Skip to content

ভ্রমণের নতুন জায়গা কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা লেকসিটি

Lakecity
হাতিরঝিল যেমন রাজধানীবাসীর আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্র, তেমনি কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা লেকসিটিও হয়ে উঠেছে স্থানীয় মানুষের আনন্দ-বিনোদনের সঙ্গী। পুরো কাজ শেষ হতে লাগবে আরো কয়েক মাস। তবে এরই মধ্যে খুলে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি সেতু। জানিয়েছেন
শফিক আদনান

একসময়ের খরস্রোতা নরসুন্দা নদী হারিয়ে যেতে বসেছিল কিশোগঞ্জের মানচিত্র থেকে। দখল, জলাবদ্ধতা, ময়লা-আবর্জনা অসহনীয় হয়ে উঠেছিল শহরবাসীর কাছে। নরসুন্দা উদ্ধার ও নদীকেন্দ্রিক শহর নির্মাণে ২০১২ সালে পরিকল্পনা নেয় সরকার। একনেকের (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ) বৈঠকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘নরসুন্দা নদী পুনর্বাসন ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভাসংলগ্ন এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প।’ বরাদ্দ আসে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা। পরে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয় আরো ৪০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে। জেলার হোসেনপুর উপজেলা থেকে শহর হয়ে নীলগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৩৩ কিলোমিটার নদী পুনঃখনন করা হয়।

Lakecity2শহরের ভেতরের ছয় কিলোমিটার নদীর পাড় সিসি ব্লক দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। নদীর দুই পারে করা হয়েছে হাঁটা পথ, সিরামিক ইটের দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত। বসানো হয়েছে ছোট ছোট বসার বেঞ্চ। বিকেলে ওয়াকওয়েতে ভিড় জমে যায়। গুরুদয়াল সরকারি কলেজের কাছে নদীর ওপর তৈরি হয়েছে মুক্তমঞ্চ। পাশে একটি গোলপুকুর। এটিও দর্শনার্থীদের প্রিয় জায়গা। কিছু দূরেই আছে সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এর কাজ এখনো শেষ হয়নি। মণিপুরঘাট এলাকায় করা হয়েছে দুই লেনের সেতু। বিভিন্ন স্থানে করা হয়েছে চারটি দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ ও আটটি ঘাট। পৌরসভার পেছনে ও গৌরাঙ্গ বাজার এলাকার মিনি পার্ক তৈরির কাজও এগিয়ে চলছে। পার্কগুলো চালু হলে সৌন্দর্য আরো বেড়ে যাবে।

পরিবারপরিজন নিয়ে প্রতিদিন এখানে ভিড় করে শহরের লোকজন। কথা হলো বত্রিশ এলাকার বাসিন্দা আসাদের সঙ্গে, ‘আমরা পাঁচ-সাত বছর আগের কিশোরগঞ্জকে ভুলে যেতে চাই। ওটা ছিল এক দুঃস্বপ্নের মতো।’

গাইটাল এলাকার গৃহিণী সুলতানা জামান বলেন, ‘আমার দুই সন্তান এত দিন প্রায় ঘরবন্দিই ছিল। এখন তাদের নিয়ে প্রায়ই লেকসিটিতে ঘুরতে আসি। ছোট ছোট শিশু মা-বাবার সঙ্গে এখানে আসে।’

শহরের ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বললেন, ‘ভোরে মাঝেমধ্যে লেকসিটিতে হাঁটাহাঁটি করি। মনে হয় নতুন এক জায়গায় বুঝি চলে এলাম।’
সাংস্কৃতিককর্মী রুমন চক্রবর্তী জানান, ‘মাঝেমধ্যে নরসুন্দা নদীর ওপর নির্মিত মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান ও নাটক হয়। প্রচুর দর্শক হয়। উন্মুক্ত আকাশের নিচে নদীর ওপর অনুষ্ঠান—এ এক দারুণ অভিজ্ঞতা।’

প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল নদীখনন করে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে নরসুন্দায় পানিপ্রবাহ তৈরি। তবে ৩৩ কিলোমিটার নদী খননের পরও নরসুন্দা পানিপ্রবাহ পায়নি।

প্রকল্প পরিচালক আবদুস সালাম মণ্ডল এ বিষয়ে কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ‘যখন পরিকল্পনা হয়েছিল তখন ব্রহ্মপুত্রের অবস্থা ভালো ছিল। ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে যাচ্ছে। এ নদী থেকে নরসুন্দায় পানি আনা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

কিশোরগঞ্জ স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মওলা বলেন, ‘সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে পানিপ্রবাহের জন্য নতুন আরেকটি প্রকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে।’

লেকসিটি যতটুকু হয়েছে তা নিয়েই মগ্ন শিশু থেকে নারী, ছেলে থেকে বুড়ো—সবাই। এ লেকসিটির জন্যই উচ্ছেদ হয়েছে অনেক অবৈধ স্থাপনা। আর বলতে গেলে আবর্জনা ও ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে তুলে আনা হয়েছে নতুন এক শহরকে। কয়েক মাস পর লেকসিটির সব কাজ শেষ হবে—এমন আশায় উত্ফুল্ল শহরবাসী। সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *