
DTC President Mostafizur Rahman on Shillong peak
মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান
ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিভেজা রূপ দেখতে হলে সেখানে যেতে হবে ভরা বর্ষায়। পাইনগাছ শোভিত অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণির ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় চোখে পড়বে ছোট ছোট গ্রাম, খণ্ড খণ্ড কৃষিজমি আর ফলের বাগান। এছাড়া দেখা যাবে পাথর এবং কয়লার খোলোমুখ খনি। শিলং থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরবর্তী চেরাপুঞ্জি (উচ্চতা ৪,২৬৭ ফুট) যাওয়ার পথেই খাসি পাহাড়ের নয়নভিরাম শোভা দেখে মন ভরে যাবে।
শিলং থেকে রওনা হওয়ার প্রায় পঞ্চাশ মিনিট পর ঝুলন্ত লোহার ব্রিজ পেরিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়বে। অদূরেই রয়েছে দুয়ানসিং সিয়েম ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে মাওডক ভ্যালির শোভা দৃষ্টিগোচর হয়। চেরাপুঞ্জির একটু আগেই পড়বে সোহরাবাজার। এখানে কিনতে পাওয়া যাবে কমলালেবুর মধু, দারচিনি আর চেরি ব্র্যান্ডি। শীতের মওসুমে পাওয়া যাবে কমলালেবু।
সোহরা থেকে চেরাপুঞ্জির দিকে এগিয়ে গেলেই দূর থেকে চোখে পড়বে রামকৃষ্ণ মিশনের ঘরবাড়ি এবং মন্দিরের চূড়া। এই অঞ্চলে শিক্ষার বিস্তার এবং সমাজসেবামূলক কাজে রামকৃষ্ণ মিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। আশ্রম পরিসরে রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন, বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং নৃতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা।
রামকৃষ্ণ মিশন দেখে পরবর্তী গন্তব্য নোহকালিকাই ফলস। এই জলপ্রপাতটি এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম বলে দাবি করা হয়।
চেরাপুঞ্জির অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো হলো ইকো পার্ক, বাংলাদেশ ভিউ পয়েন্ট, সেভেন সিস্টার ফলস, থাংখারাং পার্ক, নংগিথিয়াং ফলস ও মওসমাই কেভ।
চেরাপুঞ্জির রূপ, রস আর রহস্যকে পুরোপুরি উপভোগ করতে একটা রাত এখানে থাকতেই হবে। রাত্রিবাসের জন্য সেরা জায়গাটি হলো চেরাপুঞ্জি থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে লাইকিনসিউ গ্রামে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসোর্টস। একজন গাইডকে সঙ্গে নিয়ে পায়ে হেঁটে দেখে নেওয়া যাবে জঙ্গল, ঝরনা, নদী আর নদীর ওপর বিরাজমান অভিনব ডাবল ডেকার লিভিং রুটব্রিজ।
শিলং থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরবর্তী মওসিনরাম জায়গাটির অবস্থান চেরাপুঞ্জির পশ্চিমে। মওসিনরাম সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের স্থান রূপেই বিখ্যাত। মওসিনরামে বেড়াতে গিয়ে যেসব দর্শনীয় স্থান দেখার সুযোগ হয়, তাদের মধ্যে দুটি নাম বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। এদের মধ্যে একটি হলো ক্রেমমাওজুমবুইঁ এবং অপরটির নাম জাবরেম।
ক্রেমমাওজুমবুইঁ একটি প্রাকৃতিক গুহার নাম। একজন পথপ্রদর্শককে সঙ্গে নিয়ে এই গুহার ভিতরে প্রবেশ করা এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। মেঘালয়ের খাসি এবং গারো পাহাড়ে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য প্রাকৃতিক গুহা। এ পর্যন্ত আটশ’র বেশি গুহার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। জাকরেম জায়গাটি উষ্ণ প্রস্রবণের জন্য বিখ্যাত। স্থানীয় মানুষজনের বিশ্বাস, প্রস্রবণের পানিতে গোছল করলে নানারকম চর্মরোগ সেরে যায়। মওসিনরামের অন্য দুটি দেখার জায়গা হলো খ্রেং খ্রেং রক এবং রিতমাংসির ভিউ পয়েন্ট।
হাতে সময় থাকলে ঘুরে নিন এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিনং। শিলং থেকে দূরত্ব ৯০ কিলোমিটার। এখানে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে এবং রাস্তায় রাস্তায় বেতের তৈরি ডাস্টবিন রাখা আছে। মাওলিনং গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে ছোট-বড় ফুলের বাগান। গ্রামের প্রায় মাঝখানে রয়েছে সুন্দর দেখতে একটি চার্চ। সব মিলিয়ে মাওলিনং এমনই এক শান্তশ্রীসম্পন্ন গ্রাম, যেখানে কোলাহলবর্জিত, দূষণহীন পরিবেশে দু একটা দিন নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেওয়া যায়।
মাওলিনং গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে থাইলাং নদী। মাওলিনংয়ের একটি প্রধান আকর্ষণ হলো লিভিং রুটব্রিজ, যার ওপর দিয়ে দিব্যি নদী পারাপার করা যায়। নদীর দুইতীরে অবস্থিত গাছের শিকড় গুচ্ছকে যুক্ত করে তৈরি করা এই অভিনব সেতুবন্ধন দেখে সত্যিই তাক লেগে যাবে।
কীভাবে যাবেন
সিলেটের তামাবিল সীমান্তে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও ডাউকি বর্ডারে ভারতের ইমিগ্রেশন শেষ করে ট্যাক্সি কিংবা সুমো টাটা গাড়িতে পৌঁছান ৮৩ কিলোমিটার দূরবর্তী শিলংয়ে। ট্যাক্সি ভাড়া পড়বে ১,৫০০ থেকে ১,৮০০ রুপি। যেতে পারবেন চারজন। সুমো টাটার ভাড়া পড়বে ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ রুপি। যেতে পারবেন ৮-১০ জন।
কিভাবে বেড়াবেন
শিলং, চেরাপুঞ্জি, মওসিনরাম, নারটিয়াং এবং মাওলিনং বেড়ানোর ভালো উপায় হলো মেঘালয় পর্যটন দপ্তর আয়োজিত কন্ডাক্টেড ট্যুরে অংশ নেওয়া। গাইডের তত্ত্বাবধানে এই ট্যুর শুরু হয় পুলিশবাজারের জেল রোডে অবস্থিত ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টার থেকে। ৭-৮ জনের দল হলে সুমো টাটা গাড়ি ভাড়া করাই ভালো। এর ফলে ট্যুরিস্ট প্লেসগুলোর তালিকা নিজের ইচ্ছানুসারে তৈরি করা যাবে। পুলিশবাজারের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে ট্যাক্সিভাড়ার তালিকা দেওয়া আছে।
চেরাপুঞ্জির খাওয়া দাওয়া
চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসোর্টে থাকলে স্থানীয় খাদ্য জাদো স্টেম চিকেন ও চিকেন নেইয়ং অবশ্যই খেয়ে দেখবেন। জাদো স্টেম চিকেন হলো স্থানীয় চিকেন বিরিয়ানি আর চিকেন নেইয়ং হলো কালো তিল সহযোগে প্রস্তুত চিকেনের পদ। এই দুটি পদ একসঙ্গে খাওয়াই ভালো। অবশ্য যারা হালাল-হারাম বাছাই করেন তারা চিকেন ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক জবাই করা হয়েছে কি-না আগেই জিজ্ঞাসা করে নিবেন।
মনে রাখবেন
চেরাপুঞ্জির ডাবল ডেকার রুট ব্রিজে পৌঁছতে সকালে সিঁড়ি বেয়ে ২,৫০০ ফুট নিচে নামতে হবে। আবার বিকেলের মধ্যে ২,৫০০ ফুট সিঁড়ি বেয়ে উঠে আসতে হবে। হাঁটুর জোর থাকলে তবেই এ পথে এগাবেন। ডাবল ডেকার রুট ব্রিজের সামনেই ঝরনার পানি পড়ে কু- তৈরি হয়েছে। এখানে গোছল করে পথের ক্লান্তি দূর করতে পারেন। ঝরনার পাশে কাপড়-জামা বদলানোর ছোট ঘর আছে।
কোথায় থাকবেন
চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসোর্ট, স্ট্যার্ন্ডড ডাবল রুমের ঘরের ভাড়া ৩,০৬৫ রুপি, ডিলাক্স রুমের ভাড়া ৩,৩০০ রুপি, এক্সিকিউটিভ রুমের ভাড়া ৩,৮২৫ রুপি। এই খরচের মধ্যে ব্রেকফাস্টে অন্তর্ভূক্ত। পালা রিসর্ট, ভাড়া ব্রেকফাস্টসহ ৪,৯৪০-৫,৫০০ রুপি। থাকতে পারেন শিলংয়ের পুলিশবাজারেও। ভালোমানের প্রচুর হোটেল রয়েছে এখানে। ডাবল রুমের ভাড়া ৮০০ থেকে ৪,০০০ রুপির মধ্যে।
প্যাকেজ
চার দিন চার রাতের প্যাকেজ ট্যুরে যেতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ঢাকা ট্যুরিস্ট ক্লাবের সাথে। প্রায় প্রতি মাসে এই ক্লাবের আয়োজনে শিলং-চেরাপুঞ্জিতে গ্রুপ ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। ভিসাসহ সব ব্যবস্থা ক্লাব করে থাকে। খরচ সব মিলে ১৬,৯০০/= টাকা। বিস্তারিত তথ্যের জন্য ০১৬১২৩৬০৩৪৮ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। ভিজিট করতে পারেন dhakatouristclub.com এই ঠিকানায়।
লেখক: ঢাকা ট্যুরিস্ট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট।
Pingback: ঈদের বন্ধে শিলং-চেরাপুঞ্জি | Dhaka Tourist Club
Pingback: শিলং-চেরাপুঞ্জির ভ্রমণ খরচ কমলো স্পট বাড়লো | Dhaka Tourist Club
Pingback: Dhaka Tourist Club
Pingback: ২ ফেব্রুয়ারি শিলং-চেরাপুঞ্জি-সোনংপেডাং ফেমিলি ট্যুর | Dhaka Tourist Club
Pingback: ২ ফেব্রুয়ারি শিলং-চেরাপুঞ্জি-শ্নোনেংপেডেং ফেমিলি ট্যুর | Dhaka Tourist Club
Pingback: শিলং-চেরাপুঞ্জি-জৈন্তা হিলস ঈদ ট্যুর | Dhaka Tourist Club
Pingback: এবারের চেরাপুঞ্জি ট্যুর ভরা বর্ষায় | Dhaka Tourist Club
Pingback: চেরাপুঞ্জি-শিলং ঈদ ট্যুরে থাকছে নতুন ও আকর্ষণীয় অনেক কিছু | Dhaka Tourist Club
Pingback: ঈদে চলুন শিলং-চেরাপুঞ্জি ঢাকা ট্যুরিস্টের সাথে | Dhaka Tourist Club
Pingback: বিশেষ গ্রুপ ট্যুরে শিলং-চেরাপুঞ্জি চলুন নভেম্বরের ১ তারিখে | Dhaka Tourist Club