শুধু স্বাস্থ্যসম্মত এশিয়ান খাবার পরিবেশনেই অতিথিদের মন জয় করেনি, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রেস্টুরেন্টের দৃষ্টিনন্দন ইন্টেরিয়র ও ছিমছাম খাবার পরিবেশ। রেস্টুরেন্টের আসবাব ও পরিচ্ছেদের আভিজাত্যের ছোঁয়া রয়েছে। যে ইন্টেরিয়র ডিজাইন অনুযায়ী এই রেস্টুরেন্ট সাজানো হয়েছে তাকে বলা হয় ‘জেন ইন্সপায়ার্ড’। এখানের ডাইনিং পরিবেশ বিশেষভাবে সমাদৃত। চাইলে প্রিয়জনকে নিয়ে ‘ক্যান্ডেল লাইট ডিনার’ সারতে পারবেন। হলিউডের যশ-খ্যাতির সঙ্গে মিল রেখে এখানকার পরিবেশ উন্নত ও পরিমার্জিত রাখা হয়েছে। কই রেস্টুরেন্ট মুখর থাকে সমাজের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনদের পদচারণায়। কই রেস্টুরেন্টের আজকের এ অবস্থান নিক হকের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন বলা চলে। খাবারের উঁচু মান, আরামদায়ক খাবার পরিবেশ ও দৃষ্টিনন্দন ইন্টেরিয়রের সম্মিলন খেতে আসা অতিথিদের মুগ্ধ করে। যে কারণে কই রেস্টুরেন্ট এখন অতিথিদের কাছে সমাদৃত। সাধারণ ভোজনরসিকদের মন জয় করার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কই রেস্টুরেন্টের রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন ডাইনিং পরিবেশনের অভিজ্ঞতা। মূল রেস্টুরেন্টটি ছাড়াও রেস্টুরেন্টের লাউঞ্জ অঞ্চলও উল্লেখযোগ্য। এখানে খাবার শেষে সময় কাটানোর পাশাপাশি দরকারি কাজও শেষ করে নিতে পারেন। এসব কারণে কই রেস্টুরেন্ট বিভিন্ন সময় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছে।
নিউইয়র্কে নামে ইন্ডিয়ান হলেও আসলে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি প্রবাসীদের রসনাবিলাস মেটাতে একের পর এক গড়ে উঠেছে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট। নিউইয়র্ক, লাস ভেগাস কোথায় নেই বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট। আর এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীদের কারণে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় বাংলাদেশিদের সাফল্য যুক্তরাষ্ট্রে ফলাও করে প্রচার করা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় অনুপ্রেরণীয় এই বাংলাদেশিদের অনেকেই রেস্টুরেন্ট ব্যবসার মাধ্যমে বাংলাদেশি খাবারকে পরিচয় করে দিয়েছেন বিশ্ববাসীর কাছে। বাংলাদেশি খাবারের স্বাদে তারা বিমোহিত হয়েছেন। নিউইয়র্কে উল্লেখ সংখ্যক বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে জেনে রাখা ভালো, এই রেস্টুরেন্টের অনেকগুলো ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট বলে পরিচিত হলেও এখানে বাংলাদেশি খাবার মেলে। নিউইয়র্কের গ্রেট ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট, ইন্ডিয়ান স্পাইস হাউস, তাজমহল, গান্ধী, কোহিনূর সবকটা রেস্টুরেন্টেই বাংলাদেশি খাবার পাওয়া যায়। এ ছাড়াও এ রেস্টুরেন্টগুলোর মালিকও বাংলাদেশি। ইন্ডিয়ান খাবার বলে পরিচিতি লাভ করায় রেস্টুরেন্টগুলোর নামে সেটা রয়ে গেছে। তবে এখন চিত্র পাল্টিয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের চাহিদা মেটাতে রেস্টুরেরেন্টের সংখ্যা বাড়ায় বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টের খোঁজ মিলবে অনেক। এ রেস্টুরেন্টগুলোতে চিকেন, তন্দুরি থেকে শুরু করে সিজনড চিজ সবই পাওয়া যায়। বাংলাদেশি মালিকই শুধু নন, সেফ, ওয়েটার, বাসবয় সবাই বাংলাদেশি। এখানে রয়েছে রয়েল বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট, ঢাকা গার্ডেন, নিরব, সাগরসহ বহু বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট। এ রেস্টুরেন্টগুলোতে ভারতীয় খাবারের পাশাপাশি বাংলাদেশি খাবারের বিভিন্ন আইটেম পাওয়া যায়।
কাতারে তিন তারকা বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট
কাতারের রাজধানী দোহা। এখানে বাংলাদেশিদের পদচারণা কম নয়। অনেকেই পেশাগত কারণে কাতারে বসবাস করেন। কাতারে ভালো মানের বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টের সংখ্যা খুব বেশি নয়। বেশির ভাগ রেস্টুরেন্টই মাঝারি মানের। তবে বাংলাদেশি খাবারের চাহিদার কারণে সেখানে ভালো মানের বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য দেশীয় খাবারের সমারোহ। দোহা শহরের প্রাণকেন্দ্রে আধুনিক সুবিধাসমৃদ্ধ তিন তারকা মানের ভূঁইয়া রেস্টুরেন্ট রয়েছে। অত্যাধুনিক সাজে সজ্জিত এই রেস্টুরেন্টটি।
বাংলাদেশি হরেক রকমের সুস্বাদু মিষ্টি ও খাবার প্রস্তুত হয়ে থাকে এখানে। কাতার প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য দেশীয় খাবারের আইটেম এখানে মিলবে। ঘরোয়া পরিবেশ অতিথিকে আকৃষ্ট করবে। এ ছাড়া কাতারে উল্লেখযোগ্য আরও কয়েকটি ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশি মালিকানায় রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। অনেকে ওয়েলফেয়ার রেস্টুরেন্টের কথা বলে থাকেন। বাংলাদেশি খাবারের স্বাদ পেতে সেখানেও ছুটে যান অনেকে। রয়েছে আল ইস্তেকমা ক্যাফেটেরিয়া। বাংলাদেশি স্টাফ ও রাঁধুনিদের হাতে কাতারের এ রকম বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলো প্রবাসীদের মন ভরায় দেশি খাবারে।
মেক্সিকো-সুইডেন সবখানেই জনপ্রিয়
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। এই রেস্টুরেন্টগুলোতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশি মালিকানায় গড়ে ওঠা এ রেস্টুরেন্টগুলো শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের মন জয় করেনি বরং বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছে বাংলাদেশি খাবারের স্বাদ। বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলোর দিকে তাই বাইরের দেশের মানুষের আগ্রহ গড়ে উঠেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচিয়নে তেমনই একটি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ইনচিয়নে প্রতিষ্ঠিত হোটেল ব্যবসায়ীর একজন বাংলাদেশি। ইনচিয়নের আনসান শহরের প্রাণকেন্দ্রে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘সুইট হাউস অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। শহরে এটিই একমাত্র বাঙালি রেস্টুরেন্ট। এখানে তাদের হোটেল যেমন গোটা বাঙালি সমাজে ব্যাপক পরিচিত, তেমনি খাবারও বেশ প্রশংসিত। বাংলাদেশের এমন কিছু নেই যা তারা রান্না করেন না। শিঙ্গাড়া, পুরি, চা, পোলাও, শাকসবজি, খিচুড়ি, মাছ, মাংস, রুটি, ভাজি এ রকম প্রায় সব খাবারই। তৈরি করে থাকেন মিষ্টিও। খাবারের মান স্থানীয়দের মতোই। ছয়টি মিষ্টির একটি প্যাকেট দক্ষিণ কোরিয়ার টাকায় চার হাজার টাকা।
বাংলাদেশের নাগরিকরা সময় পেলে এখানে খেতে আসেন। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই কমবেশি বাংলাদেশির আগমন ঘটে তার রেস্টুরেন্টে। তবে সবচেয়ে বেশি এসে থাকেন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। খাবারের পাশাপাশি চলে আড্ডাও। তার হোটেলে বাঙালি খাবারের স্বাদ নিতে রাজধানী সিউল থেকেও অনেকে চলে আসেন এখানে খেতে। এ ছাড়া জন্মদিনসহ আরও নানা ঘরোয়া অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এ ছাড়া রেস্টুরেন্ট রয়েছে মেক্সিকােতে। ১২ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত গোল্ড-সিলভার-পেট্রোলিয়াম-গ্যাস সমৃদ্ধ দেশ মেক্সিকোতে বাংলাদেশিদের বসবাস। টাঙ্গাইলের আজাদ হোসাইন ও আতিক হোসাইন সহোদর আজ মেক্সিকো সিটিতে প্রতিষ্ঠিতি বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। ‘তাজমহল’ ও ‘কাজা এলেফান্তে’ নামে দুটি রেস্টুরেন্টের মালিক তারা। তবে সুইডেনে বাংলাদেশি খাবারের জনপ্রিয়তার পেছনে নাহিদ হাসান নামে একজন উদ্যোক্তার কথা উল্লেখ করা যায়। ২০০০ সালে তিনি স্টকহোমে চালু করেন তার নিজের প্রথম রেস্টুরেন্ট ‘শান্তি ক্লাসিক’। এরপর তার রেস্টুরেন্টে বেগুন ভাজা, ডাল, মাছ-পোলাও এবং শর্ষে-ইলিশের মতো মনোমুঙ্কর পদগুলো যোগ হয়।
বরিশাল ক্যাফে থেকে রাজধানী হোটেল
থাইল্যান্ডে বরিশাল ক্যাফে দিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেছিলেন কাজী আনোয়ারুল কাদের। হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় তার সাফল্য গল্পের মতো শোনায়। ৩৫ বছর আগে ঢাকা ছেড়েছিলেন। ১৯৮১ সালে এক প্রবাসীর সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যাংলাকের সিলং রোডে ‘বরিশাল ক্যাফে’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট দেন। সেটি ছিল থাইল্যান্ডে বাংলাদেশিদের প্রথম রেস্টুরেন্ট। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট বলতে এই বরিশাল ক্যাফে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরে ২০০২ সালে চলে যান চীনের সাংহাই। ফের তিন বছর পর ফেরেন ব্যাংকক।
সেখানে খুলেন রাজধানী রেস্টুরেন্ট। ব্যাংককে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলোর মধ্যে এটির সুনাম রয়েছে। তবে তার মতো অনেকেই এখন বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট খুলে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন। থাইল্যান্ড থেকে শুরু করে ব্যাংকক সব খানেই বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টগুলোতে ভিড় জমায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি খাবারের স্বাদ ও পরিবেশন থেকে অনেক ভিনদেশিও এখন আগ্রহী হয়েছেন বাংলাদেশি খাবারের দিকে।
বাংলাদেশি ওয়েটারবয়ের প্রশংসায় মাহাথিরকন্যা
মালয়েশিয়ার রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশি ছাত্রের সততার গল্প মুখে মুখে ফিরেছে। কারণটা আর কিছু নয়, সেই বাংলাদেশির সততার প্রশংসা করেছিলেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খোদ মাহাথির মোহাম্মদের মেয়ে। মালয়েশিয়ার নাগরিকদের কাছে বাংলাদেশিদের বেশ সুনাম রয়েছে। বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক মিডিয়ার কল্যাণে জানা যায় ওই ছাত্রের নাম মনির হোসেন। তিনি মাহাথিরকন্যার লক্ষাধিক টাকার বেশি জিনিস কুড়িয়ে পেয়ে তা ফেরত দিয়ে দৃষ্টান্ত গড়েন।
২০১৩ সালে মালয়েশিয়ায় পড়তে যান মনির। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় আর দশটা বাংলাদেশির মতো তাকেও কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালাতে হয়। তাই মনির পার্টটাইম কাজ করেন বুকিত বিনতানের লয়াত প্লাজায় রেস্টুরেন্ট কাবাব তুর্কিতে। একদিন কাজ শেষে মনির দেখেন কারও একটি ব্যাগ পড়ে আছে। ব্যাগ খুলে ভিতরে পান মালয়েশিয়ার মুদ্রায় ৩ হাজার রিঙ্গিত মূল্যের একটি আইপ্যাড, একই মূল্যের একটি আই মোবাইল ফোন, ২টি ব্যাংক কার্ড ও কিছু কাগজপত্র। ব্যাগে তিনি একটি নেইম কার্ডও পান, যাতে লেখা মারিয়ানা মাহাথির।
বাংলাদেশি ছাত্র মনির কার্ড থেকে নম্বর নিয়ে ফোন দেন মারিয়ানাকে। অপর প্রান্ত থেকে ফোন রিসিভ করেন মারিয়ানার নিরাপত্তাকর্মী। মনির তাকে বিষয়টি জানালে তারা চলে আসেন রেস্টুরেন্টে। মনির এ সময় মারিয়ানার পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হলেও উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া ব্যাগসহ দামি জিনিসপত্র ফেরত দিতে অনীহা জানান। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা মারিয়ানার সঙ্গে কথা বলে ও তার ছবি দেখিয়ে ব্যাগ ফেরত নেন। এ সময় তারা মনিরকে আর্থিক পুরস্কার দিতে চাইলেও মনির তা নিতে অস্বীকার করেন। পরে তারা মনিরের ছবি তুলে নিয়ে চলে যান। এরপর মারিয়ানা তার ফেসবুক ওয়ালে মনিরের ছবি আপলোড করে তার সততার বিবরণসহ স্ট্যাটাস দেন। তিনি লেখেন, মনির একজন সৎ ছেলে। শত পরিশ্রম করেও তার কোনো লোভ জাগেনি। সত্যি বাংলাদেশিরা অনেক সুন্দর।
জনপ্রিয় রেড ফোর্ট
লন্ডনের সোহো। ডিন স্ট্রিট ধরে এগিয়ে গেলে চোখে পড়বে রেড ফোর্ট রেস্টুরেন্টটি। রেস্টুরেন্টের বাইরের অবয়ব দেখে সহজেই অনুমান করা যায় এটি প্রসিদ্ধ। রেস্টুরেন্ট হিসেবে রেড ফোর্ট একটি ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছে। আর সেটা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনার জন্য।
এ বছর রেড ফোর্টের সাফল্যের ৩০ বছর উদযাপিত হলো। এই রেস্টুরেন্টর প্রধান সেফ আজাদুর রহমান। তার হাত ধরেই ব্রিটেনে এসেছে মোগল স্বাদের খাবার। আজাদুর রহমানের জন্ম বাংলাদেশের সিলেটে। রেড ফোর্টের প্রধান সাতজন সেফের মধ্যে তিনি একজন, যিনি এখানে ২০ বছর ধরে রয়েছেন।
রেড ফোর্টের নিজস্ব ঘরানার খাবার বলতে রয়েছে মোগল রাজাদের বিশিষ্ট মেন্যু। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্রিটিশ খাবারের উপাদান ও রান্নার বৈশিষ্ট্য। এর সঙ্গে সহজেই পাওয়া যায় সুস্বাদু ওয়াইন। রয়েছে ঐতিহ্যবাহী তন্দুরি, ঘরে বানানো সস, চাটনি, টাটকা রুটি। এই খাবারের মেন্যুর দিকে তাকালে একটি জিনিস বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়, খাবারে এশিয়ান বিশেষ করে ভারতীয় ও বাংলাদেশি মসলার ব্যবহার রয়েছে। এর কারণ আর কিছুই নয়। রেড ফোর্ট ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট পরিচয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার অতিথিদের জানা হয়ে যায় এখানে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টের মতোই মসলাদার খাবার পাওয়া যাবে।
রেড ফোর্ট ১৯৮৩ সালে ব্রিটেনে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ব্রিটেনের প্রথম ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট বলেও অনেকের কাছে পরিচিতি লাভ করে। এখন পর্যন্ত আভিজাত্য ও খাবারের মানের প্রশ্নে সবাইকে ছাড়িয়ে যায় এটি।
রেড ফোর্ট সম্ভ্রান্ত পরিবারের ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও সেলিব্রেটিদের আনাগোনায় ব্যস্ত থাকে। রেস্টুরেন্টটি তার মান বজায় রাখার কারণে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। লন্ডনের টাইম আউট ম্যাগাজিন এটিকে সেরা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত করে। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন