ইসরায়েলের নেগেভ মরুভূমি। পানিবিহীন, সূর্যে ঝলসানো নির্মম পরিবেশ। সেখানেই কম পানিতে ফসল ফলানো নিয়ে মৌলিক গবেষণা চালাচ্ছেন ইয়াকব-ব্লাউস্টাইন মরুভূমি গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা।
প্রচণ্ড গরম, বৃষ্টি প্রায় নেই বললেই চলে, প্রখর রৌদ্র – নেগেভ মরুভূমির গাছপালাকে এমন এক কঠিন পরিবেশের ধাক্কা সামলাতে হয়। সেটা তারা কীভাবে করে, সেটাই হলো ব্লাউস্টাইন ইনস্টিটিউটের গবেষক স্ডে বোকার-এর গবেষণার বিষয়। স্ডে ইসরাইলের নাগরিক।
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখছেন, কঠিন পরিবেশ সত্ত্বেও কীভাবে শস্য বা শাকসবজি উৎপাদন করা যায়। সে জন্য তাঁরা মাঝেমধ্যে গাছপালাগুলোকে গাড়িতে চড়িয়ে ঘোরান, যদিও ধীরেসুস্থে। এর মাধ্যমে এক একটি কন্টেনারে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছেন সেচ বিশেষজ্ঞ নাফতালি লাজারোভিচ ও তাঁর সহকর্মীরা। বর্তমানে তারা ক্যাপসিকাম নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন। ইয়াকব-ব্লাউস্টাইন মরুভূমি গবেষণা কেন্দ্রের নাফতালি লাজারোভিচ বলেন, ‘‘বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে জল কীভাবে মাটি থেকে উদ্ভিদে ওঠে, সেটা আমরা বুঝতে চাই। প্রক্রিয়াটা বোঝার পর আমরা সেটিকে অপটিমাইজ করতে চাই – যেমন কখন এবং কতোবার সেচ দিতে হবে, তা দেখতে চাই।”
ব্লাউস্টাইন ইনস্টিটিউটে মৌলিক গবেষণা চলে। কিন্তু চাষিরা তো আর সেই গবেষণার ফলাফল পড়ে দেখবেন না, লাজারোভিচ সেটা ভালো করেই জানেন। কাজেই তিনি মাঝেমধ্যে লোহিত সাগরের দিকে রওনা হয়ে যান। গাড়িতে ঘণ্টা দেড়েক গেলেই পাওয়া যাবে আরাভা রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। নাফতালি জানতে চান, ফসল বাড়ানোর জন্য বাস্তবে কী করা প্রয়োজন।
মাছের বর্জ্য থেকে উদ্ভিদের সার
আঙুরফল থেকে শুরু করে ক্যাপসিকাম কিংবা মিলেট – আসল প্রশ্ন হল, বাস্তব পরিস্থিতিতে এই সব গাছ কিংবা উদ্ভিদ ঠিক সেইরকম আচরণ করে কিনা, পরীক্ষাগারে মৌলিক গবেষণা থেকে যেমনটি দেখা গেছে। তবে সেখানে শুধু খেজুর কিংবা মিলেটই নেই। মাছ নিয়েও গবেষণা চলেছে। সারা বিশ্বে খাদ্যের একটি বড় উৎস হল মাছ৷ মাছ খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে – বললেন স্নাতকোত্তর গবেষক টম গ্র্যোনফেল্ড।
মাছের বর্জ্য আবার উদ্ভিদদের জন্য সারের কাজ করতে পারে। একবার পানি থাকলে, তা সার্কুলেট করানো যেতে পারে: যেমন এখানে এই চৌবাচ্চার পানি পরে পাশের গ্রিনহাউসে স্যালাডের সবজি চাষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইয়াকব-ব্লাউস্টাইন মরুভূমি গবেষণা কেন্দ্রের টম গ্র্যোনফেল্ড বলেন, ‘‘এখান দিয়ে একটা পাইপ গেছে, যা গাছগুলোর গোড়ায় অক্সিজেন দিচ্ছে। গাছগুলো গজাচ্ছে কিন্তু পানিতে। তারা পানি থেকে নাইট্রেট শুষে নিচ্ছে; পরে পরিশুদ্ধ জল মাছেদের চৌবাচ্চায় ফিরে যাচ্ছে।’’
মরুভূমিতে ধানচাষ সম্ভব নয়। কিন্তু এখানে ড্রিপ ইরিগেশন বা ফোঁটা ফোঁটা সেচের মাধ্যমে ধানচাষের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে।
ইয়াকব-ব্লাউস্টাইন মরুভূমি গবেষণা কেন্দ্রের নাফতালি লাজারোভিচ বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে যে ইসরায়েলে ধানের চাষ হবে, এমন বলছি না। কিন্তু এখানে অন্যান্য দেশ থেকে অনেক স্বেচ্ছাসেবক আসেন, এখানে কাজ করেন৷ তাদের একাংশ এসেছেন পূর্ব এশিয়া থেকে। তারা ধানচাষের সাথে পরিচিত বলে এখানেও ধানগাছ নিয়ে ড্রিপ ইরিগেশন শিখছেন।’’
এশিয়ার এই ছাত্রছাত্রীরা যখন স্বদেশে ফিরবেন, তখন তাঁরা জানবেন, কম পানিতে কীভাবে ধানচাষ করা যায়। এছাড়া, ধানচাষ থেকে যে নাইট্রোজেন বেরোয়, তাও কমানো যাবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে