Skip to content

ভূমিকম্পের বিস্ময়

ভূমিকম্পদুর্গত নগর নেপালের কাঠমান্ডুতে মঙ্গলবার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চলছে উদ্ধার কাজ।

ভূমিকম্পদুর্গত নগর নেপালের কাঠমান্ডুতে মঙ্গলবার ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চলছে উদ্ধার কাজ।

শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
ভূমিকম্পের সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে, এটি কোনো পূর্বাভাস দেয় না। ধাঁ করে এসে একটা কড়া ঝাঁকুনি মেরে সব লন্ডভন্ড করে দিয়ে চলে যায়। কয়েক সেকেন্ডে ফেলে দেয় হাজারো লাশ। ধরাশায়ী করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢেলে হাজারো মানুষের শ্রমে গড়ে তোলা বহুতল ভবন। এতে দিনের পর দিন থমকে থাকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আচানক এসে মরণ আঘাত হানে বলেই ভূমিকম্প নিয়ে মানুষের যেমন ভয় রয়েছে, তেমনি রয়েছে অনেক কৌতূহল। সে কৌতূহল মেটাতে এখানে ভূমিকম্পের কিছু বিস্ময়কর তথ্য দেওয়া হলো:

যেখানে ভূমিকম্প কোনো বিষয় নয়
ভূমিকম্পের কথা শুনলে অনেকের যেমন গুরুকম্প শুরু হয়, যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় তা কোনো বিষয়ই নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রায়ই ছোটখাটো ভূমিকম্প হয়। এর মধ্যে আলাস্কায় হয় সবচেয়ে বেশি। সেখানে রিখটার স্কেলে ৭ তীব্রতার ভূমিকম্প হয় প্রায় বছরজুড়ে। আর গড়ে ১৪ বছর পর পর ৮ তীব্রতার একটা ভূমিকম্প থাকেই। এমন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে দিব্যি দিন কাটাচ্ছে আলাস্কার মানুষ। সেখানে এ যাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে ১৯৬৪ সালের মার্চে। আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে আঘাত হানে ওই ভূমিকম্প। এতে শতাধিক লোকের প্রাণহানি ঘটে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে ১৮১১ সালে বিস্ময়কর এক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের নিউ মাদ্রিদে। এর তীব্রতা ছিল ৮.১। ভূমিকম্পের পর আফটারশক বা পরাঘাত ছিল গোটা বছরজুড়ে।
ভূমিকম্পের শক্তি অসীম। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ভর করে উৎপত্তিস্থলের ওপর। এটি কাছে হলে অল্প একটু ভূমিকম্পেই ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। আর দূরে হলে শক্তিশালী ভূমিকম্পেও তেমন ক্ষতি না-ও হতে পারে। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে যে বিদ্যুৎ নিঃসরিত হয়েছিল, তা দিয়ে গোটা যুক্তরাষ্ট্রের সব বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তিন দিনের যাবতীয় বৈদ্যুতিক কাজ করা সম্ভব।

সবচেয়ে প্রলয়ংকরী কয়েকটি ভূমিকম্প
১৯২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর জাপানে ‘দ্য গ্রেট কানতো’ নামের ভয়াবহ এক ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে অগ্নিকাণ্ড ও সুনামির ঘটনা ঘটে। দেড় লাখ লোকের প্রাণহানি ঘটে। ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই চীনের তাংশানে আঘাত হানা ভূমিকম্পে এক লাখ লোকের মৃত্যু ঘটে। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পটি হয়েছে চীনেই। ১৫৫৬ সালের এই ভূমিকম্পে আট লাখ ৩০ হাজার লোকের প্রাণ ঝরে যায়। ১৯৬০ সালের ২২ মে চিলিতে আঘাত হানা ভূমিকম্পটি ছিল সবচেয়ে তীব্র। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৯.৫। এতে সুনামি হয়েছিল। ৩০০ থেকে দুই হাজার লোক মারা যায় বা নিখোঁজ হয়।
এশিয়ার অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ ইরান। ১৯৭২ সাল থেকে সে দেশে ১১টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এরমধ্যে সবচয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পটি আঘাত হানে ১৯৯০ সালের ২১ জুন। এতে প্রায় ৫০ হাজার লোক নিহত হয়। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারায়। এই উপমহাদেশে পাকিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। সে দেশে সত্তরের দশক থেকে এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে ৪০ টির বেশি ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে ২০০৫ সালের ৮ অক্টোবর। রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৭.৬। ডন অনলাইনের তথ্যমতে, কাশ্মীরসহ উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় আঘাত হানা এই ভূমিকম্পে ৮০ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়। আহত হয় দুই লাখের বেশি মানুষ। ঘরবাড়ি হারায় ৪০ লাখ লোক। ভারতেও ভূমিকম্পের ঘটনা কম নয়। ২০০১ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে গুজরাট রাজ্যে শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প নাড়া দিয়ে যায়। এতে প্রায় ৩০ হাজার লোক প্রাণ হারায়।

বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিতে ভূমিকম্প
ভূমিকম্প নিয়ে প্রাচীনকাল থেকে মানব সমাজে নানা ধরনের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় আচার চালু রয়েছে। খ্রিষ্টান ও ইহুদি সমাজে অনেক দিন ধরে এ ধারণা রয়েছে যে মন্দ লোকদের শাস্তি দিতে ঈশ্বর ভূমিকম্প ঘটান। প্রাচীন গ্রিকদের বিশ্বাস ছিল, দেবরাজ জিউসের সঙ্গে এক যুদ্ধে হেরে যান অপর দেবতা অ্যাটলাস। জিউস তাঁকে সাজা হিসেবে পৃথিবী কাঁধে তুলে নিতে নির্দেশ দেন। সেই থেকে অ্যাটলাসের কাঁধে রয়েছে পৃথিবী। এক কাঁধে পৃথিবী ভার বহন করতে করতে অ্যাটলাস যখন হাঁপিয়ে ওঠেন, তখন পৃথিবীকে আরেক কাঁধে স্থানান্তর করেন। আর তখন ভূকম্পন হয়।
চীনাদের মধ্যে এ ধারণা চালু রয়েছে যে তাদের শক্তিধর ড্রাগন মাটির অনেক গভীরে বাস করে। ড্রাগন কখনো কোনো কারণে বিরক্ত হলে নড়েচড়ে ওঠে। আর তখনই পৃথিবী কেঁপে ওঠে ভূমিকম্প ঘটায়। জাপানি পুরাণে আছে, বিশাল এক মাগুর মাছের পিঠে অবস্থান করছে পৃথিবী। মাছটি কখনো নড়ে উঠলে ভূমিকম্প ঘটে।

পশুপাখি আগাম সংকেত পায়!
কোথাও ভূমিকম্প ঘটার আগাম সংকেত পাওয়ার উপায় আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তবে পশুপাখি নাকি টের পায়। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলেও এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে ভূরি ভূরি। ১৯৭৫ সালে চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর আগে হঠাৎ করে ইঁদুর, খরগোশ, সাপসহ গর্তে বাস বিভিন্ন প্রাণী প্রচুর পরিমাণে বেরিয়ে আসতে থাকে। অথচ সময়টা ছিল শীতের মাঝামাঝি, যখন এসব প্রাণীর শীতনিদ্রায় থাকার কথা।
১৯০৬ সালে সানফ্রান্সিসকোতে বড় একটি ভূমিকম্প আঘাত হানার আগের রাতে সেখানকার ঘোড়াগুলো আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং অস্থির আচরণ শুরু করে। ১৯৬৪ সালে আলাস্কায় ভূমিকম্প ঘটার আগের দিন শীতনিদ্রা থেকে কোডিয়াক ভালুকগুলো বের হয়ে আসে। অথচ ওই সময় তাদের ঘুমিয়েই থাকার কথা। এভাবে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্পের আগে গরু, ঘোড়া, গাধা, কুকুর, বেজি, কাক, তেলাপোকা ইত্যাদি প্রাণীর অস্বাভাবিক আচরণের খবর পাওয়া গেছে। প্রথম আলোর সৌজন্যে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *