নাবীল অনুসূর্য
বেশ ঘটা করে আয়োজন করা দৌড় প্রতিযোগিতা। না, মানুষের নয়, চারপেয়ে জন্তুর। প্রতিযোগিতার সময় ওদের পিঠে জকিও থাকে। না, পশুগুলো ঘোড়াও নয়, জকিগুলোও মানুষ নয়। এই দৌড় প্রতিযোগিতায় দৌড়ায় কতগুলো ভেড়া! আর জকি হয় উলের পুতুল। প্রতিযোগিতাটা হয় গ্রেট ব্রিটেনের অন্তর্ভুক্ত স্কটল্যান্ডে। দেশটির ডামফ্রিস অ্যান্ড গ্যালোওয়ে প্রদেশের মোফেট শহরে ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর আগস্ট মাসে এই অদ্ভুতুড়ে দৌড় প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে।
এতে অংশগ্রহণ করে অনেকগুলো ভেড়া। এই ভেড়াগুলো মূলত শহরটির স্থানীয় খামারের। দৌড়ানোর জন্য প্রাণীগুলোকে রীতিমতো সাজানোও হয়। ওদের জামাকাপড় পরানো হয়। কোনো কোনো ভেড়ার মাথায় আবার হ্যাটও চাপিয়ে দেওয়া হয়। আর পিঠে জকির মতো করে বসিয়ে দেওয়া হয় উলের পুতুল, সেঁটে দেওয়া হয় ভেড়াদের জামার গায়ে । আসল জকিদের মতো এই উলের জকিদেরও পেটে-পিঠে নম্বর লেখা থাকে। আর তার পরই দৌড়ের ময়দানে নামিয়ে দেওয়া হয় ভেড়াগুলোকে।
অবশ্য প্রতিযোগিতাটা কোনো ময়দানে হয় না। হয় মোফেটের প্রধান সড়কে। রাস্তার মাঝে ব্যারিকেড দিয়ে ভেড়াদের দৌড়ের ট্র্যাক বানানো হয়। সেই ট্র্যাকে আবার মাঝেমধ্যে গাছের গুঁড়ি ফেলে প্রতিবন্ধকতাও সৃষ্টি করা হয়। আর ব্যারিকেডের দুই পাশে দর্শকরা সারি বেঁধে দৌড় উপভোগ করে। হাততালি দিয়ে, শিস দিয়ে, হুল্লোড় করে ভেড়াদের উৎসাহ দিয়ে যায় দর্শকরা।
এতেই যে ভেড়ারা খুব উৎসাহিত হয়, তা ঠিক নয়। ভেড়াগুলো তো আসলে খামারের ভেড়া। দৌড় প্রতিযোগিতায় কী করতে হয়, সেগুলো তাদের ওভাবে শেখানোও হয় না। কাজেই জকিগুলো উলের পুতুল হলেও, ভেড়াদের ঠিক রাস্তায় চালানোর জন্য একজনকে লাগেই। তাকে ঠিক ‘জকি’ না বলে, ‘রাখাল’ বলা যেতে পারে। তার কাজ প্রাণীগুলোকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে রাস্তার শেষ মাথায় নিয়ে যাওয়া। কখনো দেখা যায়, ছুটতে ছুটতে এক জায়গায় সবগুলো ভেড়া দাঁড়িয়ে পড়ল। কিংবা হয়তো কয়েকটা ভেড়া উল্টোদিকেই আবার ফিরে আসতে শুরু করল। আবার দেখা গেল, কয়েকটা ভেড়া মিলে শিং বাগিয়ে ঢুসাঢুসি করে একটা গোলমালই পাকিয়ে তুলল। তখন সেই রাখালকে গিয়ে হইহই করে ভেড়াদের ঠিক পথে চালনা করতে হয়। আর ভেড়াদের দৌড় বলে, এই রাখালটিও নিতান্ত বালকই হয়। খামারের কম বয়সী ছেলে-ছোকরাদের মধ্যে উৎসাহী কাউকে এ কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়। আর বয়স্ক অভিজ্ঞ কাউকে বেছে নেওয়া হয় ভেড়াগুলোকে একাট্টা করে দৌড় শুরু করানোর জন্য। প্রতিযোগিতা বলে কথা! কোনো ভেড়া আগে দৌড় শুরু করবে, কোনো ভেড়া পরে; সেটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না।
এই দৌড় প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে মোফেটে একরকম মেলাই বসে যায়। স্থানীয় যত পাব, রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে কিংবা উপহারসামগ্রী-মনিহারিসামগ্রীর দোকান-সবাই সেদিন রাস্তায় স্টল দেয়। মানুষজন ঘুরে ঘুরে ভেড়াদের দৌড় প্রতিযোগিতা দেখে, আর এটা-সেটা কেনে, এটা-সেটা খায়।
ভেড়ার দৌড় প্রতিযোগিতার মতো অদ্ভুত একটা বিষয়, সঙ্গে আবার মেলার আবহ। সব মিলিয়ে সেদিন মোফেটে যে পর্যটকদের বেশ আনাগোনা হয়, তাতে সন্দেহ নেই। দর্শনীয় স্থান হিসেবে আগে থেকেই মোফেটের একটা সুখ্যাতি ছিল। এই মেলা সুখ্যাতির পালে আরো হাওয়া লাগিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ভেড়ার দৌড় উপলক্ষে বাজি ধরার আয়োজনও থাকে। স্থানীয় ও পর্যটক-সবাই যে যার পছন্দমতো ভেড়ার ওপর বাজি ধরে।
ভেড়ার দৌড়ের আয়োজনটা উদ্ভট মনে হলেও, এই আয়োজনের পেছনেও কিন্তু কারণ আছে। অনেক আগে থেকেই মোফেট উল উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। মানে, শহরটা ভেড়া লালনপালনের জন্য বেশ পয়মন্ত। এ কারণেই আগে থেকেই লোম কেটে ফেলায় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ভেড়াগুলো থাকে লোমহীন। শহরটিতে বেশ পুরনো একটা ভেড়ার ভাস্কর্যও আছে। ১৮৭৫ সালে উইলিয়াম কোলভিন নামের এক স্থানীয় ব্যবসায়ী ভাস্কর্যটা গড়িয়ে দেন। তবে মজার বিষয় হলো, উইলিয়াম ব্রডি নামের স্কটিশ ভাস্করের বানানো এই ভেড়ার কোনো কান নেই। সূত্র : কালের কণ্ঠ