মঈনুস সুলতান
ভিন দেশে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে কারো কারো সঙ্গে একাধিকবার দেখাসাক্ষাৎ হয়ে যায়। কোন কোন মানুষ মেহমানদারীতে অতিশয় সজ্জন। তারা মাতৃভাষার বেড়াজাল ছিন্ন করে পর্যটকদের সঙ্গে অতি সহজে কমিউনিকেট করেন। তাদের সঙ্গে পর্যটনের সময় জানপহচান অন্তরঙ্গতা হয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু না। কেউ কেউ বিদেশীদের অভ্যর্থনা করতে নিজ মানসে পুষে রাখেন তুলতুলে কম্বলের মতো উষ্ণতা। মি. উত্রান ও তার পরিবারকে এ পর্যায়েই ফেলা যায়। তাদের সঙ্গে আমাদের পরিচয় অতি স্বল্পক্ষণের। হো চি মিন সিটিতে প্রথমবারে আসার দিনে আমরা মি. উত্রানের সঙ্গে হ্যানয় বিমানবন্দর থেকে একই ফ্লাইটে উড়ে আসি। আমাদের প্লেনখানা অতি বিলম্বে মাঝরাতে এসে হো চি মিন সিটিতে ল্যান্ড করে। সে রাতে গড়পড়তা সহযাত্রীদের মতো মি. উত্রান হাত মিলিয়ে বাই বাই করে অচেনা অন্ধকারে মিলিয়ে যাননি। তিনি নিজ উদ্যোগে আমাদের তার গাড়িতে করে পৌঁছে দেন প্যালেস হোটেলে। আমি ও হলেণ আমাদের প্রায় ছয় বছরের কন্যা কাজরিকে নিয়ে সে রাতে কোন প্রকার বালা-মুসিবতে না পড়ে হোটেলে আসতে পেরে উত্রান পরিবারের প্রতি দারুণ কৃতজ্ঞতাবোধ করি। আমাদের সম্পর্ক কিন্তু বিপরীতগামী দু’টি ট্রেনের মতো এখানেই কাটা পড়ে না। পরদিন উত্রান সপরিবারে এসে আমাদের নিয়ে চলেন হো চি মিন সিটির প্রধান দ্রষ্টব্য সাবেক রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ পরিদর্শনে।
ভিয়েতনামের শৈল শহর দালাত ও অতীত দিনের সম্রাটের নিজস্ব নগর হোয়েতে সপ্তাহ দুই কাটিয়ে আমরা যখন আবার ফিরে যাওয়ার পথে হো চি মিন সিটিতে রাত্রি দুয়েকের জন্য যাত্রা বিরতি করলাম, তো মনে হলো উত্রান পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করাটা বিশেষ জরুরি। আমাদের মাঝে হলেণ তুলনামূলকভাবে করিৎকর্মা। সে দ্রুত ব্যাগ স্যুটকেস হাতড়িয়ে বের করে তাদের টেলিফোন নাম্বার। ফোন করে তাদের ক্রীড়া সামগ্রীর দোকানে মিসেস উত্রানকে পাওয়া গেলো। হলেণ তাদের পরিবারের সকলকে প্যালেস হোটেলের লাগোয়া রেস্তোরাঁয় আমন্ত্রণ জানায়। মিসেস সোৎসাহে তা গ্রহণ করে আসার প্রতিশ্রুতি দেন।
সেই দুপুর বারোটা থেকে হোটেলের লবিতে বসে উত্রান পরিবারের জন্য ইনতেজারি করছি। এখন প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে। তারা আর আজ আসবে বলে মনে হয় না। হলেণ বার কয়েক উঠে গিয়ে আবার তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওপাশে কেবলই রিং হয়, কেউ রিসিভার ওঠায় না। উত্রান পরিবারের সঙ্গে মধ্যাহ্ন ভোজনের সম্ভাব্যতার কথা ভেবে তো আর কাজরিকে উপোস রাখা যায় না। তাই এক সময় হলেণ উঠে গিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে নিয়ে আসে চিকেন স্যান্ডউইচ ও ইয়োগার্ট। আমরা ভাবি ভিয়েতনামে মধ্যাহ্ন ভোজন বোধ করি বিকেলের দিকে সারা হয়। হয়তো উত্রানরা অপরাহ্ন চারটা নাগাদ এসে হাজির হবেন। তাই আমরা কিছুক্ষণ ভেতরে ক্ষিধা পুষে রাখি।
অবশেষে অভিজ্ঞতা অসহনীয় হলে শুকনো মুখে কাজু বাদাম, বিস্কিট ও আপেলের টুকরা চিবাই। এক পর্যায়ে আমি ও হলেণ মৃদু তর্কে লিপ্ত হই। আমি জানতে চাই— মিসেস উত্রান লাঞ্চে রাজি হয়েছেন, বিষয়টি কি ঠিক্ ঠিক্ সে টেলিফোনে শুনতে পেয়েছে? মিসেসের ইংরেজি ততোটা সাবলীল নয়, তাই হলেণ আদা বললে তিনি যে কাঁচকলা বুঝবেন তাতে আর বিচিত্র কী? হলেণ আমার তীর্যক মন্তব্যের জবাব না দিয়ে টিপয় থেকে ফ্যাশন ম্যাগাজিন তুলে তা দেখতে শুরু করে। লবিতে বসে বসে উত্রান পরিবারের জন্য ঘোরতর ইন্তেজারীতে আমাদের সময় কিন্তু মন্দ কাটে না। কাজরি টিভি সেটের সামনে বসে এক নাগাড়ে কার্টুন নেট্ওয়ার্ক দেখে চলছে। সে যে রাত্রিবেলা কার্টুন চরিত্রটির মতো আচরণ করবে না, তা নিয়ে আমি খানিক ভাবিত হই। লবির একপাশে সারসের গলার মতো পিতলের নক্সা করা মস্ত বাতিদানের নীচে ঠিক মেঝের উপর আসন বিছিয়ে বসে এক বিভ্রান্ত টুরিস্ট। পর্যটকটির প্যান্ট ও স্পোর্ট-গেঞ্জি দুই-ই ধূলিমলিন ও স্থানে স্থানে ছিন্ন, সুতা ঝুলানো। মানুষটি বোধ করি নানাদেশ ঘুরে শ্রান্ত। তাই থেকে থেকে হাই তোলে সে প্রকাণ্ড এক মানচিত্রের নানা স্থানে কলম দিয়ে দাগ কাটে। তারপর সে ছাদের দিকে মুহূর্ত কয়েক নির্ণিমেষ তাকিয়ে আড়মোড়া ভেঙে পকেট থেকে বের করে ক্যালকুলেটর । এবার বোধ করি সে হিসাব কষছে কোথায় যেতে কতটা কড়ি লাগবে?
লবির দেয়াল ঘড়িতে পাঁচটা বাজার সংকেত হয়। কোথাও উত্রান পরিবারের আসার কোন আলামত দেখা যায় না। আমার উল্টো দিকের কাউচে বেশ কিছুক্ষণ হলো এসে বসেছেন বৃদ্ধ এক দম্পতি। পুরুষটির চামড়ার কুঁচকানো ভাঁজ দেখে মনে হয় মানুষটি রীতিমতো বুড়ো হয়েছেন। তার সঙ্গিনীর মাথায় এক রাশ রূপালি চুল, তবে নিভাঁজ ত্বক ও চোখ মুখের উজ্জ্বলতা দেখে মনে হয় বৃদ্ধাটি এখনো সতেজ আছেন। কিন্তু মিনিট কয়েকের মাঝে আমার অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়। বৃদ্ধ চাবি হাতড়িয়ে প্রকাণ্ড ব্রিফকেস থেকে বের করেন বিশাল প্রেসার মাপার মেশিন। তিনি সঙ্গিনীর পৃথুল বাহুতে কাপড়ের পুরু ফিতা জড়িয়ে পাম্প করে দক্ষ হাতে রক্তচাপ মাপেন। তার কুঁচকানো কপালে উদ্বেগ ফুটে। খানিক পর তিনি লাঠি ঠুক্ ঠুক্ করে রেস্তোরাঁ থেকে নিয়ে আসেন জল। এবার তিনি বৃদ্ধাকে অতি যত্নে খাইয়ে দিচ্ছেন একটি পিল। আমি ভাবি এদের লবিতে বসিয়ে রাখার কোন মানে হয় না। হোটেল কর্তৃপক্ষের উচিত এখনই এদের কামরায় পৌঁছে দেয়া।
যেন টিকেট ছাড়া রঙ্গ মঞ্চে ঢুকে পড়েছে— এরকম অনিশ্চিত পদক্ষেপে লবিতে এসে এদিক-ওদিক তাকায় গাঢ় নীল বর্ণের উপজাতীয় পোষাক পরা অল্প বয়সের একটি মেয়ে। মেয়েটি তার নিজস্ব উপস্থিতিতে বোধ করি বিপন্ন বোধ করে। সে লবির মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে থেকে কেবলই এদিক ওদিক তাকায়। তার গ্রীবার হেলনে লালচে পশমের ঝালর দেয়া শিরোভূষণে গাঁথা রূপালি কাঁটার প্রান্তে দোলে গোলাপি বর্ণের ঝুলন্ত পোশাক। এবার সে সাহস করে কাউন্টারে গিয়ে কিছু একটা জিজ্ঞেস করে। তার চোখমুখ দেখে মনে হয় না ট্রাইভাল তরুণীটি আশানুরূপ জবাব পেয়েছে। সে ক্ষুন্ন মুখে আড়ষ্ট হয়ে সোফায় বসে যেন আকাশ পাতাল ভাবে। মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে সে পা নাড়ে, সুডৌল বাহু লতিয়ে কপাল থেকে সরায় ঝুঁকে পড়া গুচ্ছ গুচ্ছ চুল। তার হাত ও পায়ে পরা রূপার ভারী বলয় থেকে অতি মৃদু ধাতব ধ্বনি বাজে। মেয়েটি মনে হয় কারো জন্য তীব্র প্রতীক্ষায় আছে। তার গণ্ডদেশ ভোরের সূর্যালোকের মতো রাঙা হয়ে ওঠে।
উপজাতীয় মেয়েটি কেবলই উসখুস করে বার বার পাশ ফিরে বসে। আমার চোখ দু’টি যেন প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়। আমি আরেকবার গাঢ়ভাবে তাকে দেখি। সবুজ বুনো ফলের অভ্যন্তরে অরুণ বর্ণ সুস্বাদু শাসের মতো নীল রঙের পাহাড়ী ভূষণে তার তীব্র দেহরেখা নারীত্বের সর্বাত্মক বঙ্কিমতা নিয়ে ফুটে ওঠে। আমি দৃষ্টিকে শাসন করে অনিচ্ছায় অন্যদিকে তাকাই। লবির একপাশের দেয়াল সম্পূর্ণ কাঁচের তৈরি। তাই ওদিক দিয়ে হো চি মিন সিটির ফুটপাতের চলমান চালচিত্র দিব্যি দেখা যায়। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বেশ ক’জন ফেরিওয়ালা অ্যাকুইরিয়ামে যেরকম রঙিন মাছ দেখা যায়, সেরকম তারা তারকা চিহ্নিত হোটেলের কাচঘরে বসা বিবিধ বর্ণ ও মাপের মানুষ দেখে। কাচের ওপাশ থেকে এক ফেরিওয়ালার সঙ্গে চোখাচোখি হতেই মানুষটি তার হাতের পণ্য সম্ভার কালচে সোনালি ল্যাকারে রাঙানো তিরলে তুলে ধরে ইশারায় আমাকে আকৃষ্ট করে। আমি ফেরিওয়ালার সঙ্গে আই কন্টাক্ট ধরে রেখেছি দেখে উৎসাহিত হয়ে এক অন্ধ ফেরিওয়ালি কাচের দেয়ালে গ্রাহাম গ্রিনের ভিয়েতনামের উপর লেখা বই ঘষতে শুরু করে। ইতিমধ্যে টেলিভিশনে কার্টুন নেটওয়ার্ক সমাপ্ত হয়েছে। তাই কাজরি এসে কাঁচের ওপাশে ফুটপাতের রঙ্গমঞ্চের দিকে তাকায়। সে দেয়ালে টোকা দিয়ে ওপাশের কানা ফেরিওয়ালির সঙ্গে কমিউনিকেট করতে চেষ্টা করে। কানা মেয়ের মুখের হাসিটি মধুর। সে হেসে হাতছানি দিয়ে কাজরিকে ডাকে। বংশীবাদকের পেছনে ধাবমান ইঁদুর ছানার মতো আমাদের মেয়েটি তড়িৎ গতিতে লবি অতিক্রম করে দুয়ার ঠেলে চলে যায় বাইরে।
আমি কাজরিকে সামলাতে ফুটপাতে নেমে আসি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বানরকে দেখার জন্য পথচারীরা যেমন গোল হয়ে দাঁড়ায় তেমনি আমাদের মেয়েটিকে ঘিরে ফেরিওয়ালারা বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে রঙ্গ রস্ করছে। একখানা পাজেরো ভ্যান এসে থামে। গাড়ি থেকে হাসি মুখে নেমে আসেন গল্ফ সার্ট পরা ঋজু দেহী মি. উত্রান। হোটেলের দোর ঠেলে হলেণও বেরিয়ে আসে। আমরা মি. উত্রানের সঙ্গে সম্ভাষণ বিনিময় করি। মনে মনে প্রত্যাশা করি তিনি হয়তো দেরিতে আসার জন্য ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু উত্রান ওসবের ধার মাড়েন না। তিনি আমাদের গাড়িতে উঠতে তাড়া দেন। ততক্ষণে তার পুত্রটি লাফ দিয়ে নেমে এসেছে ফুটপাতের উপর। ছোট্ট এ ছেলেটির পরনে আজ নৌসেনাদের মতো নিভাঁজ সাদা পোষাক। তার কৌণিক টুপিতে ঝলমল করছে টিনে তৈরি রূপালি জাহাজের নকশা। ছেলেটি করিৎকর্মা। সে দ্রুত ফেরিওয়ালাদের ব্যুহ ভেদ করে কাজরিকে উদ্ধার করে এনে গাড়িতে উঠায়। কি আর করা— আমরা গন্তব্য না জেনেই পাজেরোতে এসে উঠি। পেছনের সীট থেকে মধুর করে হেসে মিসেস উত্রান আমাদের স্বাগত জানান। মি. উত্রান বেলা শেষের ট্রাফিককে সমীহ করে সাবধানে পথঘাট দেখে গাড়ি চালাচ্ছেন। আমি মনে মনে ভাবি তিনি হয়তো তার পছন্দ মতো কোন রেস্তোরাঁয় আমাদের নিয়ে চলেছেন। না, মি. উত্রান বেশ খানিক গাড়ি চালিয়ে চলে আসেন শহরের এক প্রান্তে অত্যন্ত নিরিবিলি একটি অঞ্চলে। তিনি এতো ধীরে গাড়ি চালান যে মনেই হয় না তার কোথাও যাওয়ার কোন তাড়া আছে। মনে হয় তিনি একটি গাছপালায় ছাওয়া পার্কের ভেতর দিয়ে দিয়ে এগুচ্ছেন। বোধ করি তারা পার্কে পিকনিকের আয়োজন করেছেন। গাড়ি মুদিত শাপলায় সজল হয়ে আসা একটি হৃদের তীরে এসে থামে। আমাদের ছেলেমেয়ে দু’টি গাড়ি থেকে লম্ফ দিয়ে নেমে খোয়াড় খোলা জোড়া মোরগের মতো ছুটে যায় ঘাসের উপর দিয়ে। আমরা কিছুক্ষণ হৃদের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকি। দু’পাশ থেকে জলের উপর ঝুঁকে আছে বেশ ক’টি দৃষ্টিনন্দন তরু। ঝিরিঝিরি হাওয়ায় এক জোড়া নির্জন নৌকা আস্তে ধীরে দুলে। শান্ত জলে মাছের মৃদু ঘাইয়ে ভাঙে নীল আকাশের প্রতিফলন। এ স্থানের নিরিবিলি মায়া আমাদের কিছুক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখে। কিন্তু ঠিক বুঝতে পারি না— এখানে আমাদের নিয়ে আসার কারণ কি? খানিক নীরবে হাঁটাহাঁটির পর আমরা আবার গাড়িতে উঠি।
আমরা আবার শহরের ভেতর দিয়ে ছুটি। এক পর্যায়ে পাজেরোখানা পার্ক করে রেখে উত্রান দম্পতি আমাদের যে স্কোয়ারটিতে নিয়ে আসেন সেখানে রীতিমত রঙের মেলা বসেছে। যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে বর্ণিল আওডাই পরা ভিয়েতনামিজ্ তরুণীর দল। প্রচুর ছেলেমেয়ে পিতা-মাতার আগমন ঘটেছে। দলে দলে দোকানিরা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বিক্রি করছে রঙিন ফানুস বা বিবিধ আকৃতির নানা বর্ণের কাগজে তৈরি ভিয়েতনামিজ্ লণ্ঠন। দর কষাকষি চলছে প্রবল বেগে। আমরা পর পর বেশ ক’টি মুখোশের দোকান অতিক্রম করে ভিড় ঠেলে মেলার কেন্দ্রস্থলে চলে আসি। এখানে ছেলে-মেয়ে কিশোর কিশোরীদের অনেকেই মুখোশ পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেখতে দেখতে আমাদের পাশ দিয়ে ঢিমেতালে মুখোশ নৃত্য করে চলে যায় ক’টি তরুণী। নাচিয়ে মেয়েগুলোর মুখ গোলাকার বিচিত্র নকশা আঁকা বেতের মুখোশে আবৃত। কিন্তু এতে তাদের নাচের লাস্যে কমতি কিছু হয় না। আমরা— পথচারীরা মুগ্ধ হয়ে তাদের দোলায়িত দেহ ভঙ্গিমার দিকে তাকাই। এলোপাথাড়ি ভেঁপুর শব্দ ও থেকে থেকে পটকার বিষ্ফোরণে স্থানটি এমন গুলজার হয়ে আছে যে একে সাইক্লোনের কেন্দ্রস্থিত ঘূর্ণয়মান প্রাকৃতিক চোখের মতোই অস্থির মনে হয়। আমি কৌতূহল চাপতে না পেরে মি. উত্রানকে— মেলাটি কিসের তা ব্যাখ্যা করতে অনুরোধ করি। জবাবে উত্রান বলেন, এটি ‘টেট্ ট্রুং থু’ বা মধ্য শরতের চান্দ্র উৎসব। বিষয়টি ভালো করে বুঝার আগেই তার মোবাইল টেলিফোন বেজে ওঠে। উত্রান আমাদের হাতের ইশারায় মেলায় থাকতে বলে শান্তিতে ফোনে কথা বলার সুবিধার জন্য ফাঁকা জায়গার দিকে ছুটেন।
মিসেস উত্রানের সাথে হেঁটে হেঁটে আমরা মুখোশ পট্টিটি ঘুরে ফিরে দেখি। কাজরি ও উত্রান পুত্র মুখোশ কিনতে চায়। আমরা বেছে বেছে এক মধ্যবয়সী নারী দোকানীর মেলে রাখা পণ্য সম্ভারের সামনে এসে দাঁড়াই। মহিলা মনযোগ দিয়ে সরার মতো দেখতে গোলাকার বেতের মুখোশের উপর তুলি দিয়ে হাসি মুখ, চোখ ও ভুরু আঁকছেন। কাজরি ও উত্রান পুত্র দোকানীর কল্যাণে মুখোশ পরা দু’টি ছেলে মেয়েতে রূপান্তরিত হয়। মুখোশওয়ালীর পাশেই ফুটপাতে হাতের ছাপচিত্র সাজিয়ে বসেছেন ভিয়েতনামিজ হস্ততত্ত্ববিদ। নারীটির মুখ ও কপালে রঙিন খড়ি দিয়ে অপেরা শিল্পিদের মতো নকশা আঁকা। আমার সাথে তার চোখাচোখি হতেই তিনি হাতছানি দিয়ে ডাকেন। তারপর আকাশের দিকে ইশারা দিয়ে বোধ করি জানাতে চান যে— তার শরণাপন্ন হলে ভবিষ্যৎটি দিব্যি দেখা যাবে। আমাদের মুখোশ পরা ছেলে মেয়ে দু’টি অন্যদিকে ছুটছে দেখে আমি আর এ যাত্রায় ভাগ্য পরীক্ষা করার অবকাশ পাই না।
উত্রান পুত্র আমাদের মেয়েকে নিয়ে আরেকটি দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এ দোকানের পণ্য সম্ভার বিচিত্র। ওখানে সাজানো নারকেলের মতো গোলাকার মাটির সব ভাণ্ড। তাতে গাঢ় রঙে লাল সবুজ ও হলদে নকশা আঁকা। দোকানী ডিসপ্লের জন্য একটি ভাণ্ডের মুখ খোলে। তার ভেতরে কাগজ কেটে তৈরি অরিগামী বলে এক ধরনের কৃত্তিম সারস। আমাদের ছেলেমেয়ে দু’টি মিনিয়েচার সারসকে চিমটি দিয়ে ধরে শূন্যে ছুড়ে উড়াতে শুরু করলে মিসেস উত্রান তাদের জন্য দরাজ হাতে খরিদ করেন দু’টি বর্ণাঢ্য ভাণ্ড।
আমরা এবার চলে আসি ফানুস বা রঙিন লণ্ঠনের পট্টিতে। মি. উত্রান হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এসে এখানে আমাদের সাথে যোগ দেন। সন্ধ্যা হয়ে এলো বলে দোকানীদের কেউ কেউ এখন ফানুশের ভেতরে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। নির্মেঘ আকাশে একটি দু’টি করে তারা ফোটার মতো জ্বলে ওঠে বেশ ক’টি রঙিন লণ্ঠন। লণ্ঠনগুলোর আকৃতিও বিচিত্র। কাজরি পুতুলের মতো দেখতে একটি ফানুস কিনতে চায়। তাকে কাঙ্ক্ষিত লণ্ঠন কিনে দিয়ে আমি উত্রান পুত্রের দিকে ফিরি। উড়ন্ত ড্রাগনের দেহের মতো লণ্ঠনটি পেয়ে সে স্পষ্টত খুশি হয়। বাচ্চা দু’টি এখন পরষ্পরকে তাদের নিজস্ব লণ্ঠন দেখাচ্ছে। মি. উত্রান আমাদের জন্য লণ্ঠন কিনতে চান। আমি খরগোস ও হলেন মাছাকৃতির লণ্ঠন দু’টি পছন্দ করি। উত্রান দম্পতি নিজেদের লণ্ঠন বাছাইয়ে প্রচুর সময় নেন। তাদের শলাপরামর্শ থেকে মনে হয় তারা লণ্ঠন নির্বাচনে সাংস্কৃতিক কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করছেন। অবশেষে মিসেস ফড়িং আকৃতির এবং মিস্টার মোরগাকৃতির ফানুস দু’টি পছন্দ করলে হলেন কানের কাছে ফিস্ ফিস্ করে বলে, ‘দম্পতি তাদের নিজস্ব রাশিচক্রের সাথে সংগতি রেখে লণ্ঠনগুলোর আকৃতি নির্বাচন করেছেন।’ আমাদের লণ্ঠন কেনার পালা শেষ হয়ে আসে। মনে মনে ভাবি ফানুসগুলোর আকৃতি যা বিচিত্র— হলেনের আন্দাজ সত্যি হলেও হতে পারে।
মুখোশ, লণ্ঠন সবই কেনা হয়ে গেছে— তারপরও মেলা থেকে সহজে নিস্তার পাওয়া যায় না। উত্রান দম্পতি আমাদের টেনে হিচড়ে নিয়ে চলেন তুলনামূলকভাবে কম ভীড় ত্রিপলের মণ্ডপ-বাঁধা একটি এলাকার দিকে। মণ্ডপের নিচে সারি দিয়ে রাখা মুনকেক বা চন্দ্রাকৃতির প্রকাণ্ড সব পিঠা। দোকানের কেকগুলো সবই বৃত্তাকৃতির, এতে কিস্মিস্, বাদাম ও আখরোট গেঁথে নানা রকমের নকশাকাটা। এখানকার দোকানীদের সকলেই বোধ করি যুবতী বয়সের। তাদের রেশমী ভূষণে সদ্যজ্বলা ফানুসের আলো পড়ে। এদের জনা তিনেক আমাদের দেখে খিল খিল করে একে অপরের গায়ে গড়িয়ে পড়ে। একটি মেয়ে মুখোশ খুলে আমাদের তড়িতে দেখে নিয়ে চলে যায় আবার মুখোশের অন্তরালে। আমি চারদিক থেকে ধেয়ে আসা নারী দৃষ্টির মধ্যখানে পড়ে অপ্রস্তুত বোধ করি। মিসেস উত্রান এতক্ষণে তার পছন্দসই দু’টি কেক নির্বাচন করেছেন। হলেন সৌজন্যবশত কেক্ দু’টোর দাম দিতে গেলে দু’টি ভিনদেশি মহিলার মাঝে রীতিমত কুস্তি বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হয়। মিসেস উত্রানের হাতে এক গাদা ভিয়েতনামিজ্ টাকা ডং। হলেন ডলার হাতে পরাজয় বরণ করে পিছিয়ে যায়। চকিতে একটু আগে দেখা মেয়েটি আবার মুখোশ খুলে তার বা’চোখে আমার দিকে তাকিয়ে লাস্যময় ইঙ্গিত করে। আমি মনে মনে দ্রুত ইশারাটির তর্জমা করি। অনুমান হয় যে— সে আমাকে তার কাছ থেকে কেক্ কিনতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আমি আবার তার দিকে তাকাই। তার চক্ষু পল্লবে রহস্যময় কৌতুক খেলা করে। আমি ভেতরে ভেতরে তার চাঙ্গারির কেক ফেক্ সমস্ত কিছু কিনে ফেলার উদ্যোম অনুভব করি। কিন্তু বাস্তবে কিছুই করি না। অতি সংযত মুখে মিসেস উত্রান ও হলেনের পেছন পেছন মুখচোরা বিলাইয়ের মতো হাঁটতে শুরু করি। আশে পাশে আরো ক’টি কেক্ বিক্রেতা তরুণী খিল খিল করে হেসে ওঠে। আমি ঘাড় ফিরিয়ে তাকাই। মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে চকিতে মুখ ভ্যংচিয়ে চলে যায় মুখোশের অন্তরালে।
উত্থান পরিবারের ফ্ল্যাট বাড়িটি তিন তলায়। আমরা প্রশস্ত ড্রইং রুমে এসে বসলে— পরিচারিকা এসে টেবিলের উপর সবুজ চায়ের টিপট ও পেয়ালা রেখে যায়। আমরা তিতকুটে স্বাদের চা পান করতে করতে কামরাটি দেখি। এক কোণে টাইগার উড্ নামক এক থাই আমেরিকান গল্ফ খেলোয়াড়ের সম্পূর্ণ কাটআউট দেখে মি. উত্রানের খেলোয়াড়ি মনোভাবকে আর অবজ্ঞা করা যায় না। তিনি আমার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ঢিমেতালে গল্পগাছা শুরু করেন। কিচেন থেকে খাবারের সৌরভ ভেসে আসলে আমার মন খুশি হয়ে ওঠে। মি. উত্রান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খেলার সামগ্রী রফতানির কথা বলেন। বৈদেশিক ইনভেস্টমেন্টের প্রতিক্রিয়া নিয়ে তার সাথে আমার একটি দু’টি খুচরো কথাবার্তা হয়। তিনি ভিয়েতনামে বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগের পক্ষপাতি। সহসা তার মোবাইল ফোন বেজে উঠলে তিনি তাতে সাড়া দেন। হলেন উঠে মিসেস উত্রানের সন্ধানে ফ্ল্যাটের ভেতরবাগে যায়। কাজরি অনেকক্ষণ হলো উত্রান পুত্রের সাথে লাপাত্তা। আমি একাকী বসে বসে ড্রয়িংরুমের কেবিনেটে রাখা এক সারি রূপালি কাপ ও শিল্ড দেখি। অতি দামী ইলেকট্রনিক্সগুলোও আমার মনযোগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মনে মনে ভাবি হোচিমিন সিটিতে সমাজতন্ত্রের জ্বর নেমে যেতেই সকলে এবার পাতে পুঁজিবাদের পথ্য তুলতে উঠেপড়ে লেগেছে।
হঠাৎ করে আমার দিকে উড়ে আসে দু’টি অরিগামি সারস। তার পেছন পেছন বেরিয়ে আসে মুখোশ পরা আমাদের মেয়ে কাজরি। তাকে অস্থির দেখায়। সে আমার দিকে চেয়ে বলে, ‘গিভ মি ইয়োর ক্যামেরা। কুইক প্লিজ্। আই ওয়ান্ট টু টেউক এ পিকচার অব্ দিস বয়। হি লুক্ হ্যান্ডসাম।’ কাজরির হাতে ক্যামেরা দিয়ে আমি তার সাথে সাথে চলি। পাশের কামরায় উত্রান পুত্রের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। বাচ্চা ছেলেটি কাপড় পাল্টিয়ে টি-শার্ট পরেছে। সে অরিগামির একটি মিনিয়েচার সারস উড়াতে গেলে কাজরি ফ্লাশ ঝলকিয়ে তার ছবি তুলে।
মি. উত্রানের টেলিফোনিক সংলাপ শেষ হতেই মিসেস আমাদের সকলকে তাড়া দিয়ে ছাদে পাঠান। ছাদে জলপূর্ণ চৌবাচ্চার পাশে নিচু টেবিল ও খান-কতক টুল পাতা হয়েছে। এখানে আসতেই সন্ধ্যে বেলার স্নিগ্ধ হাওয়ায় শরীর জুড়ায়। চৌবাচ্চাটির জলে দু’টি মুদিত শাপলা ফুল। আকাশ জুড়ে চাঁদের তীব্র আলো। রুপালি কিরণ জল ছুঁয়ে যায়। মি. উত্রান চান্দ্র উৎসবটি সম্পর্কে কিছু কথা বলেন। তার বাচনিকে জানা যায় মধ্য শরতের এই রাতে চন্দ্রকলায় আসে পূর্ণতা। উজ্জ্বল কিরণের প্রশস্তিস্বরূপ ভিয়েতনামিজরা এই রাতে চান্দ্র বন্দনায় মেতে উঠে। তার কথা শেষ হতে না হতেই মিসেস ও পরিচারিকা নিচ থেকে সবগুলো কাগজের লণ্ঠন হাতে উপরে উঠে আসেন। তাদের পেছন পেছন হুড়মুড় করে এসে হাজির হয় কাজরি ও উত্রান পুত্র। আমরা লণ্ঠনগুলোর ভেতর মোম জ্বেলে তা ছাদের কাপড় মেলার দড়িতে ঝুলিয়ে দেই।
ছাদের স্নিগ্ধ হাওয়ায় উৎসব রাতের আহার দিব্যি জমে ওঠে। আমরা স্যুপ শেষ করে সেস্মি তেলের ফোড়ন দেয়া চিকেন নোডুলস্ খাই। শেষের দিকে পরিবেশিত হয় নারকেলের দুধ মাখা স্টিকি রাইস, সাথে ফালি ফালি করে কাটা মিষ্টি আম। এত কিছুর পরও আবার পরিবেশিত হয় সবুজ চায়ের-সাথে টুকরো করে কাটা মুনকেক্। আমরা চায়ের পেয়ালা হাতে চৌবাচ্চার পাশে এসে দাঁড়াই। জলে এখন পূর্ণ চাঁদ প্রতিফলিত হচ্ছে। মৃদু হাওয়ায় খরগোস, ফড়িং, ড্রাগন, মাছ, মোরগ ও পরীর আকৃতির লণ্ঠনগুলো দোলে। কাজরি আমার হাত ধরে টেনে ছাদের এক কোণে নিয়ে যায় প্রাইভেট কিছু কথা বলার জন্য। সে ফিস ফিস করে বলে, ‘ক্যান্ আই মেরি দিস্ বয় হোয়েন হি ইজ্ গ্রোউন আপ্?’ তার প্রশ্নে আমি থতমত খেয়ে যাই। তারপর সামলে নিয়ে বলি, ‘প্রথমে বড় হও, তারপর বিয়ে ইত্যাদির কথা ভাবা যাবে।’ উত্রান পুত্রটি কাজরির খোঁজে এদিকে এসে পড়ে। তার হাতে চকচকে রুপালি কাগজে তৈরি দু’টি বড়সড় নৌকা। সে নৌকাগুলো দেখিয়ে বারবার ভিয়েতনামিজ্ ভাষায় কিছু একটা বলে। কিন্তু ভাষাটি না জানার কারণে তার বক্তব্য আমাদের বোধগম্য হয় না। মিসেস উত্রান এসে আমাদের উদ্ধার করেন। তার তর্জমায় জানা যায়— তাদের পুত্র আমাদের কন্যাকে নিয়ে হ্রদে নাও ভাসাতে যেতে চায়। মি. উত্রান আমাদের বুঝিয়ে বলেন— হৃদটি কিন্তু বেশি দূরে না। চাইলে আমরা পাজেরোতে করে এক টানে ওখানে নাও ভাসানো দেখতে যেতে পারি। তারপর ঘাসে উপর একটু হাঁটাহাঁটিও করা যেতে পারে। ভুঁড়ি-ভোজনের পর হাঁটার সম্ভাবনায় আমরা খুশি হই।
হৃদের পাড়ে বিজলি বাতি ফাতি কিছু নেই বলে চাঁদের কিরণে জলরাশি রুপালি হয়ে আছে। আমরা ঘাস ছাওয়া পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে চাঁদের প্রতিচ্ছায়া দেখি। হৃদের আশে পাশে মা বাপের সাথে আরো বেশ কিছু শিশু নাও ভাসাতে এসেছে। এক সময় কাজরি ও উত্রান পুত্র তাদের নৌকা দু’টি ভাসায়। জলতলে চাঁদের আলো অজস্র রুপালি বলয়ে বিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের পুত্র কন্যার নাও দু’টি কিরণ বলয় ভেঙে ভেঙে দুলে দুলে এগিয়ে যায়। আমরা হৃদের পাড়ে চন্দ্রাহত হয়ে বসে থাকি। খানিক দূর থেকে ভেসে আসে তারের যন্ত্রের বিষণ্ন সুরেলা ধ্বনি। ঝংকারটি ক্রমশ নিকটবর্তী হতে থাকে। মনে হয় পৃথিবীর মানব মানবীরা আজ চাঁদের আলোয় নাও বেয়ে পরস্পরের কাছে চলে আসছে। তারের যন্ত্র বাজিয়ে এক বৃদ্ধ ছোট্ট বালিকার হাত ধরে ধীর লয়ে হেঁটে আমাদের পাশ দিয়ে চলে যান। মি. উত্রান স্বগতোক্তির মতো বলেন, ‘সেই ছোট বেলা থেকে দেখছি এই অন্ধ বাদক চান্দ্র উৎসবের রাতে ভোডিকাম যন্ত্র বাজিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাচ্ছেন। তখনকার দিনে তাকে হাঁটিয়ে নিয়ে যেত তার মেয়ে। এখন বোধ করি বুড়ো বাদক নাতনির হাত ধরে হাঁটেন।’ মি. উত্রানের কথা শেষ হতেই আবার সুরধ্বনি এসে আমাদের কানে লাগে। মনে হয় নাওগুলো দাঁড় বেয়ে চলে যাচ্ছে চাঁদের দেশে।
ঘুমন্ত বাচ্চা দু’টিকে কাঁধে নিয়ে আমরা যখন ধীর গতিতে পাজেরোর দিকে যাচ্ছি মিসেস হলেনের হাতে গুঁজে দেন আস্ত একটি মুনকেক। গাড়িতে বসে হোটেলের দিকে ফিরতে ফিরতে ভাবি আগামী কাল আমাদের ভিয়েতনাম ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা আছে। মনে হয় ভবিষ্যতে যেখানেই থাকি না কেন পূর্ণিমা রাতে হয়তো উত্রান পরিবারের কথা মনে পড়বে। কাজরিও হয়তো মাঝে মধ্যে ছেলেটির কথা ভেবে আনমনা হবে— নাকি সে তাকে একেবারেই ভুলে যাবে?