বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে ভারতের মায়াময় রাজ্যটি প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি। সবুজের গালিচায় পরিপূর্ণ জঙ্গল, পাহাড়, অ্যাডভেঞ্চার আর উপজাতীয় সংস্কৃতি— সব মিলিয়ে নানা রঙে সমুজ্জ্বল নাগাল্যান্ড। অদ্ভুত মায়াময় রাজ্য আর বিচিত্র সংস্কৃতিতে গাঁথা নাগা জনগোষ্ঠীর দেশ নাগাল্যান্ড। জানাচ্ছেন— আবদুল কাদের
ভারতের ‘সেভেন সিস্টারস’ বা সাত বোনের নাম শুনেছেন? আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল-কে ‘সেভেন সিস্টারস’ বলা হয়। তন্মধ্যে নাগাল্যান্ড অন্যতম। এর প্রতিটি পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে সবুজের গালিচা। দূর থেকে হাতছানি দেয় বিস্ময়, অ্যাডভেঞ্চার আর উপজাতীয় সংস্কৃতি। দুর্গম পাহাড়ি পথ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অনাবিল। শান্তি ও নির্মলতার প্রতীক নাগাল্যান্ড। হিমালয়ের পাদদেশে উপজাতীয় সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে লালিত ভারতের একটি সুন্দর রাজ্য।
► বৈচিত্র্যের নাগাল্যান্ড দু’শ বছর আগের কথা। ১৮৯০ সালে ভারতে আলাদা অঙ্গরাজ্যরূপে পৃথিবীর বুকে নাগাদের উত্থান। ১৯৬০ সালে ভারত সরকার, নাগাল্যান্ডকে ভারতের এক স্বশাসিত রাজ্য গঠনে সম্মতি দেয়; ১৯৬৩ সালে রাজ্যটি সরকারিভাবে স্বীকৃতি অর্জন করে। অদ্ভুত এ জনগোষ্ঠী আজও তাদের চিরায়ত সংস্কৃতির কোটর ছাড়েনি। বিচিত্র্য গ্রামটিতে ৩০/৩৫টি উপজাতির বসবাস।
মজার বিষয় হলো, এক উপজাতি অন্য উপজাতির ভাষা বোঝে না। হিন্দি নয়, ইংরেজি যেন তাদের মূল ভাষা।
পৃথিবীজুড়ে নাগল্যান্ড যেন বিস্ময়। প্রতি বছর আগস্ট-অক্টোবরে নাগাল্যান্ডের জাটিঙ্গা গ্রামে বৈরি আবহাওয়ায় পাখিদের স্বেচ্ছামৃত্যু ঘটে। যদিও পাখিদের এই আত্মাহুতির বিষয়টিকে নাগারা ঈশ্বরের দান বলে মনে করে!
► ভিসা প্রসেসিং: ভারতের ভিসার জন্য সব তথ্য প্রদান করতে হয়। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ডলার এনডোর্সমেন্ট, ক্রেডিট কার্ডের ফটোকপি, বিস্তারিত বিবরণীপত্র ইত্যাদি। প্রয়োজনে ভিজিট করতে পারেন www.ivacbd.com.
► কখন যাবেন
সারা বছরই নাগাল্যান্ড ভ্রমণ করা যায়। তবে, অক্টোবর থেকে মে মাস পর্যন্ত ভালো সময়। ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি বেশ ঠাণ্ডা পড়ে এখানে।
► কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে কলকাতা কিংবা শিলং হয়ে গুয়াহটি। গুয়াহটি থেকে নাগাল্যান্ড চার ঘণ্টার দূরত্ব। বিমানে কিংবা ট্রেনে ডিমাপুর। বাইরোডে গুয়াহটিতে ডিমাপুর এবং কোহিমার বহু বাস সার্ভিস রয়েছে।
► কোথায় থাকবেন
নাগাল্যান্ডে পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সব ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু নিঃসঙ্গ এ শৈলশহরে পাঁচ তারকা বিলাসবহুল হোটেল আশা করা বোকামি।
► যাতায়াত
ভারতের নাগাল্যান্ডের রাজ্যে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ভাড়া করা ট্যাক্সি ভালো বাহন। শহরটিতে ট্যাক্সি ছাড়াও গাড়ি ও শেয়ার্ড জিপ রয়েছে।
► ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
নাগাল্যান্ডের অধিবাসী নাগারা ইন্দো-মোঙ্গলীয় বংশোদ্ভূত, এটি সেই জাতি যাদের উপস্থিতি খ্রিস্টপূর্ব দশম শতকের আগে পাওয়া গিয়েছিল। নাগাল্যান্ডের ১৬টি আদিবাসী গোষ্ঠীর সংস্কৃতির মেলবন্ধনে প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয় ‘হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল’। ২০০০ সালে উৎসবটি শুরু হয়েছিল। ‘হর্নবিল পাখি’, সমগ্র নাগাল্যান্ডে খুব জনপ্রিয় উৎসব। আদিবাসী লোকগাথা জুড়ে রয়েছে এই পাখি উৎসবের। নাচ-গান ছাড়াও এই উৎসবের বাড়তি পাওয়া আদিবাসীদের হস্তশিল্প এবং নানান বিচিত্র খাবারের আয়োজন।
► নাগাল্যান্ডে কেনাকাটা
নাগাল্যান্ডকে হস্তশিল্প আর কারুশিল্পের ঐতিহ্য বলা চলে। এখানকার কাষ্ঠ, বেত, বাঁশ ইত্যাদি তৈজসপত্র পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। বাঁশ ও বেতের কঞ্চি দিয়ে তৈরি ঝুড়ি, ব্যাগ ও আসবাবপত্র এবং তুলা দিয়ে বোনা শাল ও জ্যাকেট পর্যটকদের নজর কাড়ে। রং, নকশা এবং অঙ্কনে রয়েছে নাগাদের চিরায়ত ঐতিহ্য। পণ্যগুলোকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ব্যবহার করে প্রাকৃতিক রঞ্জক, পুঁতি এবং শামুকের খোলস। এখানকার তাঁতশিল্প, কাষ্ঠখোদাই, মৃিশল্প, ধাতব শিল্প প্রভৃতিও বেশ জনপ্রিয়।
► দর্শনীয় স্থানসমূহ
নাগাল্যান্ডের আকর্ষণ তার প্রাকৃতিক অসাধারণ সৌন্দর্য। এই আদিবাসীদের ভূমি, তার নিজস্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দূষণমুক্ত পরিবেশ, সুদৃশ্য দৃশ্যপট এবং অতুলনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দ্বারা পর্যটকদের প্রলোভিত করে। বেশির ভাগ পর্যটক এখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আসেন। খোনোমা গেট ব্রিটিশদের ইতিহাসের সাক্ষী। খোনোমা আদিবাসীরা ব্রিটিশদের আক্রমণ থেকে গ্রাম সুরক্ষিত রাখতে এ দরজা নির্মাণ করেছিল। ২৪৩৮.৪ মিটার উচ্চতার জুকৌ উপত্যকার শৈল শহরটি বিস্ময়কর।
এখানকার ট্রেকিং বিশ্বজুড়ে সেরা, প্রাকৃতিক গুহা, পাহাড়, নদনদী পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এ ছাড়াও জাপফু চূড়ার উঁচু পাহাড়ি ঢাল ট্রেকিংয়ের জন্য আদর্শ।
চারুকলা, ইতিহাস, শিল্প, জাতিবিদ্যা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমাহার নাগাল্যান্ড মিউজিয়াম। রয়েছে তাদের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির বহু নিদর্শন।
নাগাল্যান্ডের ‘তুলি শহর’ তার অনন্য প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের প্রতীক। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের মোককচং জেলার তুলি শহরের নির্মল পারিপার্শ্বিক তার শান্তি ও সতেজতা দর্শনার্থীদের মন প্রফুল্ল করে তোলে।
নাগানিমোরা এই অঞ্চলে উপজাতীয় রোমাঞ্চকর খেলা আর ঐতিহ্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে সহজেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আশীর্বাদপ্রাপ্ত নাগানিমোরা সত্যিই প্রকৃতির অপরূপ নিদর্শন।
চাংতংগ্যা, মেলুরি, চুচুয়িমলাং এবং পঙ্গো গ্রাম আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান। স্থানটি পাখিদের অভয়ারণ্য। তা ছাড়া ফকিম এবং ইন্টাকি অভয়ারণ্য রাজ্যের অন্যতম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য।
অদ্ভুত মায়াময় রাজ্য আর বিচিত্র সংস্কৃতিতে গাঁথা নাগা জনগোষ্ঠীর দেশ নাগাল্যান্ড।
► নাগাল্যান্ডের ভ্রমণ পরামর্শ
০. বিদেশি পর্যটকদের পাসপোর্ট বহন করতে হয়। এটি পরিচয় প্রমাণপত্র হিসেবে কাজ করে।
০. নাগাল্যান্ডে গ্রীষ্মে হালকা পোশাক এবং শীতে ভারী পশমি পোশাক রাখতে হয়।
০. অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের অবশ্যই ট্রেকিংয়ের প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে বহন করতে হয়। সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন