Skip to content

বিশ্ব নেতাদের গাড়ি

তানভীর আহমেদ
নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস নেই। চলাচলের জন্য নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী বিশ্ব নেতাদের বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা করে থাকে। তাদের গাড়িগুলোতে ব্যবহার করা হয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ আর্মার (বর্ম) ও আপদকালীন উপকরণ তাদের গাড়িগুলোকে আলোচনায় তুলে আনে। বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য একেবারেই নিজস্ব নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সংযোজন করা হয় যা দ্বিতীয় কোনো গাড়িতে নেই। এই বিশেষ গাড়িগুলো ছোট, বড় সন্ত্রাসী হামলায় যেমন গাড়ির অভ্যন্তরের যাত্রীকে সুরক্ষিত রাখে তেমনি অল্প মাত্রার পাল্টা আক্রমণ করতে পারে। একাধিক মডেল ব্যবহার, প্রয়োজনে এমনকি ভিন্ন মডেলের গাড়িও বিশ্ব নেতারা ব্যবহার করেন। এই গাড়িগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত উন্নততর করা হয়ে থাকে। এ ছাড়াও নিরাপত্তার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো সবসময়ই গোপন রাখা হয়।

Leaders-Car

সেরা অস্ত্রকেও রুখে দেয় বারাক ওবামার ‘বিস্ট’

বারাক ওবামা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি তিনি। বিশ্ব রাজনীতির কলকাঠি নাড়েন তিনি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশে দেশে মার্কিন হামলার ঘোষণাটিও আসে তার কাছ থেকে। তার নিরাপত্তার ব্যাপারে তাই সর্বোচ্চমাত্রা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। ওবামা যে গাড়িটি ব্যবহার করেন তার কোড নেম ‘দি বিস্ট’। গাড়ির ভিতর ও বাহির সবখানেই নিরাপত্তাকেই দেওয়া হয়েছে প্রাধান্য। সর্বাধুনিক যোগাযোগ-ব্যবস্থা গাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিদেশে গেলেও গাড়িটি সঙ্গে নিয়ে যান। গাড়িতে বসতে পারেন সাতজন। বর্তমান প্রেসিডেনশিয়াল লিমুজিন ব্যবহূত হচ্ছে ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে। কালো রঙের লিমুজিন-ঘরানার গাড়িটির নির্মাতা জেনারেল মোটর্স। দ্য বিস্ট নামে পরিচিত হলেও এটিকে ‘ক্যাডিলাক ওয়ান’ বা ‘লিমো ওয়ান’ বলে ডাকা হয়। সাধারণভাবে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেট কার বলা হয়। ক্যাডিলাক মডেলের চিহ্ন বহন করলেও গাড়িটির বহু অংশই শেভ্রলে কোডিয়াক ট্রাকের থেকে নেওয়া।

গাড়িটির স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, টাইটেনিয়াম ও সিরামিক দিয়ে তৈরি। দরজায় আট-ইঞ্চি পুরু স্টিল প্লেটের বর্ম রয়েছে। একই ধরনের বর্ম যুদ্ধ ট্যাঙ্কে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি বুলেট থেকে রকেট, আইইডি হামলা— সব প্রতিরোধ করতে সক্ষম। গাড়িটির জানালার কাচও পাঁচ-ইঞ্চি পুরু বহুস্তরবিশিষ্ট। যে কারণে স্টিলের বর্ম ও কাচ মিলিয়ে বিস্টের দরজার ওজন আর একটি বোয়িং ৭৫৭ বিমানের দরজার ওজন প্রায় সমান। চালকের দরজার কাচ তিন ইঞ্চি পর্যন্ত ছাড়া আর কোনো জানালা খোলা যায় না। ফলে, রাসায়নিক ও জৈবিক হামলা হলেও প্রেসিডেন্ট অক্ষত থাকবেন। গাড়ির চেসিজের ওজন প্রায় ৬,৩৫০ কিলোগ্রাম। পুরো গাড়ির ওজন প্রায় ৮ টন। শুধু গাড়ির চেসিজের নয়, তার তেলের ট্যাঙ্কও আর্মার-দিয়ে মোড়া। তাই এটিতে তাক করে কোনো হামলা হলেও খুব বড় রকমের ক্ষতি হবে না। এমনকি ফুয়েল ট্যাঙ্ককে মুড়ে থাকে একটি ফোমের জ্যাকেট। যাতে কোনো কারণে আগুন ধরে গেলেও তেলের ট্যাঙ্কে কোনো বিস্ফোরণ ঘটবে না। গাড়ির চাকাগুলো বুলেটপ্রুফ। ফলে কোনোভাবে তাতে ফুটো হবে না, বা হাওয়া বের হবে না। যদিও বা কোনোভাবে সে রকম পরিস্থিতি হয়ও, বা চাকার রবার খুলে গেলেও, তার স্টিলের রিমের সাহায্যেই প্রেসিডেন্টের গাড়ি নিজস্ব গতিতে ছুটতে পারবে। গাড়ির ডিকিতে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার জন্য রয়েছে টিয়ার গ্যাস, শটগান, অক্সিজেন সিলিন্ডার, প্রেসিডেন্টের রক্তের গ্রুপের মানানসই রক্তের পাউচ, আপদকালীন মেডিকেল কিট, নিজস্ব অত্যাধুনিক অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা। গাড়ির চালকের আসনে থাকেন ইউএস সিক্রেট সার্ভিসের অফিসার। যিনি এই গাড়ি চালাতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ওই বিশাল ও ভারী গাড়ির মুখকে মুহূর্তের মধ্যে উল্টো অভিমুখে ঘোরাতে তিনি সিদ্ধহস্ত। চালকের সুবিধার জন্য গাড়িতে রয়েছে নাইট-ভিসন ক্যামেরা, ইনফ্রা-রেড সেন্সর। তাই নিকষ আঁধার হোক বা ধোঁয়ায় ভরা পরিবেশ কোনো পরিস্থিতিতেই গাড়ি চালাতে অসুবিধে হবে না। গাড়িতে রয়েছে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। রয়েছে বিশেষ জিপিএস প্রযুক্তি, ওয়াই-ফাই ও স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে যে কোনো সময়ে গাড়ি থেকেই ভাইস-প্রেসিডেন্ট, পেন্টাগন, সামরিক কর্তা ও বিদেশি রাষ্ট্র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে পারেন ওবামা।

Leaders-Car2

রকেট হামলার পরোয়া নেই পুতিনের গাড়ির

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সারা বিশ্ব যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতায় কাঁপছে তখন নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপস নেই পুতিনের গাড়ির বেলাতেও। বলা হয়ে থাকে, গাড়ি জগতের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভূতপূর্ব সম্মিলন রয়েছে পুতিনের ব্যক্তিগত গাড়িটিতে। নিরাপত্তার কারণে তার ব্যবহূত গাড়ির বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো রহস্যে রয়ে গেছে। যতটুকু বিশ্ব মিডিয়ায় এসেছে তাতে জানা যায়, এটি রাসায়নিক অস্ত্র অনায়াসে ঠেকিয়ে দিতে পারে। রকেট হামলাতেও নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রযুক্তি এটিকে অক্ষত রাখতে সক্ষম। গাড়ির ভিতরে অবস্থানকারী ব্যক্তি অন্তত সাত দিন পৃথিবীর সবচেয়ে সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছেন এমন ব্যবস্থা এটিতে রয়েছে। একথা প্রচলিত, তার গাড়ি সামনের দিকে ও পেছনের দিকে পাঁচ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে ছুটতে পারে। প্রয়োজনে গাড়িটি দুদিক থেকেই শত্রুপক্ষের সন্ত্রাসী হামলার জবাব দিতে সক্ষম। খুব অল্প জায়গায় ইউটার্ন সক্ষমতা গাড়িটিকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। তার গাড়ি তৈরি ও নিরাপত্তা প্রযুক্তিবিষয়ক তথ্যগুলো সর্বোচ্চ সুরক্ষায় রক্ষণ এবং এগুলো নিয়মিত উন্নত থেকে উন্নততর করা হয় যেন সহজেই শত্রুকে ফাঁকি দেওয়া যায়।

Leaders-Car3

গাড়ি যেন অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের বডিগার্ড

জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় উপরের দিকেই থাকেন। সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারী মেরকেল অন্তত দুটি বিশেষ লিমুজিন ব্যবহার করে থাকেন। তবে তাকে অডি৮ ৬.০এল গাড়িতে বেশি দেখা যায়। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে এই গাড়ির জন্য। বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এই লিমুজিন ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সমুচিত জবাব দিতে সক্ষম। গাড়ির বডিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ অ্যালুমিনিয়াম। এর দরজা, উইন্ডশিল্ড এবং রেয়ার উইন্ডো বুলেটপ্রুফ। গ্রেনেড হামলায় গাড়িটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেকে সুরক্ষিত করতে সক্ষম। নির্দিষ্ট নিরাপত্তা বেষ্টনী থেকে গাড়িটি কোনো দুর্ঘটনায় সরে গেলে স্বল্পমাত্রার হামলা চালাতে পারবে। উচ্চ মাত্রার আগুন গাড়িটিকে কিছুই করতে পারবে না। গাড়ির ভিতরে বিলাসিতার সব ব্যবস্থা সংযোজন করা হয়েছে। বলা হয়, মেরকেলের গাড়িটি সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও দক্ষ বডিগার্ড।

Leaders-Car4

সবচেয়ে সুরক্ষিত নরেন্দ্র মোদির লিমুজিন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের তৈরি গাড়ি ব্যবহার করেন না। তার গাড়িটি সর্বাধিক সুরক্ষিত বিএমডব্লিউ ৭ সিরিজের ৭৬০ এল আই লিমুজিন। দেশের বাজারে যার দাম ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো। প্রধানমন্ত্রী মোদির জন্য আনা এই গাড়িটিতে তিন ধরনের সংকট নিরাপদে পেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথমত, রাস্তায় যদি কোনোভাবে ভারী অথচ ভোঁতা কোনো অস্ত্র দিয়ে গাড়িতে আঘাত করা হয় অথবা ৪৪ ম্যাগনাম পর্যন্ত ক্যালিবারের কোনো দেশি পিস্তল থেকে গুলি করা হয় তা প্রতিরোধ করতে পারবে গাড়িটি। দ্বিতীয়ত, পরিকল্পিতভাবে যদি একে-৪৭ এর মতো অত্যাধুনিক মেশিনগান থেকে গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় তা হলেও সেটি রুখে দেবে গাড়ির বিশেষ বুলেটপ্রুফ সিস্টেম। তৃতীয়ত, যদি যাত্রাপথে কোনোরকম বিস্ফোরক থাকে বা এমন কোনো অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকে যা বুলেটপ্রুফ নিরাপত্তাকেও হার মানাতে পারে তেমন আক্রমণও প্রতিহত করতে পারবে এই গাড়িটি। মোদির নতুন বাহনের চাকা ফুটো হয়ে প্রায় মাটিতে মিশে গেলেও নিজের থেকেই মেরামত করে নেওয়ার ক্ষমতা আছে গাড়িটির। এ ছাড়াও রয়েছে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা জানানো বিশেষ অ্যালার্ম। সঙ্গে এমনই একটি ইন্টারকম ব্যবস্থা যা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে গাড়ির দরজা বা জানালা না খুলেই যে কোনো জায়গায় যোগাযোগ করতে দেবে। বিশেষ ভি ১২ ইঞ্জিনের সাহায্যে মোদির বাহন মাত্র ৬.২ সেকেন্ডে শূন্য থেকে ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতি তুলতে পারে। গাড়ির সর্বাধিক গতি ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার।

Leaders-Car5

রানীর গাড়ির আভিজাত্য

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ঐতিহ্যমণ্ডিত বেন্টলি স্টেট লিমুজিন ব্যবহার করে থাকেন। বিশ্বের অন্যতম অভিজাত গাড়ি এটি। রাজকীয় আভিজাত্য এই গাড়িটিকে অনন্য করেছে। একমাত্র রানীর সম্মানেই নিজস্ব প্রযুক্তিতে এই মডেলের গাড়ি তৈরি করা হয়ে থাকে। স্টেট লিমুজিন ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। এটি সাধারণ বেন্টলি থেকে দৈর্ঘ্যে অন্তত আড়াই ফুট বেশি, এক ফুট উঁচু এবং ৩ ইঞ্চি প্রশস্ত। এটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা গাড়ির ভিতরে রানীকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা প্রদান করে। ‘এয়ারটাইট লক সিস্টেম’ রাসায়নিক অস্ত্র থেকে নিরাপদ রাখে। গাড়িটি খুব ভারী অস্ত্রের হামলা মোকাবিলা করতে সক্ষম। ‘লায়ন অর্নামেন্ট’ ব্যবহার করে গাড়ির রাজকীয় গাম্ভীর্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। এটাতে বিশেষ খোদাই করা নকশা রয়েছে যা রানীর সম্মানে বিশ্বের কোনো প্রান্তেই ব্যবহার করা হয় না। ২০০৯ সালে এসে ঘোষণা দেওয়া হয় রানীর গাড়ি বায়োফুয়েল ব্যবহার করবে। শুধু রানীই এই গাড়িটি ব্যবহার করে থাকেন। সৌজন্যে : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *