কালের বিবর্তনে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে প্রাচীণ সভ্যতার অনেক নিদর্শন। এরপরও হাজার বছর পুরোনো কিছু শহরের ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর কিছু কোণে টিকে আছে এখনও। এই নিদর্শনগুলোই আমাদের দেয় প্রাচীন সভ্যতার ধারণা। আমরা বুঝতে পারি মানুষ কতটা শৈল্পিক ছিলো সেই প্রাচীণ সময়েও।
ছবিতে দেখুন এমনই ২৫টি শহরের ধ্বংসাবশেষ যা নিশ্চিতভাবেই আপনাকে আকৃষ্ট করবে।
১৫ শতকের দিকে পেরুর মাচুপিচু রাজকীয় এবং ধর্মীয় নেতাদের আবাসস্থল ছিলো। ১৯১১ সালে আবিষ্কৃত এই সাইটটিতে ১৫০টি পাথরের কারুশিল্প রয়েছে।
পম্পেই ন্যাপলসের নিকটবর্তী একটি রোমান শহর। ৭৯ খ্রিস্টাব্দে ভিসুভিয়াসের অগ্নুৎপাতে এটি ঢাকা পড়ে গিয়েছিলো। ওই ঘটনায় ২ হাজার মানুষ প্রাণ হারান। এর দেড় হাজার বছর পরে ১৭৪৮ সালে আবিস্কৃত হয় শহরটি।
বিশ্বে সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম হচ্চে এই ‘স্টোন হেঞ্জ’। প্রতিবছর লাখ লাখ দর্শনার্থী এখানে আসন। ধারণা করা হয় এটি তৈরিতে প্রায় দেড় হাজার বছর লেগেছিলো।
মেক্সিকোর পবিত্র স্থান ‘চিচেন ইতজা’। হাজার বছর আগের এই মায়ান সেন্টারটি ৪১৫-৪৫৫ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম স্থাপত্য।
কম্বোডিয়ার সিয়েম রিপ নামক এই খামির রাজ্যের নিদর্শন। ধারণা করা হয় ৯-১৫ শতকের দিকে এটি স্থাপন করা হয়। আয়তনে এটি নিউইয়র্কের ৫টি পৌরসভার চেয়েও বড়।
রোমের কলোসিয়াম। গ্ল্যাডিয়েটরদের শহর বলেই বেশি পরিচিত এই নিদর্শনটি। ৭০-৭২ খ্রিষ্টাব্দে এটি রোমান নাগরিকদের বিনোদনের জন্য রাজা ভেসপাশিয়ান উপহার দিয়েছিলেন।
১৪ শতকের এই শহরটি এখনো গ্রীসের মাইসিনাতে দাড়িয়ে আছে।
চিলি’র ২৩০০ মাইল পশ্চিমাঞ্চলে এই ইস্টার দ্বীপটিকে বলা হয় মোয়াই অফ রানো রাকাউ। মোয়াইয়ে ৯০০ পাথরের মূর্তি রয়েছে। এবং প্রত্যেকটি মূর্তির ওজন ১৩ টন।
তুরস্কের ক্যাপাডোসিয়া শহরটি আসলে রুপকথার রাজ্যের মতো। এটি হিটি রাজ্যের একটি অংশ। খ্রিষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে এই চিমনিগুলো একইসঙ্গে বাড়ি ও উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হত।
জর্ডানের ডেড এবং রেড সি এর মাঝামাঝি অবস্থিত এই পেত্রা শহরটি মূলত সৌদি আরব, মিশর এবং সিরিয়ার সংযোগস্থল হিসেবে ছিলো। স্থানটির ধ্বংসাবশেষ এখনো মনোমুগ্ধকর।
যুক্তরাজ্যের অন্যতম জনপ্রিয় স্থান রোমান বাথ। এখানে আসলে রোমান রাজাদের স্নানের আনুষ্ঠানিকতা চলতো। এখানে রাজকীয় সব গোসলখানা ছাড়াও এর নিচের সুড়ঙ্গও দেখতে পারে দর্শনার্থীরা।
তুরস্কের ইফিয়াস শহরটিতে আসলে বেশ কয়েকটি সাম্রাজ্য ছিলো। গ্রিক, পারস্য, রোমান, অট্টম্যান, বিজাইনথাইন সাম্রাজ্যে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বসবাস করতো। ২য় খ্রিস্টাব্দে তৈরি এই সাম্রজ্যের এখনো বেশকিছু অংশ অক্ষত রয়েছে। আর তা দেখতেই ভীড় করে হাজারো দর্শনার্থী। এখানে আরটিমাস দেবীর মন্দির রয়েছে যা সপ্তাশ্চর্যের একটি।
ভারত মহারাষ্ট্রের ইলোরায় ৩৪টি মন্দির ও মঠ রয়েছে। ৬০০-১০০০ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত এই স্থানটিতে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের বেশকিছু নিদর্শন রয়েছে।
মেক্সিকোর অদূরে পবিত্র তিওথিউচান এ মন্দির ও পিরামিডসহ রয়েছে বেশকিছু প্রাচীন সভ্যতা।
পিরামিড নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। গিজার তিনটি পিরামিড মিশরের তিন ফারাও খুফু, খাফরে এবং মেনকারুর নামানুসারে রাখা। সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম এই পিরামিড এখনও সারাবিশ্বের লাখ লাখ পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্র।
খ্রিষ্টপূর্ব ৭ম শতকে রোমের এই নিদর্শনটি মূলত রোমান সাম্রাজ্যের সামাজিক, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক প্রাণকেন্দ্র ছিলো।
ভারতের অজন্তা গুহায় এই বৌদ্ধ মিনারটি খ্রিষ্টপূর্ব ১ম বা ২য় শতকে নির্মাণ করা হয়েছিলো। সেখানে পাঁচটি মন্দির ও ২৪ টি মঠ ছিলো।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিখ্যাত গিরিখাত এটি। ৬০০-১৩০০ থ্রিস্টাব্দে তৈরি হওয়া এই নিদর্শনটি এখনো খুবই জনপ্রিয়।
চীনের হেনান প্রদেশের দ্য লংম্যান গ্রোটোসে ২৩০০ গুহা রয়েছে। ওই এবং ট্যাং সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বড় নিদর্শন এই লংম্যান গ্রোটোস।
মিয়ানমারের বাগান নামক এই স্থানটিকে বলা হয় মন্দিরের শহর। শহরটিতে ২ হাজার মিনার রয়েছে। রাজা আনারাথারর সময় এটিই ছিলো সাম্রাজ্যের রাজধানী।
যুক্তরাজ্যের হাডরিয়ান দেয়ালটি দেশটির সবচেয়ে বড় রোমান সভ্যতার নিদর্শন। ৮০ মাইল জায়গা জুড়ে ও ৬ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এই দেয়ালটি তৈরি করতে লেগেছিলো ১৫০০ শ্রমিক ও ছয় বছর।
ইন্দোনেশিয়ার জাভায় বড়বদুর নামক বৌদ্ধ মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিলো ৮ম বা ৯ম শতকে। এই মন্দিরে ৭২টি বু্দ্ধ মূর্তি রয়েছে।
চীনের মহাপ্রাচীরের ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নেই। এর নামই বলে দেয় এর দাম্ভিকতা ও সৌন্দর্য। খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতকে নির্মাণ কাজ শুরু হওয়া এই প্রাচীরের কাজ চলে শত বছর ধরে। বাইরের কোনো শক্তির আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য এই প্রাচীরটি তৈরি করেছিলো চীন। এখন এটি সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম এবং দর্শনীয় একটি স্থান।
তিউনিশিয়ার তিউনিশ উপসাগরের পাশেই অবস্থিত কার্থেজ শহরটি প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন। খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতকে নির্মিত এই স্থানটি মূলত ব্যবসায়িক কেন্দ্র ছিলো। ১৪৬ খ্রিষ্টপূর্বে রোমানরা এটিকে ধ্বংস করে দেয়। এরপর আবার নতুন করে এটি নির্মাণ করে তিউনিশিয়ানরা। কালের বিবর্তনে অনেক কিছু্ই ধ্বংস হয়ে গেলেও এখনো সেখানে রয়েছে দেখার মত কিছু স্থান।
ক্রোয়েশিয়ার ডাইওক্লেতিয়ান এর এই প্রাসাদটি খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় বা ৪র্থ শতকে নির্মাণ করা হয়েছিলো। এখনও প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষটি শহরজুড়ে পাওয়া যায়।