এ রিয়াজ
টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষের ঐতিহকে কাজে লাগিয়ে সাফল্য পাওয়া সহজ- এমনই দাবি করতে পারে আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার কিছু প্রকল্প। প্রকৃতি ও পরিবেশের ক্ষতি না করে সেখানকার মানুষ আয় বাড়ানোর উপায় খুঁজে পেয়েছেন।
আইডিয়াটা সুইজারল্যান্ডের ক্রিস্টিয়ান ফাটারলাউস-এর মাথায় এসেছিল। ২০০৩ সালে তিনি প্রথমবার জাম্বিয়ানি গিয়ে সেখানকার মানুষ মোহামেদ ওকালার সঙ্গে আলাপ করেছিলেন। তারপর দুজনে মিলে ‘মেরিন কালচারস’ নামের সংগঠন চালু করেন। তখনই তারা বুঝেছিলেন, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ বেশ বিপজ্জনক। সংগঠনের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোহামেদ ওকালা বলেন, ‘চাকরি খোঁজার সময়ে মানুষ বোঝে, তারা সংগ্রাম চালাচ্ছেন। কিছু মানুষ ঝোপঝাড়ে ঢুকে জঙ্গল কাটেন, যেটা উচিত নয়। ফলে আরও বিপর্যয় আসছে। অর্থাৎ এখানকার মানুষের কোনো বিকল্প উপায়ে সমস্যা সমাধানের উপায় নেই।’
সংগঠনের আর এক সহপ্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টিয়ান ফাটারলাউস বলেন, ‘প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে আমি সেই সব নারীকে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম, যারা সামুদ্রিক আগাছা সংগ্রহ করেন। আমার খুব ভালো লেগেছিল, তারা শুধু শিকার ও সংগ্রহই করেন না, তারা চাষের কাজও করেন। কিন্তু যখন দেখলাম তারা কত আয় করছেন, তখন মনে হল- এমন কোনো সামুদ্রিক পণ্য থাকা উচিত যা এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানে সাহায্য করবে। তারা যথেষ্ট আয়ও করতে পারবেন।’
এক মাসেই এ দ্বীপের অধিবাসী কাজিয়া ওমর আলি ও নাসিরি হাসান হাজি সামুদ্রিক আগাছা বিক্রি করে প্রায় ৩০ ডলার আয় করেছেন। আজকাল কখনও একটি স্পঞ্জ বিক্রি করেই এত টাকা হাতে আসে। তবে নতুন কাজের জন্য তাদের সাঁতার শিখতে হয়েছে। কারণ স্পঞ্জের ফার্ম সমুদ্রতীর থেকে কয়েক’শ মিটার দূরে অবস্থিত। এক কিলোগ্রাম স্পঞ্জ দিনে এক টন পানি পাম্প ও ফিল্টার করে। স্পঞ্জ চাষি কাজিয়া ওমর আলি বলেন, ‘সামুদ্রিক ঘাসের চাষ খুবই কঠিন পরিশ্রমের কাজ। সব সময়ে ভিজা বস্তা বইতে হয়। স্পঞ্জ ফার্মে কখনও ভারি কাপড় পরা যায় না।’
এর চাহিদা খুবই বেশি। স্পঞ্জ ফার্মগুলো বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়াতে পারে। কিন্তু ‘মেরিন কালচারস’ টেকসই পদ্ধতিতে কাজ করতে চায়। সব চারাই নিজেদের উৎপাদন থেকে আসে। স্পঞ্জ তোলার জন্য প্রস্তুত হতে প্রায় এক বছর সময় লাগে। মোহামেদ ওকালা বলেন, ‘কারণ সমুদ্র আসলে জমির মতো। ফলন তুলে সেই জায়গায় বীজ বপণ না করলে সেগুলো হারিয়ে যাবে। ফলনের পর বীজ বপণ করলে বার বার উৎপাদন হবে।’
স্পঞ্জের এক সহজাত জীবাণুনাশক গুণ রয়েছে। তাই অসুস্থ মানুষ ও অ্যালার্জির রোগীদের জন্য এটি খুব উপকারী। এমনকি স্পঞ্জ সিদ্ধও করা যায়। স্পঞ্জ চাষিরা দিনের ফলন বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেগুলো ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করে তোলার কাজ করেন। স্পঞ্জ চাষি নাসিরি হাসান হাজি বলেন, ‘সমুদ্র থেকে স্পঞ্জ তোলার পর আমাদের সেগুলো প্রস্তুত করতে ও শুকাতে হয়। সেগুলো বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বালু, ঝিনুক বা ছোট ছোট প্রাণী বেছে বের করে নিতে হয়। তারপর সেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করতে হয়।’
একটি স্পঞ্জ যত্ন করে রাখলে প্রায় ২০ বছর তা ব্যবহার করা যায়। কাজিয়া ওমর আলি বলেন, ‘মানুষ যে স্পঞ্জ ব্যবহার করে স্নান করে, সে বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। আমি নিজেও এটি ব্যবহার করতে শুরু করেছি।’
‘মেরিন কালচারস’ সংগঠন এর মধ্যে নতুন একটি প্রকল্পও শুরু করেছে। প্রবাল দিয়ে অ্যাকোয়া ফার্মিং-এর এক প্লান্টেশন গড়ে তুলছে এ সংগঠন। ক্রিস্টিয়ান ফাটারহাউস বলেন, ‘আনুমানিক ২০টি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী অ্যাকোয়েরিয়াম ব্যবসার জন্য উপযুক্ত বলে আমরা মনে করছি। প্রবালের মধ্যে চাষের পদ্ধতিও বেশ সহজ। প্রবালের একটি টুকরো কেটে নিয়ে সেটিকে একটি বিশেষ স্তরের উপর বসিয়ে দিতে হয়। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্পঞ্জ চাষের মিল রয়েছে।’
উপহ্রদের মধ্যে এক সংরক্ষিত এলাকা গড়ে তোলা হবে আগামী পদক্ষেপ। তখন এই প্রবাল বনায়নের জন্যও ব্যবহার করা যাবে। ‘মেরিন কালচারস’ গ্রামের কিছু চাষিকে এ প্রকল্পে শামিল করতে পেরেছে। মুসা ইয়েচা ভুয়াই ‘ডেমা’ নামের এক ঐতিহ্যবাহী মাছের ফাঁদ তৈরি করে মাছ ধরার কাজটি করেন। স্থানীয় জেলে মুসা ইয়েচা ভুয়াই বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের মাছ ধরার এ পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে। রাতে মাছ ধরা ও বিশাল জাল ব্যবহার করা আর চলবে না। কিভাবে ডেমা দিয়ে আবার পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ ধরা যায়, তা নিয়ে কথা বলতে হবে। নিজেদেরও কিছুটা বদলাতে হবে।’ কারণ উপহ্রদ রক্ষা করতে গেলে গ্রামের মানুষের সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে। সৌজন্যে : যুগান্তর