আনিকা জীনাত
দ্বীপটি এতই ছোট যে মোটে পাঁচ মিনিটে ঘুরে শেষ করা যায়। চারপাশে সাগর ঘেরা এই দ্বীপে দুই কদম পর পরই একটি করে বাড়ি। বেশির ভাগ বাড়িতে দেয়াল বা গেটের বালাই নেই। সবাই এত মিলেমিশে থাকে যে দেখলে মনে হতে পারে, তারা সবাই একই পরিবারের সদস্য। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সান্তা ক্রুজ নামের এই দ্বীপ কলোম্বিয়ার কারতাখেনা থেকে মাত্র দুই ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। দ্বীপটি এতই ঘনবসতিপূর্ণ যে আমেরিকার ম্যানহাটান শহরের তুলনায় এর ঘনত্ব চার গুণ বেশি। অবাক করার ব্যাপার হলো, আড়াই একরেরও কম আয়তনের এই ক্ষুদ্র দ্বীপটিতে আছে ৯০টি বাড়ি। আর এখানে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষের বাস।
তাই অনেকেই একে পরিচয় করিয়ে দেন পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দ্বীপ বলে। তবে তা না হলেও অন্তত ক্যারিবিয়ান সাগরের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা ঘনত্বের দ্বীপ যে এটি তাতে সন্দেহ নেই।
আজ থেকে প্রায় দেড় শ বছর আগে একদল মৎস্যশিকারি এই দ্বীপের সন্ধান পায়। পরে তারা আবিষ্কার করে, এই দ্বীপে কোনো মশা নেই। ধীরে ধীরে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের দ্বীপের বাসিন্দারা এসে এখানে বসতি স্থাপন করে। মূলত এ কারণেই ছোট্ট এই দ্বীপে এত মানুষের বসবাস।
সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকার কারণে দ্বীপের অনেক বাসিন্দাই ক্যারিবিয়ান সাগরের অন্য দ্বীপগুলোতে কাজ করে। কেনাকাটা করার জন্য এখানে দোকান আছে মাত্র দুটি। স্কুল আর রেস্তোরাঁ আছে একটি করে। প্রবহমান পানির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তিন সপ্তাহ পরপর এই দ্বীপে পানি সরবরাহ করে কলম্বিয়ান নৌবাহিনী। এখানে সারা দিনে জেনারেটর চলে মাত্র পাঁচ ঘণ্টার জন্য।
সবাই সবাইকে চেনার সূত্রে দ্বীপবাসীরা মিলেমিশেই থাকে। দ্বীপের মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা নেই বললেই চলে। তাই দ্বীপে কোনো পুলিশ নেই। আরো অবাক করার ব্যাপার হলো, এখানে নেই কোনো ডাক্তার, এমনকি কবরস্থান। কারো মৃত্যু হলে দাফনের ব্যবস্থা করা হয় অন্য দ্বীপে। এসব কারণে এখানকার বাসিন্দাদের কাছে দ্বীপটি প্রায় স্বর্গতুল্য।
কেউ কেউ মাছ ধরলেও এখানকার বাসিন্দাদের মূল আয়ের উৎস হলো পর্যটনশিল্প। পর্যটকরা দ্বীপের পাশের সাগরে ডুব দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে মাছ ধরারও ব্যবস্থা আছে।
মূল ভূখণ্ডে অপরাধ ও মাদকের আগ্রাসন থাকলেও এখানকার জীবন অনেকটাই আলাদা। পুরো দ্বীপটিই যেন একটি সুখী পরিবারের প্রতিচ্ছবি। সূত্র : কালের কণ্ঠ