Skip to content

ভুতুড়ে ফ্রাঙ্কলিন প্রাসাদ

Franklin-Palace

জাহান নাবীল
ভূত আছে কি নেই-এই তর্কের শেষ নেই। আমরা ভূতে বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী কোনো দলেই নেই। তবে সাধারণভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না এমন অতিপ্রাকৃত ঘটনা কিন্তু ঘটে অনেকের জীবনেই। আর অলৌকিক ও অতিপ্রাকৃত গল্প শুনতে পছন্দ করেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন।

আমেরিকার ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ড শহরে অবস্থান ফ্রাঙ্কলিন প্রাসাদের। সাধারণত পুরনো প্রাসাদগুলোর যে কারণে খ্যাতি হয়, এটিরও তা-ই। ভুতুড়ে প্রাসাদটি অনেকের কাছে পরিচিত ‘হান্স টিয়েডমান হাউস’ নামেও। চারতলা প্রাসাদটিতে প্রায় ৩০টির মতো ঘর আছে। গথিক কাঠামোর ভুতুড়ে চেহারার প্রাসাদটি বেশ কিছু ভয়ংকর খুনেরও সাক্ষী। সঙ্গে আরো আছে অপঘাতে মৃত্যুর ঘটনা। মোটকথা, একটি প্রাসাদের ভুতুড়ে হওয়ার জন্য যা যা দরকার, সবই আছে ফ্রাঙ্কলিন প্রাসাদের।

১৮৬৫ সালে প্রাসাদটি বানিয়েছিলেন হান্স টিয়েডমান। এই হান্স মূলত জার্মান। পরে আমেরিকায় পাড়ি জমান। ফ্রাঙ্কলিন প্রাসাদ বানানোর পরপরই স্ত্রী লুইসকে নিয়ে বাস করতে শুরু করেন হান্স। বছর কয়েকের মধ্যেই তাঁদের এক জোড়া ছেলেমেয়ে হয়-অগাস্ট ও এমা। তারপর হয় আরো তিনটি সন্তান। প্রাসাদটির সুখী গল্প এটুকুই। ১৮৮১ সালের ১৬ জানুয়ারি মারা যায় তাঁদের মেয়ে এমা, মাত্র ১৫ বছর বয়সে। এর কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান হান্সের বুড়ো মা। পরের তিন বছরে মারা যায় আরো তিন ছেলেমেয়ে।

Franklin-Palace2ভুতুড়ে ফ্রাঙ্কলিন প্রাসাদ

এর মধ্যেই টিয়েডমান প্রাসাদের বেশ কিছু পরিবর্তন-সংযোজন করান। লুকানো কামরা, গোপন পথ, গুপ্ত দরজাগুলো তখনই বানানো হয়। বানানো হয় এক বিশাল বলরুম। লাগানো হয় গ্যাসের বাতি। তাতে অবশ্য প্রাসাদের মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হয়নি। ফ্রাঙ্কলিন প্রাসাদে আবার মৃত্যু হানা দেয় ১৮৯৫ সালে। পেটের পীড়ায় ভুগে মারা যান লুইস টিয়েডমান। সে বছরই প্রাসাদটি মুলহাউসার পরিবারের কাছে বিক্রি করে দেন হান্স। কিন্তু এতে করে এর অশুভ প্রভাব থেকে রেহাই পাননি। পরের বছর হেনরিয়েত্তেকে বিয়ে করলেও শিগগিরই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ১৯০৮ সালে হান্সের একমাত্র উত্তরসূরি অগাস্ট সপরিবারে মারা যান। সে বছরই মারা যান হান্স নিজেও।

হান্স টিয়েডমান নাকি খুব একটা সচ্চরিত্রের ছিলেন না। স্ত্রী লুইসের পাশাপাশি র‌্যাচেল নামে তাঁর এক উপপত্নীও ছিল। এই র‌্যাচেল হান্সের অবাধ্য হয়ে আরেকজনকে বিয়ে করতে যাচ্ছিল। তখন হান্স তাঁর হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় গুঁজে প্রাসাদের টাওয়ারে ফেলে রাখেন। সেভাবেই মারা যান র‌্যাচেল। র‌্যাচেলের আত্মাকে ফ্রাঙ্কলিন প্রাসাদে দেখেছেন অনেকেই। একজন মেয়েকে গোঙাতেও শোনা যায় কখনো কখনো। র‌্যাচেলের এই ভূতের পরিচিতি ‘ওম্যান ইন ব্ল্যাক’ নামে।

টিয়েডমান শুধু র‌্যাচেলকেই না, তাঁর এক ভাইঝিকেও নাকি হত্যা করেছিলেন প্রাসাদের কোনো একটি গোপন পথে।

মুলহাউসারদের কাছে বিক্রির পরও প্রাসাদটিতে খুনোখুনি চলতে থাকে। মুলহাউসাররা ১৯১৩ সালেই প্রাসাদটি বিক্রি করে দেয় জার্মান সোশ্যালিস্ট পার্টির কাছে। রটনা আছে, এই জার্মান সোশ্যালিস্টরা আসলে ছিল নাৎসিদের চর। তারা প্রায় ২০ জন মানুষকে নাকি এই প্রাসাদেরই কোনো গোপন কামরায় মেশিনগান দিয়ে একেবারে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল।

এরপর দীর্ঘদিন প্রাসাদটি খালিই পড়ে ছিল। প্রায় ৫৫ বছর পর পার্টি প্রাসাদটি বিক্রি করে। এর মধ্যে এখানে নাকি শিশুদের ওপর নিষিদ্ধ ডাক্তারি পরীক্ষাও চালানো হয়েছিল। অনেক পরে, একটি গোপন কামরা থেকে ডজন ডজন বাচ্চার কঙ্কাল পাওয়া যায়। সেগুলো দেখেই এই অনুমান করা হয়।

১৯৬৮ সালে সোশ্যালিস্ট পার্টির কাছ থেকে কিনে জেমস রোমানো তাঁর স্ত্রী ও ছয় সন্তানসহ প্রাসাদটিতে বাস করতে শুরু করেন। কিন্তু বেচারা জেমসের তখন প্রাসাদটিতে ঘটে যাওয়া এত শত কাণ্ড সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। প্রথম দিনেই রোমানোদের সন্তানরা প্রাসাদের ওপরের তলা ঘুরে এসে মায়ের কাছে তাদের এক ছোট্ট মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়ার কথা জানায়। কাঁদতে থাকা মেয়েটির সঙ্গে বড়দের কখনোই দেখা হয়নি। যদিও প্রায়ই তাঁরা মেয়েটির কান্নার শব্দ শুনতে পেতেন। সবার ধারণা, মেয়েটি হচ্ছে টিয়েডমানদের প্রথম মারা যাওয়া সন্তান এমা।

মিসেস রোমানো অবশ্য কেবল ওই মেয়েটির কান্নাই না, ওপরের তলা থেকে অর্গ্যানের বাজনা, পায়ের শব্দ, গ্লাসের টুংটাং, এমনি নানা ধরনের শব্দই পেতেন। শেষমেশ অতিষ্ঠ হয়ে ১৯৭৪ সালে প্রাসাদটি বিক্রিই করে দেন তাঁরা। নতুন মালিক স্যাম মুসকাতেলো প্রথমে এখানে একটি গির্জা বানানোর চিন্তা করেছিলেন। পরে সব কাহিনী শুনে তিনি দর্শনীর বিনিময়ে ভুতুড়ে কাহিনী পছন্দ করা লোকদের বাড়িটি ঘুরে দেখানোর বন্দোবস্ত করেন। স্যাম প্রাসাদটির ইতিহাসও খুঁড়তে শুরু করেন। ঘুরে দেখতে থাকেন প্রাসাদটির প্রতিটি আনাচকানাচ। ডজন ডজন শিশুর কঙ্কালের গোপন কামরাটি তিনিই খুঁজে বের করেন। সে ঘটনার পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁর পনেরো কেজি ওজন কমে যায়। দিন দিন তাঁর শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। শেষমেশ তিনি প্রাসাদটি এক ডাক্তারের কাছে বেচে দেন।

এই ডাক্তারও প্রাসাদটি বেশি দিন হাতে রাখেননি। তাঁর কাছ থেকে এটি কিনে নেন ক্লিভল্যান্ডের পুলিশপ্রধান রিচার্ড হোঙ্গিস্টো। স্বামী-স্ত্রী মিলে খুব হইচই করে কিনলেও বছরখানেকের বেশি টিকতে পারেননি। তাঁদের কাছ থেকে প্রাসাদটি কেনেন জর্জ মির্সেটা। মালিকানা আবার হাতবদল হয় ১৯৮৪ সালে। নতুন মালিক মাইকেল ডি ভিঙ্কো। ভিঙ্কো প্রাসাদটি ছেড়ে দেন ১৯৯৪ সালে। আরো কয়েক দফা হাতবদল হয়ে ২০১১ সালে প্রাসাদটির নতুন মালিক হয়েছেন ইউরোপিয়ান ট্যাপস্ট্রিশিল্পী শায়ারা ডোনা রোজ। দেখা যাক ভুতুড়ে প্রাসাদে কত দিন টিকতে পারেন তিনি! সূত্র : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *