
আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই। অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের ‘বিছনাকান্দি’।
শাহ মতিন টিপু
বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘সকলের জন্য পর্যটন : সার্বজনীন পর্যটনের অভিগম্যতা’। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডাব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর ২৭ সেপ্টেম্বর দিবসটি বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকারও ২০১৬ সালকে ‘পর্যটন বর্ষ’ ঘোষণা করেছে।
পর্যটন সক্ষমতা-সংক্রান্ত ২০১৩ সালের আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩। ২০১২ সালে ১৪৪টি দেশের মধ্যে ১১৮ এবং ২০১১ সালে ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২৯। এই তালিকার শীর্ষে আছে সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ। এশিয়ার সিঙ্গাপুর, জাপানও আছে এই তালিকায়।

বিছনাকান্দি যেতে নৌকায় উঠছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী নিয়েছেন।
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘সচ্ছল, অসচ্ছল, বয়স্ক, শিশু ও প্রতিবন্ধী সকলের ভ্রমণ সহজসাধ্য করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন,তরুণ ও যুবাদের জন্য স্বল্প খরচে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারধর্মী সেবা ও নিরাপদ ভ্রমণের ব্যবস্থা নিতে হবে।’

নীল আর সবুজ পাহাড়ের ধারে বিছিয়ে আছে অপরূপ বিছনাকান্দি।
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরতে সরকার ২০১৬ সালকে ‘পর্যটন বর্ষ’ ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে পর্যটন কর্পোরেশন গঠন করেন। তিনিই উপলব্ধি করেছিলেন বাংলাদেশ পর্যটনের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় একটি দেশ।’

বিছনাকান্দির উচ্ছল পানিতে দলবেঁধে স্নান।
প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলাদেশ পর্যটন সংস্থা দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যটন দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য- বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভ্রমণকারীদের সঙ্গে পর্যটন কেন্দ্রের সেতুবন্ধন গড়ে তোলা। এছাড়া, পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া এ দিবসের লক্ষ্য।

ধোঁয়াশা পাহাড়ের পটভূমিতে লাল মাটি আর সবুজ মাঠে ভরা বিছনাকান্দির মনোরম গ্রামীণ জীবন।
১৯৭০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সংস্থাটির বার্ষিক সম্মেলনে এর নাম, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য পুনর্মূল্যায়ণ করা হয়। তখন থেকে এর নাম ‘বিশ্ব পর্যটন সংস্থা’ করার বিষয়ে সদস্যদের মধ্যে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন নামে ১৯৭৪ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি। ১৯৮০ সালের বার্ষিক সম্মেলনে এই সংস্থা গঠন হওয়ার দিবসে অর্থাৎ ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী পর্যটন দিবস পালনের বিষয়ে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়।

পাথরের মাঝ দিয়ে ছলাৎ-ছলাৎ গড়িয়ে চলেছে জলধারা।
এদিকে বাংলাদেশ পর্যটন বর্ষ ২০১৬ উৎসবকে সামনে রেখে ও বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকার খিলক্ষেত ফ্লাইওভার সংলগ্ন ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী ৫ম এশিয়ান ট্যুরিজম ফেয়ার। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে ট্যুরিজম মেলার উদ্বোধন করবেন।

পাহাড়ের কোলঘেঁষে নৌকায় চলতে চলতে প্রাকৃতিক শোভা দর্শন।
এ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থানসমূহের বিভিন্ন পর্যটন সেবার সমন্বয় ঘটবে এই মেলায়। থাকবে আসন্ন পর্যটন মৌসুমের বিভিন্ন আকর্ষণীয় ভ্রমণ অফার, হোটেল বা প্যাকেজ বুকিংয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা।

পাহাড়ের ধারে শুধু পাথর আর পাথর। সে অন্য এক জীবন।
মেলায় অংশগ্রহণ করবে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল শপ, থিমপার্ক ও বিনোদনের আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। মেলায় কমিউনিটি বেইজ ট্যুরিজম প্রদর্শনী, পর্যটন বিষয়ক সেমিনার, শিশুদের জন্য ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ শিরোনামে আর্ট কম্পিটিশন, যুব পর্যটনকে উৎসাহিত করতে ইয়ুথ এন্ড এ্যাডভেন্সার ট্যুরিজম বিষয়ক আলোচনার আয়োজন করা হয়েছে। সূত্র: রাইজিংবিডি