সালমান রিয়াজ
তারা দেখতে কার না ভাল লাগে। অন্ধকার রাতে তারার ঝিলিমিলি রূপ দেখলে মন ভালো হয় না এমন মানুষ মেলা ভার। মন জুড়ানো নৈসর্গিক দৃশ্য অবগাহন করার সুযোগ পেতে কে না চায়। রাতের আঁধারে প্রিয়জনকে পাশে নিয়ে তারা উপভোগ পিপাসুদের জন্য সুসংবাদ- বিশ্বের একমাত্র তারকা উজ্জ্বল দ্বীপের সন্ধান পাওয়া গেছে। সে তারাই আবার সব অকল্যাণ অপসারণ করার প্রতীক!
বিশ্বের বুকে বিভিন্ন ধরনের দ্বীপ খুঁজে পেয়েছেন অনুসন্ধানকারীরা। কিন্তু আকাশে সবচেয়ে বেশি ‘তারাখচিত’ দ্বীপ এটাই বিশ্বের প্রথম।
‘সার্ক’ নামের এ দ্বীপটি ফ্রান্সের নরম্যানডি উপকূলের মাত্র ২৫ মাইল পশ্চিমে এবং লন্ডনের দক্ষিণ উপকূল থেকে মাত্র ৮০ মাইল দূরে অবস্থিত। ইংলিশ চ্যানেলের দক্ষিণাংশে অবস্থিত এটি একটি ছোট দ্বীপ। এর আয়তন মাত্র ৫.৪৫ বর্গ কিলোমিটার। দ্বীপটি একসময় রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকলেও বর্তমানে এটি বৃটিশ সরকারের অধীনে।
এ দ্বীপের প্রধানতম আয়ের উৎস হল চমকপ্রদ পর্যটন শিল্প। এছাড়া কারুশিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারও রয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বের একমাত্র তারকা উজ্জ্বল দ্বীপ হিসেবে খেতাব কুড়িয়েছে দ্বীপটি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সৌন্দর্য সংরক্ষণ সংস্থা আন্তর্জাতিক ডার্ক স্কাই এসোসিয়েসান (আইডিএ) কর্তৃক এ খেতাব পায় দ্বীপটি। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে ছয় শতাধিক জনগণের এ দ্বীপটির রাতের আকাশ পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে এমন খেতাব দিয়েছে আইডিএ। ২০০৯ সালে আঁধার রাতের তারকা উজ্জ্বল অঞ্চলের তালিকাভুক্ত হয় সার্ক দ্বীপটি। এটিই বিশ্বেরএ ধরনের একমাত্র দ্বীপ। পর্যটকদের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো একটি দ্বীপ এটি।
মেঘমুক্ত রাতের আকাশে তারার ঝিকিমিকি, অগনিত নক্ষত্র ও বিক্ষিপ্ত উল্কাপিণ্ডের লুকোচুরি দ্বীপটিকে করেছে শোভামণ্ডিত। রাতের আঁধারে তারার আলোই সেখানে একমাত্র আলো। তারার এ আলোকে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ হিসেবে মনে করেন সার্ক দ্বীপে বসবাসকারী জনগণ। দ্বীপ থেকে সব অকল্যাণ দূর করার জন্য এ তারকারাজিই তাদের সাহায্য করে। এমন বিশ্বাস মনে-প্রাণে ধারণ করে আছে দ্বীপের সব বাসিন্দা। এজন্য সৃষ্টিকর্তার অপরূপ এ দানকে চিরঞ্জীব করে রাখতে সেখানে রয়েছে কিছু বিধিবদ্ধ নিয়ম।
কোনো স্ট্রিট লাইট নেই দ্বীপটিতে। আবাসিক ভবনগুলোর আলোও ঘরেই সীমাবদ্ধ। কারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে আলো বাইরে বের হতে দেয়ার ব্যাপারে রয়েছে সরকারের কড়া নিয়ম। তবে এলাকাবাসীর সুবিধার জন্য একটি মাত্র আলোর মশাল রয়েছে। সার্ক দ্বীপে মোটর চালিত গাড়ি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ঘোড়ার গাড়ি পরিবহনের সবচেয়ে ব্যবহার্য বাহন। কিন্তু শস্য আনা নেয়ার জন্য শুধু ট্রাক্টর চলাচল করতে পারে। জরুরি প্রয়োজনে চলাচল করতে পারে অ্যাম্বুলেন্সও।
যারা তারকারাজি নিয়ে গবেষণা করতে চান এবং তারকাপাগল মানুষের জন্য দ্বীপটি হতে পারে ভ্রমণের উত্তম জায়গা। দ্বীপটির পর্যটক বিভাগের পক্ষ থেকে রয়েছে পর্যটনের সুযোগ সুবিধা। সেক্ষেত্রে অবশ্যই দ্বীপটির বহুদিনের প্রচলিত বিধিবিধান মেনে চলতে হবে।
এ দ্বীপে রাতের আকাশে ব্যতিক্রমী তারকারাজির আলো এক দিগন্ত থেকে অন্য দিগন্তে ছায়াপথের মতো দৃশ্যমান করে তোলে। রাতের আকাশে ছায়াপথের বিচরণ এ দ্বীপের একমাত্র বৈশিষ্ট্য। এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভুমি এ দ্বীপ। এক একটা তারকা যেন একটা সূর্যের সমান আলো বিচ্ছুরণ করছে। প্রায় এক শতাধিক বিলিয়ন তারকার সমাহার ছোট্ট এ দ্বীপ জুড়ে। যেন সৃষ্টির অপরূপ মায়াময় এক নিসর্গ। সৌজন্যে : যুগান্তর