Skip to content

ভ্রমণের নতুন ঠিকানা বিমান জাদুঘর

Bimanআকাশে ওড়ার স্বপ্ন কমবেশি আমাদের সবারই আছে। পাখির মতো আকাশে ভেসে বেড়াতে না পারলেও এখন উড়োজাহাজে করে মানুষ আকাশে উড়তে পারে। তবে উড়োজাহাজে করে ঘুরে বেড়ানো, উড়োজাহাজকে কাছ থেকে দেখার সাধ ছোট-বড় সবার থাকলেও সে সাধ্য আমাদের কয়জনের আছে? উড়োজাহাজকে কাছ থেকে দেখার এবং আপনার বিমান ভ্রমণের ইচ্ছাটাকে একটু হলেও পূরণ করতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী নির্মাণ করেছে দেশের প্রথম বিমান বাহিনী জাদুঘর।

রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দরের পশ্চিম রানওয়েতে (আইডিবি ভবনের বিপরীত পাশে) অবস্থিত দেশের প্রথম এই বিমান জাদুঘর। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের ইতিহাস, সাফল্য ও উন্নয়নের ক্রমবিকাশকে সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রয়াসে এই জাদুঘর ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে উদ্বোধন করা হয় এবং দেশি-বিদেশি সব দর্শকের জন্যই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

জাদুঘরের প্রবেশ মূল্য মাত্র ২০ টাকা। টিকিট কাউন্টার অতিক্রম করলেই বামপাশে চোখে পড়বে নীলাদ্রি। এই দোকানে পাওয়া যাবে বিমান বাহিনীর স্মারকসহ আরো অনেক কিছু। ডান পাশে জাদুঘরের অফিস পেরুলে একটু সামনেই চোখে পড়বে একটি মানচিত্র। এক নজর মানচিত্রে চোখ বুলালেই আপনার ধারণা হয়ে যাবে পুরো জাদুঘরের কোথায় কী আছে।

সামনের দিকে এগোতেই চোখ আটকে যাবে দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারায়। ফোয়ারার পাশেই দাঁড়িয়ে বিশাল আকৃতির এক বিমান এন-২৪ পরিবহন বিমান। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম যাত্রীবাহী বিমান। রাশিয়ায় তৈরি এই বিমান ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে বলাকা নামে সংযোজিত হয়। ৪৪ জন যাত্রী ধারণক্ষমতার এই বিমান তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করতেন। আপনি চাইলে চড়ে দেখতে পারেন বিমানটিতে। মাত্র ৩০ টাকার টিকিট সংগ্রহ করে ঘুরে দেখতে পারেন পুরো বিমানটি। বিমানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের সুব্যবস্থা রয়েছে।

বলাকার পাশেই রয়েছে দুটি রাডার। পি-৩৫-এম ও পিআরভি-১১ নামের রাডার দুটি ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ব্যবহৃত হয়। প্রতিকূল আবহাওয়াতে বিমানকে সঠিক নির্দেশনা দেওয়া পুরাতন এই রাডারটিকে খুব কাছে থেকে দেখে নিতে পারবেন আপনি। বাংলাদেশকে এই বিমানটি দিয়েছে চীন সরকার।

বিমান জাদুঘরে আপনি আরো দেখতে পাবেন এমআই-৮ নামের দুটি হেলিকপ্টার। রাশিয়ায় তৈরি হেলিকপ্টার দুটি ১৯৭২ সালে সংযোজিত হয়ে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হেলিকপ্টার দুটিতেও চড়তে পারেন মাত্র ৩০ টাকার বিনিময়ে।

বিমান জাদুঘরে রয়েছে গ্লাইডার বিমান, রয়েছে টি-৩৭, ফুগা সিএম-১৭০ ম্যাজিস্টার, পিটি-৬ ও এয়ার টুওরার ট্রেইনার নামের প্রশিক্ষণ বিমান। এই বিমানগুলো আমাদের ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে আছে।

বিমান জাদুঘরে চোখে পড়বে এয়ারটেক কানাডিয়ান ডিএইচই-৩/১০০০ অটার। এই বিমানটিকে বোমারু বিমান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। বিমানটি দ্বারা ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে আক্রমণের মাধ্যমে ইস্টার্ন তেল শোধনাগার এবং চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে সফল অভিযান পরিচালিত হয়।

মিত্রবাহিনীর ব্যবহৃত তিনটি যুদ্ধবিমান হান্টার, মিগ-২১ এফএল এবং ন্যাটও জাদুঘরে ঠাঁই পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত বাংলাদেশকে ভূমি শত্রু থেকে রক্ষা করতে এই হান্টার বিমানটি ব্যবহার করে । মিত্র বাহিনীর এই বিমানটিকেও রাখা হয়েছে বিমানবাহিনীর জাদুঘরে । ভারতীয় বিমানবাহিনীবাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে এই বিমানগুলো উপহার দেয়। এ ছাড়া রয়েছে যুদ্ধবিমান এফটি-৫, এফটি-৭ প্রশিক্ষণ বিমান ।

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর, বিজয়ের মাত্র পাঁচদিন আগে টাঙ্গাইলে সেনা নামানোর কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল একটি বিমান। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধে লড়াইয়ে এবং বাংলাদেশের বিমানবাহিনী গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বিমানের। সেই বিমানটির নাম ডাকোটা বিমান। এত দিন বিমানটি ভারতেই ছিল। মুক্তিযুদ্ধের বহু স্মৃতি বিজড়িত এই ডাকোটা বিমান ভারত সরকার বাংলাদেশকে উপহার দেয়। সেই ঐতিহাসিক ডাকোটা (ডিসি-৩) বিমানটিও আছে বাংলাদেশের বিমানবাহিনী জাদুঘরে । ১৯৭১ সালে এই ডাকোটাসহ তিনটি বিমান নিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। ওই সময় ভারত এই বিমান দিয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিল। ভারতের কাছ থেকে বিমানটি পাওয়ার পর বেসামরিক যাত্রী পরিবহনের কাজ করা হতো। পরে এটি যুদ্ধবিমানে রূপান্তর করা হয় ।

ডাকোটার পাশাপাশি জাদুঘরে স্থান পেয়েছে ‘অ্যালিয়ট’ হেলিকপ্টার। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সেনানিবাসে আঘাত হানা হয়েছিল এই হেলিকপ্টার দিয়ে। তারপর হেলিকপ্টারটি ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-৮৬ নামের যে বিমানটি ব্যবহার করে সেটিও আছে বিমান জাদুঘরে।

মুক্তিযুদ্ধে বিমানবাহিনীর শহীদদের স্মরণ করতে তৈরি করা হয়েছে শহীদ কর্নার। সেখানে দেখে আসতে পারেন শহীদদের ভাস্কর্য। সাময়িক হাল্কা খাবারের জন্য স্কাই মেন্যু নামে আছে একটি স্ন্যাক্সের দোকান। একটুখানি বিশ্রাম এবং পিজা, বার্গারসহ বিভিন্ন রকমের হাল্কা খাবার পেতে পারেন এখানে।

বিমান বাহিনী জাদুঘরের ডানদিকে রয়েছে বিভিন্ন রকমের শিশুদের খেলার উপকরণ, বিভিন্ন পশুপাখির প্রতিকৃতি দিয়ে সাজানো চাইল্ড কর্নার । জাদুঘরের কর্মরত একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুব শিগগিরি এখানে যুক্ত করা হবে দোলনা, চরকা, মিনি ট্রেনের মতো দারুণ সব মজার জিনিস। দর্শনার্থীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন ভিন্নধর্মী এই জাদুঘরকে সাদরে গ্রহণ করেছে দেশবাসী।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিমান বাহিনী জাদুঘরটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। সোম থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে জাদুঘর। রোববার রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য জাদুঘরটি বন্ধ থাকে।
সূত্র : এনটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *