পাবনার চাটমোহরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি রসমালাই। যে মিষ্টি দেখলেই জিভে আসে পানি। হয়তো বলবেন, এ আর এমন কি। রসমালাই তো সারাদেশেই পাওয়া যায়। না, চাটমোহরের মনো পালের রসমালাইয়ের সঙ্গে অন্য রসমালাইয়ের তুলনাই চলে না। এখানকার রসমালাইয়ের স্বাদ যে একবার পেয়েছে সে জীবনেও তা ভুলবে না। বিদেশেও এর চাহিদা রয়েছে। ভারতের শান্তি নিকেতন থেকে আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি পর্যন্ত পৌঁছে গেছে এই রসমালাইয়ের সুখ্যাতি।
তখন ব্রিটিশ আমল। চাটমোহর শহরের কৃষ্ণদাস কুন্ডুর গদিঘরের সামনে একটি টিনের চালের ছোট্ট মিষ্টির দোকান। মালিক মনো পাল। সেই মনোপালই প্রথম চাটমোহরে রসমালাই বানানো শুরু করেন। এ কথা জানালেন মনো পালের ভাতিজির ছেলে কমল পাল। তিনিই এখন মনো পালের মিষ্টির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
চিরকুমার দাদুর মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে তিনি সেই মিষ্টির দোকানের মালিকানা পেয়েছেন। এখন তার দোকানের নাম অন্নপূর্ণা মিষ্টান ভান্ডার। অবস্থান শহরের মধ্যবর্তী দোলবেদীতলা এলাকায়। দোকানে বসে সেই মজাদার রসমালাই খেতে খেতে কথা হয় কমল পালের সাথে। কমল পাল বলেন, ১৯৬৬ সালে আমি দাদুকে রসমালাই বিক্রি করতে দেখেছি ৪ টাকা সের দরে। আর সে সময় দুধের সের ছিল ৩ আনা, ৪ আনা।
তিনি বলেন, আমি ১৯৮২ সালে যখন মিষ্টির ব্যবসা শুরু করি তখন ১৬ টাকা সের দরে রসমালাই বিক্রি করেছি। তখন দুধ ছিল ৩-৪ টাকা সের। আর এখন বিক্রি করছি ৩০০ টাকা কেজি দরে। এখন দুধের কেজি ৫০ টাকা।
তিনি বলেন, রসমালাইয়ে দুধই আসল উপাদান। তাই দুধের দামের উপর এই মিষ্টির দাম ওঠানামা করে। কেন চাটমোহরের রসমালাই বিখ্যাত- জানতে চাইলে কমল পাল বলেন, প্রথমত লাগবে খাঁটি দুধ। দ্বিতীয়ত সেই দুধ খুব ঘন করে জ্বাল করতে হবে। তৃতীয়ত মিষ্টির গুটির ছানাটাও হতে হবে খাঁটি দুধের। টানা ছানা হলে মিষ্টি ভালো হবে না।
তিনি জানান, দাম বেশি হওয়ায় বিক্রি কমে গেছে এখন। দিনে ৪০ থেকে ১০০ কেজি বিক্রি হয়। স্পেশাল অর্ডার থাকে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ নানা অঞ্চলের মানুষ প্রতিদিনই মিষ্টি কিনে নিয়ে যায়। কমল পাল জানান, চাটমোহরসহ আশপাশের এলাকার অনেক মানুষ এখন আমেরিকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে থাকেন। তারা বাড়ি এলে যাবার সময় স্পেশাল অর্ডার দিয়ে রসমালাই বানিয়ে সাথে করে নিয়ে যান। সৌজন্যে : দৈনিক ইত্তেফাকের চাটমোহর (পাবনা) সংবাদদাতা