তানবীর আহমেদ
সিনেমাকে বলা হয় পৃথিবীর মানুষের ‘আন্তর্জাতিক ভাষা’। সিনেমা একটি সমাজ ও সময়কে ধরে রাখে। মানুষকে ভাবতে শেখায়। মানুষের অনুভূতির সাতরং নিয়ে খেলা করাই সিনেমার লক্ষ্য। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ভাষাভাষী সিনেমা তৈরি হয়। এগুলোর কোনো কোনোটির গল্প, নির্মাণশৈলী ও ব্যবসায়িক সাফল্য ছাড়াও ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। বিশ্বজুড়ে তেমনই আলোচিত কয়েকটি সিনেমা এখানে তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, পাম ডি অর বিজয়ী সিনেমা ছাড়াও আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট, ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট, সাইট অ্যান্ড সাউন্ড পোলস, ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেজ, অডিয়ান্স পোল, মেটাক্রিটিক, রটেন টমেটোস, টাইম ম্যাগাজিন, হাফিংটন পোস্টের মতো স্বীকৃত ও সেরা সিনেমার তালিকা অনুসরণ করা হয়েছে। স্বল্প পরিসরের এই আয়োজনে উল্লেখযোগ্য বহু সিনেমার নাম তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।
এএফআই-এর দশে দশ
আমেরিকার ফিল্ম ইনস্টিটিউট বা এএফআই বিশ্বের সেরা সিনেমাগুলোকে একত্রীক করার একটি প্রয়াস করেছে। এতে উঠে এসেছে আমেরিকান সেরা সিনেমাগুলো। আমেরিকান সিনেমার ১০০ বছরে তারা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১০০টি সিনেমা মনোনীত করে। সেখানে স্পোর্টস, রোমান্টিক কমেডি, ওয়েস্টার্ন থেকে শুরু করে ফ্যান্টাসির মতো উল্লেখযোগ্য ধরন রয়েছে। দশটি ক্যাটাগরিতে শীর্ষে থাকা দশটি সিনেমা হলো- স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডর্ফস (অ্যানিমেটেড), সিটি লাইটস (রোমান্টিক কমেডি), দ্য সার্চারস ( ওয়েস্টার্ন), র্যাগিং বুল (স্পোর্টস), ভার্টিগো (মিস্ট্রি), দ্য উইজার্ড অব অজ (ফ্যান্টাসি), ২০০১ : অ্যা স্পেস ওডিসি (সায়েন্স ফিকশন), দ্য গডফাদার (গ্যাংস্টার মুভি), টু কিল অ্যা মকিংবার্ড (কোর্টরুম ড্রামা), লরেন্স অব অ্যারাবিয়া (এপিক)। এখানে জেনে রাখা ভালো, রোমান্টিক মুভির তালিকার এক নম্বরের জন্য সিটি লাইটসকে লড়তে হয়েছিল ‘কাসাব্লাঙ্কা’র সঙ্গে। এই তালিকায় প্রতিটি সিনেমা ধরনের শীর্ষ দশ তালিকাটিও দর্শকপ্রিয়। রোমান্টিক কমেডি সিনেমা দেখতে যারা পছন্দ করেন তারা নিশ্চয়ই ‘কাসাব্লাঙ্কা’ উপভোগ করবেন যে কোনো সময়। এখানে এই তালিকার দুটি সিনেমার কিছু তথ্য দেওয়া হলো-
কাসাব্লাঙ্কা : ১৯৪২ সালের এই মুভিটি সেরা মুভি, সেরা ডিরেক্টর এবং সেরা কাহিনী ও চিত্রনাট্যের অস্কার পুরস্কার জিতে নেয়। এর বাইরে আরও আটটি ক্যাটাগরিতে অস্কার নমিনেশন পেয়েছিল মুভিটি। আফ্রিকার দেশ মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা শহরকে কেন্দ্র করে মুভিটির কাহিনী গড়ে উঠেছে। সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী এতটাই আলোচিত হয় যে পরবর্তীতে অসংখ্য মুভি নির্মিত হয়েছে কাসাব্লাঙ্কার অনুকরণে। আজও মরক্কোর শহরটির পরিচিতি আছে মুভিটির কারণে। হাঙ্গেরিয়ান পরিচালক মিশেল ক্রুজের এই সিনেমাটির মূল কাহিনী নেওয়া হয়েছে ‘এভরিবডি কামস টু রিক’স’ নাটক থেকে।
লরেন্স অব অ্যারাবিয়া : পরিচালক ডেভিড লিনের অনবদ্য নির্মাণ ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’। অনেক সিনেমাবোদ্ধা এই সিনেমাটিকে ইতিহাসের মূল্যবান সম্পদ বলে অভিহিত করেছেন। ১৯৬২ সালে মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটির দৈর্ঘ্য সাড়ে চার ঘণ্টারও বেশি। এই দীর্ঘসময় দর্শক ধরে রাখার কঠিন চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়ে সফল হয়েছিলেন লিন। মেটাক্রিটিকে ১০০% ও ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেসে ৮.৪ পয়েন্ট নিয়ে এটি দর্শকপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়। ৩৫তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা সিনেমাসহ সাতটি পুরস্কার ছাড়াও এটি পেয়েছে ১৬তম ব্রিটিস একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও ২০তম গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড। সিনেমাটি সে সময়ই ৭০ মিলিয়ন ডলার আয় করে বং অফিস কাঁপিয়ে দেয়।
‘মুভি অব দ্য আর্থ’ : বিশ্বের সর্বত্র প্রশংসিত সিনেমাকে মুভি অব দ্য আর্থ বলেই সম্বোধন করেন সিনেমাবোদ্ধারা। এই তালিকাটিও বেশ লম্বা। সেই তালিকার দুটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা-
সিটিজেন কেইন : অরসন ওয়েলসের সেরা সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হয় সিটিজেন কেইন। এটি মুক্তি পায় ১৯৪১ সালে। সাইট অ্যান্ড সাউন্ড সাময়িকী চলচ্চিত্র সমালোচকদের ভোটের মাধ্যমে সেরা চলচ্চিত্র নির্বাচন করে। গত পাঁচ বারই এই ভোটে সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে মনোনীত হয়েছে সিটিজেন কেইন। সিনেমাটির গল্প ডালপালা মেলেছে চার্লস ফস্টার কেইন নামক একটি চরিত্রের জীবনকে কেন্দ্র করে। গল্পে দেখা যায় মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে কেইন ‘রোজবাড’ শব্দটি উচ্চারণ করে। একজন সাংবাদিক এই শব্দ উচ্চারণের কারণ খুঁজে বের করার গবেষণার মাধ্যমেই সিনেমাটি এগিয়ে যায়। মজার ব্যাপার হলো সিনেমাটি মুক্তির পর মোটেই আলোড়ন তুলতে পারেনি। অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচকরা এটিকে প্রশংসায় ভাসান। পরবর্তীতে ১৯৫৬ সালে এটি আবার মুক্তি পায়। বেশিরভাগ চলচ্চিত্র সমালোচক এটিকে এখন পর্যন্ত নির্মিত সেরা সিনেমা মনে করেন।
দ্য উইজার্ড অব অজ : মিউজিক্যাল ফ্যান্টাসি সিনেমার মাইলফলক হিসেবে দেখা হয় দ্য উইজার্ড অব অজকে। এটি মুক্তি পায় ১৯৩৯ সালে। ভিক্টর ফ্লেমিংয়ের এই সিনেমার ব্যবসায়িক সাফল্য সিনেমা জগতকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। সিটিজেন কেইনের মতো এটিও মুক্তির পর ভালো আয় না করলেও সিনেমাবোদ্ধাদের মুগ্ধ করে। কিন্তু পরবর্তীতে দৃশ্যপট পাল্টায়। ২৭ লাখ ৭৭ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই সিনেমাটি এ পর্যন্ত আয় করেছে প্রায় ২৫ কোটি মার্কিন ডলার। এই আর্থিক সাফল্য বিশ্বব্যাপী সিনেমায় অর্থলগ্নিকারীদের আগ্রহী করে। যার সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব অনন্য।
বাংলাদেশে সাড়া জাগানো সিনেমা : আলাউদ্দীন মাজিদ
নির্মাণ আঙ্গিক ও আলোচনার দিক দিয়ে ঢাকার অনেক ছবি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য অবস্থান করে নিয়েছে। এসব চলচ্চিত্রের মধ্যে কয়েকটি হলো- ১৯৭২ সালে মুক্তি পাওয়া চাষী নজরুলের ‘ওরা এগারজন’, আলমগীর কবিরের ধীরে বহে মেঘনা, জহিরুল হকের রংবাজ, সুভাষ দত্তের বলাকা মন, ঋতি্বক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ বাংলা চলচ্চিত্রকে বিশেষ মানে উন্নীত করে। এই সুস্থ ও সৃজনশীল ধারায় ১৯৭৪ সালে নির্মিত হয় নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’। ১৯৭৫ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘লাঠিয়াল’, খান আতার ‘সুজন সখী’ এই ধারারই প্রবাহ। ১৯৭৬ সালে ছয়টি চলচ্চিত্র বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ধারণাকেই পাল্টে দেয়। এগুলো হলো : রাজেন তরফদারের ‘পালঙ্ক’, হারুনর রশীদের ‘মেঘের অনেক রঙ’, আলমগীর কবিরের ‘সূর্য কন্যা’, কবীর আনোয়ারের ‘সুপ্রভাত’, আবদুস সামাদের ‘সূর্যগ্রহণ’ এবং আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’। ১৯৭৭ সালে আলমগীর কবিরের ‘সীমানা পেরিয়ে’, সুভাষ দত্তের ‘বসুন্ধরা’ পরিচ্ছন্নতা ও সুস্থতার দাবিদার। ১৯৭৮ সালে আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘সারেং বৌ’ শিল্পসফল চলচ্চিত্র হিসেবে নন্দিত। স্বাধীন বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয় ১৯৭৯ সালে। মসিউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলীর যৌথ নির্মাণ ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’। এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচয় করিয়ে দেয়। আলমগীর কবিরের ‘রূপালী সৈকতে’ও এই সময়ের উৎকৃষ্ট চলচ্চিত্র। সত্তর দশক ও আশির শুরুর সময়ে নির্মিত চলচ্চিত্র জহিরুল হকের রংবাজ (১৯৭৬), প্রাণসজনী (১৯৮২), রুহুল আমিনের বেইমান (১৯৭৪), অশোক ঘোষের নাচের পুতুল (১৯৭১), বেবী ইসলামের চরিত্রহীন (১৯৭৫), নজরুল ইসলামের স্বরলিপি (১৯৭১), আবদুল লতিফ বাচ্চুুর যাদুর বাঁশি (১৯৭৭), আবদুল্লাহ আল মামুনের সখী তুমি কার (১৯৮০), এখনই সময় (১৯৮০), আজিজুর রহমানের ‘ছুটির ঘণ্টা’ (১৯৮০) দর্শকপ্রিয়তা লাভ করতে সমর্থ হয়। আশির দশকের শেষার্ধে সুভাষ দত্তের ফুলশয্যা (১৯৮৬), আলমগীর কবিরের পরিণীতা (১৯৮৬), চাষী নজরুল ইসলামের শুভদা, বুলবুল আহমেদের রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত (১৯৮৭), নব্বই দশকের প্রথমার্ধে সৈয়দ সালাহ্উদ্দিন জাকীর আয়না বিবির পালা (১৯৯১), এহতেশামের চাঁদনী (১৯৯১) প্রভৃতি চলচ্চিত্র আলোচিত হয়েছে।
দুই হাজার সালের শুরুতে চাষী নজরুল ইসলামের হাসন রাজা, তানভীর মোকাম্মেলের লালন (২০০৪), মোরশেদুল ইসলামের দুখাই, লালসালু, আখতারুজ্জামানের পোকামাকড়ের ঘরবসতি, তারেক মাসুদের মাটির ময়না (২০০২), কাজী মোরশেদের ঘানি (২০০৮) এর মতো উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সামাজিক বিষয়কে উপজীব্য করে নির্মিত এই চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণ-কুশলতায় বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। ২০০৩ সালে তারেক মাসুদ পরিচালিত ‘মাটির ময়না’ ছবিটি সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কারে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য পেশ করা হয়। চূড়ান্ত পুরস্কারের জন্য মনোনীত না হলেও এটি বেশ গুরুত্ববহ ছিল। কারণ এটিই প্রথম বাংলাদেশি ছবি যা অস্কারে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রেরণ করা হয়।
সেরার লড়াই অস্কার ও পাম ডি অর
সেরা সিনেমার লড়াইয়ের জন্য দুটি প্লাটফর্ম বেশ জনপ্রিয়। একটি একাডেমি অ্যাওয়ার্ড বা অস্কার অন্যটি কান চলচ্চিত্র উৎসবের মর্যাদাপূর্ণ পাম ডি অর। এই দুটি পুরস্কারের আবেদন বিশ্বব্যাপী রয়েছে। সারা বিশ্বের সিনেমাপ্রেমী মানুষই এ দুটি পুরস্কারজয়কে যে কোনো সিনেমা, পরিচালক বা অভিনেত্রীর অন্যতম সেরা অর্জন বলে মেনে নেন। যদিও কোনো পুরস্কারই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। অস্কার পুরস্কার নিয়ে প্রায়শই বিতর্ক দেখা যায়। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে পাম ডি অর পুরস্কারটির ব্যাপারে সবসময় বলা হয়- সন্দেহাতীত অর্জন। ২০০০ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত অস্কারজয়ী সিনেমাগুলো হলো : গ্লাডিয়েটর (২০০০), অ্যা বিউটিফুল মাইন্ড (২০০১), শিকাগো (২০০২), দ্য লর্ড অব দ্য রিং : দ্য রিটার্ন অব দ্যা কিং (২০০৩), মিলিয়ন ডলার বেবি (২০০৪), ক্রাশ (২০০৫), দ্য ডিপার্টেড (২০০৬), নো কান্ট্রি ফর ওল্ড ম্যান (২০০৭), স্লামডগ মিলিওনিয়ার (২০০৮), হার্ট লকার (২০০৯), দ্য কিংস স্পিচ (২০১০), দ্য আর্টিস্ট (২০১১), আর্গো (২০১২), টুয়েলভ ইয়ার্স অ্যা স্লাভ (২০১৩), বার্ডম্যান : দ্য আনপেক্সেটেড ভার্চু অব ইগনোরেন্স (২০১৪)। এ ছাড়া ১৯২৭-১৯২৮ সাল থেকে দেওয়া একাডেমি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী বহু সিনেমা বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটির মধ্যে গন উইথ দ্য উইন্ড (১৯৩৯) রেবেকা (১৯৪০), বেনহার (১৯৫৯), প্যাটোন (১৯৭০), দ্য গডফাদার (১৯৭২), ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কুক্কুস নেস্ট (১৯৭৫), অ্যানি হেল (১৯৭৭), গান্ধী (১৯৮২), দ্য সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্ব (১৯৯১), সিল্ডারস লিস্ট (১৯৯৩), ফরেস্ট গাম্প (১৯৯৪), আমেরিকান বিউটি (১৯৯৯)।
অস্কার বিজয়ী সিনেমাগুলোর নিয়ে সাধারণের আগ্রহ বেশি। অস্কারজয়ী সিনেমাগুলোর প্রত্যেকটিই দর্শকপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু সব সময় জুরিবোর্ডের মনোনীত সিনেমাই যে সেরা সেটা ভেবে নেওয়া ভুল হবে। অনেক সময় সিনেমাবোদ্ধাদের চোখে সেরা ছবির নামটিও মনোনয়ন পায়নি। অস্কার বিজয়ী সিনেমাগুলোর মধ্যে টাইটানিক সারা বিশ্বে সাড়া ফেলেছিল।
টাইটানিক : ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় সিনেমাটি। এই সিনেমার পরিচালক, লেখক ও সহ-প্রযোজক মার্কিন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব জেমস ক্যামেরন। মূল চরিত্রে অভিনয় করেন কেট উইন্সলেট ও লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও। উচ্চবিত্ত সমাজের মেয়ে রোজের সঙ্গে টাইটানিক জাহাজে নিম্নবিত্ত জ্যাকের প্রেম হয়। ১৯১২ সালে টাইটানিকের পরিণতির পটভূমিতে তাদের এই ট্র্যাজেডিই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবিটিতে। প্রেমের গল্প আর প্রধান চরিত্রগুলো কাল্পনিক হলেও অনেকগুলো পার্শ্ব চরিত্র ঐতিহাসিক সত্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। সিনেমাটির মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি দর্শকদের অশ্রুসিক্ত করে। হলিউডে টাইটানিক নানা কারণে একটি মাইলফলক হয়ে রয়েছে। টাইটানিক ডুবির দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার জন্য ক্যামেরন স্কেল মডেলিং ও কম্পিউটার এনিমেশনের সাহায্য নিয়েছেন। সে সময়ে টাইটানিকই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবি। এই চলচ্চিত্র তৈরিতে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্যারামাউন্ট পিকচার্স ও টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফঙ্ যৌথভাবে এই অর্থের জোগান দিয়েছে।
মুক্তির পর টাইটানিক সমালোচক ও দর্শক সবার কাছ থেকেই বিপুল প্রশংসা পায়। টাইটানিকের সবচেয়ে বড় দুটি অর্জন হচ্ছে : ১৪টির মধ্যে ১১টি ক্ষেত্রেই একাডেমি পুরস্কার জিতে নেওয়া এবং সর্বকালের সবচেয়ে বেশি উপার্জন করা।
অন্যদিকে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদান করা হয় পাম ডি অর। পৃথিবীর সেরা চলচ্চিত্রগুলোর আসর বলা হয় এটিকে। প্রতি বছর সারা বিশ্বের নামকরা প্রযোজক, পরিচালক ও অভিনয় শিল্পীদের দেখা মেলে এই উৎসবে। গুরুত্বের দিক দিয়ে পাম ডি অর অস্কারকেও ছাড়িয়ে যায়। বিভিন্ন ভাষাভাষী চলচ্চিত্রের এত বড় আসরে অংশ নেওয়াটাও যে কোনো চলচ্চিত্রের জন্য সম্মানজনক। পাম ডি অর বিজয়ী প্রতিটি সিনেমাই জীবনকে নাড়া দিয়ে যায়। বিশ্বসেরা সিনেমাবোদ্ধাদের মতে পাম ডি অর বিজয়ী সিনেমা জীবন থেকেও বড় কিছু। ইতিহাস ও জীবনঘনিষ্ঠ সিনেমার মিলনমেলা এটি। ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাম ডি অর বিজয়ী সিনেমাগুলো হলো : ডেন্সার ইন দ্য ডার্ক (২০০০, ডেনমার্ক), দ্য সনস রুম (২০০১, ইতালি), দ্য পিয়ানিস্ট (২০০২, ফ্রান্স), এলিফেন্ট (২০০৩, যুক্তরাষ্ট্র), ফাহরেহেইট নাইন এলিভেন (২০০৪, যুক্তরাষ্ট্র), দ্য চাইল্ড (২০০৫, বেলজিয়াম), দ্য উইন্ড দ্যাট শেকস দ্য বার্লি (২০০৬, ব্রিটেন), ফোর মানথস, থ্রি উইক অ্যান্ড টু ডেইস (২০০৭, রোমানিয়া), দ্য ক্লাস (২০০৮, ফ্রান্স), দ্য হোয়াইট রিবন (২০০৯, অস্ট্রিয়া), আঙ্কেল বোনমি হু ক্যান রিকল হিজ পাস্ট লিভস (২০১০, থাইল্যান্ড), দ্য ট্রি অব লাইফ ( ২০১১, যুক্তরাষ্ট্র), আমর (২০১২, অস্ট্রিয়া), ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেস্ট কালার (২০১৩, ফ্রান্স ও তিউনিসিয়া), উইন্টার স্লিপ (২০১৪, তুর্কি), ধীপান (২০১৫, ফ্রান্স)। পাম ডি অর বিজয়ী সিনেমাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে ২০১৩ সালে মুক্তি স্বর্ণপাম জেতা ব্লু ইজ দ্য ওয়ার্মেস্ট কালার ছবিটি। দুটি মেয়ের প্রেম কাহিনীর আড়ালে মনোদৈহিক অনুভূতির সাড়া দেওয়ার গল্প এই সিনেমা উপজীব্য ছিল। চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের জন্য এবং বিএএফটিএ পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র হিসেবে মনোনীত হয়। অনেক সমালোচক একে ২০১৩ সালের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে ঘোষণা করেন।
ধীপান : ২০১৫ সালে পাম ডি অর জেতা ধীপানও রয়েছে আলোচনায়। একজন তামিল গেরিলার জীবন কাহিনী নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি। শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের পর দেশ ছেড়ে আসা শরণার্থীর জীবনের গল্পকে ঘিরে তৈরি ধীপান জিতে নেয় স্বর্ণপাম। আমেরিকান চিত্রনির্মাতা জোয়েল এবং ইথান কোয়েনের নেতৃত্বে জুরি বোর্ড এই চলচ্চিত্রটিকেই সেরা বলে বেছে নেয়। ধীপান ফরাসি পরিচালক জাক অদিয়ার পরিচালিত সিনেমা।
ইতিহাস কাঁপানো কয়েকটি সিনেমা
টাইম ম্যাগাজিন ১০০টি সেরা সিনেমা বাছাই করেছিল। সেখানে টপটেন সাউন্টট্রাকে ছিল- দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব রবিনহুড (১৯৩৮), সিটিজেন কেইন (১৯৪১), ফ্রেড অ্যাসটেয়ার অ্যান্ড জিঞ্জার রজার্স (১৯৪৯) অন দ্য ওয়াটারফন্ট (১৯৫৪), দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন আর্ম (১৯৫৫), জুলেস অ্যাট জিম (১৯৬২), দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি (১৯৬৬), লরা (১৯৭৯) এবং সাউথ পার্ক : বিগার, লংগার অ্যান্ড আনকাট (১৯৯৯)।
ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেসের সেরা দশে রয়েছে– দ্য শশাঙ্ক রিডাম্পশন (১৯৯৪), দ্য গডফাদার (১৯৭২), দ্য গডফাদার টু (১৯৭৪), দ্য ডার্ক নাইট (২০০৮), টুয়েলভ অ্যাংরিম্যান (১৯৫৭), সিল্ডারস লিস্ট (১৯৯৩), পাল্প ফিকশন (১৯৯৪), দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি (১৯৬৬), দ্য লর্ড অব দ্য রিংস : দ্য রিটার্ন অব দ্য কিং (২০০৩) এবং ফাইট ক্লাব (১৯৯৯)।
রটেন টমেটোসে সেরা দশে রয়েছে– দ্য উইজার্ড অব অজ (১৯৩৯), দ্য থার্ড ম্যান (১০৪৯), সিটিজেন কেইন (১৯৪১), অল অ্যাবাউট ইভ (১৯৫০), অ্যা হার্ড ডেইস নাইট (১৯৬৪), দ্য কেবিনেট অব ডক্টর কেলিগেরি (১৯২০), মডার্ন টাইমস (১৯৩৬), দ্য গডফাদার (১৯৭২), ই টি দ্য এঙ্ট্রা টেরেস্ট্রিয়া (১৯৮২) এবং মেট্রোপোলিস (১৯২৭)।
মেটাক্রিটিকের শীর্ষ দশে রয়েছে– বয়হুড (২০১৪), প্যানস লেবিরিনথ (২০০৬), ক্যারল (২০১৫), হুপ ড্রিমস (১৯৯৪), ফোর মানথস, থ্রি উইকস অ্যান্ড টু ডেস (২০০৮), টুয়েলভ ইয়ারস অ্যা স্লেভ (২০১৩), ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ (১৯৬৪), রাতাতোলি (২০০৭), গ্রাভিটি (২০১৩), দ্য সোশ্যাল নেটওয়ার্ক (২০১০) এবং জিরো ডার্ক থার্টি (২০১২)
ব্রিটিস ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সেরা দশে রয়েছে– ভার্টিগো (১৯৫৮), সিটিজেন কেইন (১৯৪১), টোকিও স্টোরি (১৯৫৩), লা রেগলে দু জিয়ু (১৯৩৯), সানরাইজ : অ্যা সং অব টু হিউম্যানস (১৯২৭), ২০০১ : অ্যা স্পেস অডিসি (১৯৬৮), দ্য সার্চারস (১৯৫৬), ম্যান উইথ অ্যা মুভি ক্যামেরা (১৯২৯), দ্য প্যাশন অব জন অব আর্ক (১৯২৭), এইট অ্যান্ড হাফ (১৯৬৩)
২০০১ : অ্যা স্পেস ওডিসি : স্ট্যানলি কুবরিক ষাটের দশকে বানান ২০০১ : অ্যা স্পেস ওডিসি। সিনেমার মাধ্যমে চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন সম্ভব আর সেটাই করে দেখিয়েছেন এই পরিচালক। সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যই আপনাকে গভীরভাবে ভাবাবে। দর্শকের ভেতরে লুকায়িত রহস্যকে উন্মোচিত করবে। এটিকে সেরা কল্পবিজ্ঞান সিনেমা বললেও ভুল হবে না। এরপর মহাকাশ নিয়ে সফল সিনেমা হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছে ২০১৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গ্রাভিটি’।
দেশে দেশে জনপ্রিয় সিনেমা
সারা বিশ্বে প্রতিবছর নির্মিত হচ্ছে অসংখ্য মৌলিক সিনেমা। এই সিনেমাগুলোতে উঠে আসছে নিজ দেশের সংস্কৃতি ও সমাজের গল্প। বছরের সেরা কয়েকটি সিনেমা নির্মিত হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বা মিডিয়ার বদৌলতে দুয়েকটির বেশি নিয়ে প্রচারণা না হওয়ায় অনেকের আড়ালেই থেকে যায়। প্রতিটি দেশেই ফিল্ম ইনস্টিটিউট রয়েছে। তারা সেরা সিনেমাগুলোকে মনোনীত করে। একজন সিনেমাপ্রেমী একটু খোঁজ নিলেই সেই সিনেমাগুলোর সন্ধান পেতে পারেন। এখানেও সেই একই কথা প্রযোজ্য। সেরা সিনেমার তালিকায় তারতম্য রয়েছে। হয়তো বেশিরভাগ মানুষ হাজারটি সিনেমার মধ্যে ১০০টিকে আলাদা করে উল্লেখযোগ্য বলতে পারেন কিন্তু সেরা সিনেমার তালিকা কখনই স্থির নয়। সিনেমাবোদ্ধারাও এটি করেননি। বাংলাদেশে বলিউড ও হলিউডে নির্মিত সিনেমার দর্শক তুলনামূলক বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ব্রিটেন, ফ্রান্স, ব্রাজিল, ইরান, কোরিয়া, স্পেনের নির্মিত সিনেমার দর্শক রেশি রয়েছে। এর বাইরেও ভিন্নভাষী সিনেমার দর্শক কম নয়। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের অসংখ্য উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে মাত্র কয়েকটির নাম এখানে দেওয়া হলো। ফ্রান্সের দ্য রুলস অব দ্য গেম, এমিলি, দ্য পিয়ানিস্ট, দ্য আর্টিস্ট, দ্য ইনটাচেবলস, দ্য হোল, লা রেগলে দু জিও, দ্য মাদার অ্যান্ড দ্য হোর, চিলড্রেন অব প্যারাডাইস, লিওন : দ্য প্রফেশনাল। ইরানের বসু, দ্য লিটল স্ট্রেঞ্জার, অ্যা সেপারেশন, দ্য কালার অব প্যারাডাইস, দ্য সংস অব স্প্যারো, মাদার, অ্যাবাউট অ্যালি, দ্য লিজার্ড, টেস্ট অব চেরি। এনডিটিভি করেছে ভারতীয় সেরা বিশ সিনেমার তালিকা। সেখানের প্রথম দশটি যথাক্রমে- মেঘে ঢাকা তারা (১৯৬০), চারুলতা (১৯৬৪), পথের পাঁচালী (১৯৫৫), শোলে (১৯৭৫), দো ভিগ জামিন (১৯৫৩), পায়সা (১৯৫৭), ভুবনসমী (১৯৬৯), মাদার ইন্ডিয়া (১৯৫৭), ঘতাশ্রদ্ধা (১৯৭৩)। টাইমস অব ইন্ডিয়া করেছে মৃত্যুর আগে দেখে নিন ভারতীয় সেরা দশ সিনেমার তালিকা। সেখানে রয়েছে- মুঘল ই আজম, আনান্দ, শোলে, মাসুম, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, জানে ভি দো ইয়ারো, গোলমাল (১৯৭৯), লগন, দামিনী এবং কাহানি। স্পেনের পেনস লেবিরিনথ, অল অ্যাবাউট মাই মাদার, দ্য অরফানেজ, দ্য সি ইনসাইড, ভিরিদিয়ানা, দ্য সিক্রেট ইন দেয়ার আইস, টক টু হার, ওয়াইল্ড টেলস, দ্য এক্সটারমাইনেটিং অ্যাঞ্জেলস। ব্রিটেনের দ্য থার্ড ম্যান, গেট কার্টার, ডোন্ট লুক নাউ, ট্রেইনস্পোটিং, জেমস বন্ড সিরিজ, মন্টি ফেটন অ্যান্ড দ্য হোলি গ্রেইলস, হ্যারি পটার সিরিজ, ব্রিফ এনকাউন্টার, দ্য থার্টি নাইন স্টেপস, গ্রেট এক্সেপেক্টেশনস, দ্য ব্রিজ ওভার দি রিভার কিউই, ড্রাকুলা, অ্যা ক্লকওয়াক অরেঞ্জ, সিক্রেটস অ্যান্ড লাইস, ক্যাসিনো রয়েল ইত্যাদি। ইতালির বাইসাইকেল থিফ, লাইফ ইজ বিউটিফুল।
অ্যা সেপারেশন : ইরানি সিনেমা। জিতেছে অস্কার। ইরানে থাকা না থাকা নিয়ে নাদের-সিমিন দম্পতির দ্বন্দ্ব, বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতে শরণাপন্ন হয়। সিমিন চায় তার কন্যা তারমাহের সুন্দর ভবিষ্যৎ, বিপরীতে নাদের চায় অসুস্থ বাবার সেবা। তারমাহে কার সঙ্গে থাকবে সেটা নিয়েও তীব্র মনস্তাত্তি্বক সংকটের গল্প নির্ভর এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন আসগর ফরাদি।
অ্যানিমেটেড মুভির বিশ্বজয়
ডিজনিকে বলা হয় অ্যানিমেটেড সিনেমা নির্মাণের পথিকৃৎ। ১৯৩৭ সালে ডিজনি উপহার দেয় ‘স্নো হোয়াইট অ্যান্ড সেভেন ডরফস’। এরপর থেকে অ্যানিমেটেড সিনেমা আরও উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আরও নিখুঁত ও প্রাণবন্ত হয়েছে। এখন বিশ্বব্যাপী সিনেমার বাজারে অ্যানিমেটেড সিনেমাগুলো শুধু আয়ের দিক থেকেই সফল নয়, দর্শকপ্রিয়তায় সমানতালে এগিয়ে চলেছে। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সেরা ১০ অ্যানিমেটেড মুভির তালিকায় যথাক্রমে রেখেছে- স্নো হোয়াইট অ্যান্ড দ্য সেভেন ডরফস, পাইনোচিও, বামবি, দ্য লায়ন কিং, ফ্যান্টাসিয়া, টয় স্টোরি, বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট, শেড়েক, সিন্ডারেলা এবং ফাইন্ডিং নিমো। এ ছাড়াও জনপ্রিয় কয়েকটি অ্যানিমেটেড সিনেমা হলো : দ্য গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস, আপ, ফ্রোজেন, হাউ টু ট্রেইন ইওর ড্রাগন, স্পিরিটেড অ্যাওয়ে, ট্যাঙ্গেলড, দ্য ইনক্রেডিবেলস, কুং ফু পান্ডা, ওয়াল-ই, প্রিন্সেস মনোকি, কারস, ডেসকিপেবল মি, বিগ হিরো সিক্স, আলাদিন, আইস এজ, রেনগো, আকিরা, মনস্টার ইনকো, কোরালাইন, রাতাতোলি, দ্য নাইট মেয়ার বিফোর ক্রিসমাস, ওয়ালেস অ্যান্ড গ্রোমিট : দ্য কার্স অব দ্য ওয়ের র্যাবিট, র্যাক ইট রালফ, মুলান, দ্য লিটল মারমেইড, মেগামাইন্ড, মাই নেইভার টোটোরো, ক্যাট সিটি, ব্রেভ, এপিক, দ্য লিটল ফক্স, টয় স্টোরি থ্রি।
সিনেমাপ্রেমীদের কাছে এই তালিকাটি খুব ছোট লাগাটাই স্বাভাবিক। জনপ্রিয় অ্যানিমেটেড সিনেমাগুলোর নাম জানতে এর বাইরে বিভিন্ন সিনেমা রেটিংকারী অনলাইন মাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানের তৈরি তালিকা দেখা যেতে পারে। রোটেন টমাটোস, ইন্টারনেট মুভি ডাটাবেস ছাড়াও শীর্ষ ম্যাগাজিন ও সংবাদপত্র বিভিন্ন সময় দর্শকদের পছন্দনীয় অ্যানিমেটেড সিনেমার নাম তুলে আনতে পাঠক ও দর্শকদের ভোট নিয়ে এ ধরনের আলোচিত সিনেমার তালিকা তৈরি করেছে।
টয় স্টোরি : টয় স্টোরি অ্যানিমেটেড সিনেমা জগতে সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা। এ পর্যন্ত টয় স্টোরির মোট তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। টয় স্টোরি, টয় স্টোরি টু ও টয় স্টোরি থ্রি সিরিজ আকারে দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৯৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টয় স্টোরি বিশ্ব দাপিয়ে বেড়িয়েছে। টয় স্টোরি থ্রি ২০১০ সালে অ্যানিমেটেড মুভির কাতারে অস্কার জিতে নেয়। টয় স্টোরির মূল গল্পে কেন্দ্রে রয়েছে অ্যান্ডি ও তার খেলনাপুতুল উডি। অ্যান্ডি, ৬ বছরের ছেলে। তার ঘরে রয়েছে অসংখ্য খেলনা। যখন ঘরে কোনো মানুষ থাকে না তখন এই খেলনাগুলো নিজেদের মধ্যে কথা বলা শুরু করে। এই খেলনাগুলোর লিডার উডি। মজার কাণ্ড করে বেড়ানো, অ্যাডভেঞ্চারাস পুতুলদের রোমাঞ্চকর গল্পকে কেন্দ্র করে টয় স্টোরি সিরিজ নির্মিত হয়েছে। সুখবর হচ্ছে, ২০১৭ সালে আসছে টয় স্টোরি সিরিজের নতুন সিনেমা টয় স্টোরি ফোর। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন