Skip to content

ভাসমান হাটে ঢেউয়ের তালে বেচাকেনা

VASOMAN_BAJAR

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর এলাকার খালে বসেছে ভাসমান হাট। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l

বরিশাল শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর এলাকা। এখানকার আটঘর খাল ও এর শাখা খালগুলোতে নৌকায় ঢেউয়ের তালে চলে বেচাকেনা। ভাসমান এ হাট চলছে দুই শতাধিক বছর ধরে। এখানে নৌকায় করে বিকিকিনি করতে আসেন আশপাশের তিনটি জেলার মানুষ।

আটঘর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সবুজ মজুমদার বলেন, বরিশালের বানারীপাড়া, ঝালকাঠি সদর ও পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার প্রায় সব বাড়িতেই নানা সবজি ও ফলমূলের বাগান রয়েছে। এসব পণ্য সহজে বেচার সুযোগ পাওয়ায় তাঁরা এই হাটে আসেন।
এলাকার বেশ কয়েকজন বলেন, স্বরূপকাঠি, ঝালকাঠি সদর ও বানারীপাড়ার লোকজনের যোগাযোগ মূলত নৌকাকেন্দ্রিক। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। এসব এলাকায় আছে বনজ, ফলদ, মসলার গাছ। অনেক পেয়ারাবাগানও রয়েছে এই অঞ্চলে। কৃষকের উৎপাদিত এসব পণ্য বিক্রি করার জন্য তিন জেলার সংযোগস্থল আটঘর এলাকায় গড়ে ওঠে ভাসমান সবজিহাট। প্রতি শুক্র ও সোমবার বেচাকেনা চলে এখানে।

ঝালকাঠির আদাবর এলাকা থেকে আসা সত্যেন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, ‘৭০ বছর ধরে নৌকায় সবজি নিয়ে এই বাজারে আসছি। বাবা ও ঠাকুরদার মুখে শুনেছি, এ বাজার নাকি ২০০ বছরেরও পুরোনো।’ আটঘর ইউপির কটুরাকাঠির কৃষক অমল কুমার বলেন, ‘শুনেছি ব্রিটিশ আমলেরও আগে এই হাট বসেছে।’

স্বরূপকাঠি এলাকার আবুল কাশেম বলেন, ঝালকাঠি সদরের বিনয়কাঠি, ভিমরুলী ও শতদশকাঠি; পিরোজপুরের আটঘর, কুড়িয়ানা, ভিমরুলী, ডুমুরিয়া, স্বরূপকাঠি, জিন্দাকাঠি, আমদকাঠি, রাজাপুর, ব্রাহ্মণকাঠি, রায়ের হাট, আন্দাকুল ও বাউকাঠি এবং বানারীপাড়ার বানারীপাড়া ও রায়ের হাট এলাকার কৃষকেরা ছোট ছোট নৌকায় করে পণ্য নিয়ে এই হাটে আসেন। হরেক রকম সবজি ও ফলমূল মেলে ভাসমান বাজারে। পাওয়া যায় তাল, আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, আতা, জামরুল, পেয়ারা এবং বরবটি, করলা, পানিকচু, লতি, লেবু, বোম্বাই মরিচ, শসা, পেঁপে, পুঁইশাক, ডাঁটাশাক, তাল, নারিকেল, পাটশাকসহ বিভিন্ন সবজি। এসব বিক্রি হয় পাইকারি দরে। পাইকারেরা এখান থেকে এসব কিনে ট্রলারে বোঝাই করে নিয়ে যান বিভিন্ন জেলায়।

১ জুলাই ভোর সাড়ে পাঁচটায় গিয়ে আটঘর এলাকার খাল ও আশপাশের কয়েকটি শাখা খালের দিকে সবজিবোঝাই নৌকাগুলোর এগিয়ে চলার দৃশ্য দেখে মনে হয় যেন নৌ শোভাযাত্রা চলছে। একসময় খাল ছেয়ে যায় পণ্যবোঝাই নৌকায়। সূর্য ওঠার আগেই শুরু হয়ে যায় বেচাকেনার হাঁক-ডাক। সকাল নয়টার মধ্যেই বেচাকেনা শেষে খালি নৌকা নিয়ে ফেরেন চাষিরা।

জিন্দাকাঠির পাইকার অমল মণ্ডল বলেন, ভাসমান এই হাট থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন পাইকার পণ্য কিনে নিয়ে যান। তিনি ২০ বছর ধরে এখান থেকে শাক-সবজি কিনে বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। পঞ্চাশ বছর ধরে এখান থেকে পণ্য পাইকারি দরে কেনেন সুকুমার মণ্ডল। তিনি বলেন, আমি সব ধরনের পণ্য কিনি। এরপর ট্রাক বোঝাই করে ঢাকার কারওয়ান বাজারে পাঠাই। সূত্র: প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *