Skip to content

বিশ্বের সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট হোসে মুজিকা এখন ফুল বিক্রেতা

Mujika

তানভীর আহমেদ
হোসে মুজিকা। উরুগুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট। উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন ২০১০ সালের ১ মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত। তার জন্ম ১৯৩৫ সালে। সে হিসাবে এখন তার বয়স ৮১ বছর। তার মা ছিলেন গৃহিণী আর বাবা কৃষক। পাঁচ বছর বয়সেই মুজিকা তার বাবাকে হারান।

Mujika3যৌবনে ন্যাশনাল পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ষাটের দশকের শুরুর দিকে ‘তুপামারোস আরবান বিবেল মুভমেন্ট’ নামের এক সদ্য প্রতিষ্ঠিত সশস্ত্র গেরিলা দলে যোগদান করেন তিনি। তখন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়া।

রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন তুপামারোসের একজন প্রথমসারির নেতা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠার পর। ষাট ও সত্তর দশকে কিউবার বিপ্লবে অনুপ্রাণিত গেরিলা দলের নেতা হিসেবে উরুগুয়ের বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়েছেন। জীবনে গুলিবিদ্ধ হন ছয়বার। ১৯৬৯ সালে মাল্টিভিডিওর একটি শহরও দখলে নেয় তুপামারোস। সরকারি বাহিনী তুপামারোসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলে হার মানতে বাধ্য হয় মুজিকাদের দল। ১৯৭২ সালে সরকারি বাহিনী মুজিকাকেও গ্রেফতার করে।

Mujika5জেলে কাটল ১৪ বছর
মুজিকার জেলবন্দী জীবন ছিল ১৪ বছর। এই পুরো সময়টায় কারাগারের অন্ধকারে তাকে অবর্ণনীয় কষ্ট সইতে হয়েছে। বেশিরভাগ সময় তাকে রাখা হতো কারাগারের মাটির নিচের একটি কক্ষে। সেখানে ঠিকমতো আলোবাতাস পৌঁছাতো না। প্রায় এক বছর গোসল করার সুযোগ মেলেনি তার। যে কক্ষে তাকে রাখা হয়েছিল সেটি ছিল কুনো ব্যাঙ, আরশোলা, ইঁদুর, টিকটিকিদের স্বর্গরাজ্য। ঠিকমতো খেতেও পেতেন না। সঙ্গীদের সঙ্গে শুকনো রুটি ভাগ করে খেতে হতো। ১৯৮৫ সালে স্বৈর সরকারের পতন হলে মুজিকা বন্দীদশা থেকে মুক্তি পান।

প্রেসিডেন্ট হয়ে ওঠা
নিজ দেশে এই বামপন্থি গেরিলা নেতা খুবই জনপ্রিয়। সেখানে সবাই তাকে ‘পেপে’ নামে ডাকে। বামপন্থি দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুজিকা ও তার তুপামারোস মুভমেন্ট অব পপুলার পার্টিসিপেশন (এমপিপি) নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৯৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুজিকা ডেপুটি এবং ১৯৯৯ সালে সিনেটর নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বের কারণে এমপিপির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ২০০৪ সালে ব্রড ফ্রন্টের সবচেয়ে বড় শাখা হয়ে ওঠে এমপিপি। ওই বছরের নির্বাচনে আবারও সিনেটর নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট তাবারে ভাসকেস তাকে মত্স্য, গবাদিপশু, কৃষি বিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত করেন। ২০০৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিপক্ষ লুইস আলবার্তো লাকালেকে পরাজিত করেন মুজিকা। ২০১০ সালে এসে উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।

সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট
মুজিকা বলতেন, প্রেসিডেন্ট ও সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য থাকবে না। প্রেসিডেন্ট হিসেবে মুজিকা প্রতি মাসে বেতন পেতেন ১২ হাজার ৫০০ ডলার। ১ হাজার ২৫০ ডলার রেখে বাকি টাকা দুস্থদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন। তার আর্থিক দৈন্যতা আছে কিনা জানতে চাইলে এক স্প্যানিশ টিভি চ্যানেলকে বলেছিলেন, এই টাকায় বেশ ভালো আছি।

মুজিকার নামে কোনো ঋণ নেই। তার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নেই। নিজেকে তিনি পরিচয় দেন একজন কৃষক হিসেবে।

২০১০ সালে নিজের আয়কর বিবরণীতে তিনি বার্ষিক আয় দেখান মাত্র ১ হাজার ৮০০ ডলার। যা কিনা তার ২৮ বছর পুরনো গাড়ির দাম। ২০১২ সালের বিবরণীতে স্ত্রীর অর্ধেক সম্পদ যুক্ত করেন তিনি। এই সম্পদের মধ্যে রয়েছে স্ত্রীর জমি, ট্রাক্টর ও বাড়ির দাম।

Mujika6সাদামাটা জীবন
প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বাড়তি খরচ হবে বলে প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত সরকারি বাড়ি-গাড়ি কোনোটাই ব্যবহার করেননি মুজিকা। একবার প্রচণ্ড শীত পড়ায় প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টারা বললেন, প্রেসিডেন্টসিয়াল প্যালেসে কয়েকটা দিন থাকতে কিন্তু তিনি যাননি। রাজধানী মন্টিভিডিওর পাশে স্ত্রীর মালিকানাধীন ভাঙা এক খামার বাড়িতে থাকেন তিনি।

মুজিকার বাড়ির বাইরে কাপড় কাচার ঘর। এখনো কর্দমাক্ত পথ পেরিয়ে নিজের খামার বাড়িতে পৌঁছাতে হয় তাকে। খামারে স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত কৃষিকাজ করেন তিনি। খামারে চাষ করছেন হরেক রকমের ফুল। গাছে সার দেওয়া, খেত নিড়ানো থেকে শুরু করে ফুল তোলা সব কাজ করেন নিজ হাতেই। ফুল বিক্রি করার টাকা দিয়েই সংসার চলে তার।

পাশেই ভাঙাচোরা একটি পুরনো কুয়া রয়েছে। এটাই বাড়িতে পানি সরবরাহের একমাত্র ব্যবস্থা। অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের মতো নিরাপত্তারক্ষী পরিবেষ্টিত হয়ে চলাফেরা করতেন না। তার নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত ছিল মাত্র দুজন পুলিশ আর ম্যানুয়েলা নামের একটি পোষা কুকুর।

তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত এই কুকুরটিরও একটি পা খোঁড়া। সাধারণ নাগরিকের মতো রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হতেন। ট্রাফিক সিগন্যাল পড়লে বসে থেকে অপেক্ষা করতেন সবুজ বাতি জ্বলার জন্য। পাড়া-মহল্লার রেস্টুরেন্টে ধূসর জামা-প্যান্ট পরে খেতে বসে যেতেন সাধারণ অতিথিদের সঙ্গেই।

একমাত্র সম্পদ
অনেক বছর একসঙ্গে থাকার পর ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট মুজিকা লুসিয়া তপোলান্সকি নামে একজন রাজনীতিবিদকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির কোনো ছেলেমেয়ে নেই। এই দম্পতির সবচেয়ে দামি সম্পত্তি হলো ১৯৮৭ সালে কেনা এক হাজার ৯০০ ডলারের একটি গাড়ি। তিনি নিয়মিত চলাচলের জন্য একটি অতি সাধারণ এই গাড়ি ব্যবহার করেন। ঘোরাফেরার জন্য তার নিত্যসঙ্গী ২৮ বছরের পুরনো ভোক্সওয়াগান বিটল। বর্তমানে এটি ভেঙে করুণ দশায় উপনীত হয়েছে। পুরাতন মডেল বলে খোদ নির্মাতা কোম্পানি ২০০৩ সাল থেকে এ গাড়ি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। মুজিকার গাড়িটি কিনতে চেয়েছিলেন এক আরব শেখ। তিনি গাড়িটির দাম হেঁকেছেন ৮ কোটি টাকা। কিন্তু মুজিকা রাজি হননি কারণ এ গাড়ির সঙ্গে তার বন্ধুত্বের বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Mujika4

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *