নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম ব্যাটে ঝড় তোলার মতো করেই আচমকা অবসরের ঘোষণার আলোচনাতেও ঝড় তুললেন। ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুটি টেস্ট খেলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে যাচ্ছেন তিনি! টি২০ ক্রিকেটের মারমার-কাটকাট ব্যাটিং রোমাঞ্চের অন্যতম বড় ফেরিওয়ালা তিনি। অথচ তাকেই কি-না দেখা যাবে না আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপে!
ম্যাককুলামের এ অবসর ঘোষণার মধ্য দিয়ে ক্রিকেট থেকে শুধু একজন বর্ণিল ক্রিকেটারই বিদায় নিচ্ছেন না, উইকেটকিপার হিসেবে দারুণ, ফিল্ডার হিসেবে আরও দুর্দান্ত, ব্যাটসম্যান হিসেবে ভয়ঙ্কর ৯৯ টেস্টে ৩৮.৩৮ গড় ও ৬৩.৭১ স্ট্রাইকরেটে ৬২৭৩ রান, ২৫৪ ওয়ানডেতে ৩০.৩০ গড় ও ৯৫.০৩ স্ট্রাইকরেটে ৫৯০৯ রান কিংবা ৭১টি টি২০-তে ৩৫.৬৬ গড় ও ১৩৬.২১ স্ট্রাইকরেটে ২১৪০ রান করা একজন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানের কথাই মনে করিয়ে দেবে। মনে করিয়ে দেবে, তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করা নয়জনের অন্যতম এ আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানই নিউজিল্যান্ডের পক্ষে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে সর্বোচ্চ ৩০২ রানসহ চারটি দুই শতাধিক রানের ইনিংস যারা খেলেছেন, তাদের একজন তিনি। এসবে লেখা থাকবে না, কী অসাধারণ অধিনায়কও ছিলেন তিনি। গত দুই বছরে ২৯ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ১১টিতে জয়_ তাতেও কিছু লেখা নেই! ব্যাটে আক্রমণ, নেতৃত্বে আক্রমণ_ আক্রমণ, আক্রমণ আর আক্রমণই তার ক্রিকেটীয় ধ্যানধারণার শেষ কথা!
সাম্প্রতিক সময়ে বড় ক্রিকেটারদের অবসর নেওয়ার হিড়িক পড়ে গেছে। ৩৪ বছর বয়সে এই তো সেদিনই অবসরে গেলেন ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম সেরা অধিনায়ক অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল ক্লার্ক। ফর্ম আর চোটের কারণে একপ্রকার বাধ্য হয়েই চলে গিয়েছিলেন ক্লার্ক। অথচ ম্যাককুলামের এমন কোনো সমস্যা ছিল না। তবু এই ৩৪ বছর বয়সে তিনিও চলে যাচ্ছেন।
কাকতালীয় হলো, গত অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজ নিজ দেশ তাদের নেতৃত্বেই ফাইনালে খেলেছিল। ফাইনালটা ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া জিতলেও কিউইদের ক্রিকেট ইতিহাসেরই সেরা সাফল্য ছিল এই রানার্সআপ ট্রফি। অবশ্য, কেউ কেউ ফাইনালের নিউজিল্যান্ডের চেয়েও এগিয়ে রাখবেন টুর্নামেন্টজুড়ে এ দেশের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটকে, যার স্রষ্টা ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, উদ্ভাবনী আর চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক নেতৃত্বে একজন ম্যাককুলাম আসলে ওয়ানডে ক্রিকেটটাকেই পুনর্জীবিত করে দিয়েছেন। হার-জিত, চ্যাম্পিয়ন-রানারআপ এসব তুলে রেখে ২০১৫ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বোধহয় এটাই। সন্দেহাতীতভাবেই এমন একজন অধিনায়ককেও মিস করবে বিশ্বক্রিকেট। তার বদলে টি২০ বিশ্বকাপে কিউইদের নেতৃত্ব দেবেন কেন উইলিয়ামসন।
কেন যাচ্ছেন এখনই? দলে জায়গা নিয়ে তো প্রশ্ন ছিল না। অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে গতকাল বলেছেন, ‘আদর্শিকভাবে, আমি তথ্যটা সাধারণ্যে আনার জন্য ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতাম। তবে, টি২০ বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা মানে আমি এ ব্যাপারটা সন্দেহ ও গুজব ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম না, যেটা আমি এড়াতে চেয়েছিলাম। আমি ব্ল্যাক ক্যাপসদের হয়ে নেতৃত্ব দিতে ও খেলতে পেরে আনন্দিত। তবে, সব ভালোরই একটা শেষ আছে। দেশের হয়ে খেলতে গিয়ে বিস্ময়কর যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।’
শ্রীলংকাকে দু’দিন আগেই দুই টেস্টের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছেন। তার নেতৃত্বে ঘরের মাঠে টানা ১৩ টেস্টে অপরাজিত নিউজিল্যান্ড। ব্যক্তিগত রেকর্ড গড়েছেন। একশ’টি ছক্কা হাঁকিয়ে টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানো ব্যাটসম্যানদের তালিকায় শীর্ষে বসেছেন। তার চেয়েও বড় রেকর্ড হয়েছে সর্বশেষ টেস্টে। টস করতে নেমেই প্রথম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকের পর বিরতিহীনভাবে ৯৯টি টেস্ট খেলার বিরল রেকর্ড গড়েছেন। সবাই যখন অপেক্ষা করছেন, ফেব্রুয়ারিতে হবে সেই বিরল রেকর্ড_ টানা একশ’ টেস্ট খেলবেন ম্যাককুলাম, ঠিক তখনই তিনি অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন!
বিদায়ের বিষণ্নতার মধ্যেও একটাই সুখবর, রেকর্ডটা গড়ার পর নিজের ১০১তম টেস্টে, ঘরের মাঠ ক্রাইস্টচার্চে বিদায় নিচ্ছেন তিনি! সৌজন্যে : সমকাল