বয়স মাত্র দশ বছর। কিন্তু অসাবধানতার সুযোগে কারও পকেট থেকে মোবাইল তুলে নিতে তারা সিদ্ধহস্ত। রীতিমতো পেশাদারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তারা। এই কাজের জন্য মাসে দশ হাজার রুপি ‘বেতন’ও পেত। সম্প্রতি ইডেন গার্ডেন্সে আইপিএল-এ কলকাতা নাইট রাইডার্স-এর খেলায় টিকিট কেটে মাঠে ঢুকে দর্শকদের পকেট থেকে পাঁচটি মোবাইল তুলে নেয় ওরা।
কিন্তু শেষরক্ষা হল না। বৃহস্পতিবার এই দলের তিন জন ধরা পড়ে গেল নিউ টাউনের সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড থেকে। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রে খবর, প্রথমে রাজা দে নামে এক মোবাইল চোরকে গ্রেফতার করে বিধাননগর পূর্ব থানার পুলিশ। তাকে জেরা করে জানতে পারে, নিউ টাউনে দলের কয়েক জনের আসার কথা। সেই মতো ফাঁদ পেতে মহম্মদ ওয়াসিম, সাদ্দাম হোসেন ও আর এক বালককে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশের দাবি, সাদ্দাম ও ওয়াসিমকে জেরা করে জানা গিয়েছে, মোবাইল ছিনতাইয়ের কাজটি করানো হত মূলত বছর দশেকের বালকদের দিয়ে। তাদের অধিকাংশের বাড়ি আসানসোলে। সকলেই হতদরিদ্র। ভাল কাজ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের ঝাড়খণ্ডের তিনপাহাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হত। সেখানে মিলত চুরি, ছিনতাই, বিশেষত মোবাইল চুরির প্রশিক্ষণ। কী ভাবে ভিড়ের মধ্যে বুকপকেট থেকে মোবাইল তুলে নিতে হবে, কী ভাবেই বা গাড়িতে অসাবধানতাবশত মোবাইল রেখে গেলে সেখান থেকে ফোন তুলে নিতে হবে— এমন নানা প্রশিক্ষণ ওই বালকদের দেওয়া হত বলে জেনেছে পুলিশ। প্রশিক্ষণ-পর্ব শেষ হলে ওই বালকেরা চলে আসত কলকাতায়।
বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘ওই বালকেরা মোবাইল চুরি করে রাজার কাছে জমা দিত। রাজাই ছিল রিসিভার। সে এই চোরাই মোবাইলগুলি পাঠিয়ে দিত ওয়াসিম ও সাদ্দামের কাছে। চোরাই মোবাইলগুলি এর পরে পাচার হত বাংলাদেশে।’’ কিন্তু এই কাজে দশ বছরের বালকদেরই লাগানো হত কেন? পুলিশের দাবি, ওয়াসিম জানায়, ছোট ছেলেরা যেহেতু সহজেই ভিড়ে মিশে যেতে পারে, তাই তাদের দিয়ে এই কাজ করানো সহজ হত।
পুলিশ জানায়, এখনও পর্যন্ত এক জন বালক ধরা পড়েছে। জেরায় পুলিশ জেনেছে, তারা কয়েক জন মিলে এই কাজ করত। বিনিময়ে মাসে বেশ কয়েকটি ‘অপারেশন’ করতে হত তাদের। ধৃত বালকটি আরও জানিয়েছে, মাসের প্রথম সপ্তাহেই তাদের হাতে দশ হাজার রুপি দিয়ে দেয়া হত।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ওই দলটির কাছ থেকে ৩৮টি মোবাইল ও ১০টি ল্যাপটপ উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে ১৫টি মোবাইল মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা প্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই। দলের বাকি দুষ্কৃতীদের খোঁজ চলছে।
সূত্র : আনন্দবাজার