গেল ১শ’ বছর ধরে অদ্ভুত রকমের এক আবহাওয়া পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা অর্জন করে আসছেন হন্ডুরাসের ইউরো শহরের বাসিন্দারা। প্রতি বছর মে কিংবা জুন মাসে মাছ বৃষ্টি হয় দেশটিতে। প্রচণ্ড বজ্রপাতের গর্জন আর বৃষ্টির পাশাপাশি ঝরতে থাকে শত শত মাছ। হন্ডুরাসের ইউরো শহরের স্থানীয়দের ধারণামতে, ১৮৬০-এর দশকে এলাকাটিতে এসে দরিদ্রদের ক্ষুধা মেটানোর জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন স্প্যানিশ মিশনারি জোস ম্যানুয়েল সুবিরিনা। আর সে থেকেই হচ্ছে এ মাছ বৃষ্টি।
কেবল হন্ডুরাসই নয়; মাছ বৃষ্টির ঘটনার আলামত মিলেছে আরও কয়েকটি দেশেও। গেল বছর মাছ বৃষ্টির অভিজ্ঞতা লাভ করেছে শ্রীলঙ্কা। আর সম্প্রতি থাইল্যান্ডে মাছ বৃষ্টি হওয়ার খবর জানা গেলেও তা আদৌ মাছ বৃষ্টি ছিল নাকি মাছবাহী লরি খুলে রাস্তায় মাছ পড়ে যাওয়ার ঘটনা ছিল তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। তবে যাই হোক আসলেই কী মাছ বৃষ্টি কিংবা প্রাণী বৃষ্টি হয়? কিংবা হলেও তা কেন? এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই বা কী?
বিশ্বজুড়ে ব্যাপক রহস্য উদ্রেককারী এ ঘটনাটি আদতে কেন হয়, তা নিয়ে খুবই হাতে গোণা কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া গেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত মতটি হলো পানির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডো নিয়ে দেয়া ব্যাখ্যাটি।
একদল বিজ্ঞানীর মতে, পানির উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে যাওয়ার সময় মাছসহ পানির নিচে থাকা প্রাণীগুলোর উপর একধরনের সংকুচিত চাপ তৈরি হয়। আর টর্নেডো থেকে উৎপন্ন সে চাপের কারণে পানি থেকে অন্য জায়গায় গিয়ে পড়ে মাছ, ব্যাঙ কিংবা অন্যান্য জলজ প্রাণী।
তবে বিজ্ঞানীদের মতে, স্থলভাগের টর্নেডোর চেয়ে পানিতে সৃষ্ট টর্নেডো অপেক্ষাকৃতভাবে অনেক কম শক্তিশালী। স্থলভাগে উৎপন্ন টর্নেডোর গতি ঘণ্টায় ৩শ’ মাইলের বেশি হলেও পানিতে এর গতি ১শ’ মাইল। সে অনুযায়ী হন্ডুরাসের ইউরো এলাকার মাছগুলো আশপাশের জলাধার থেকেই আসার কথা।
কিন্তু স্থানীয়রা জানান, মাছগুলো তাদের পরিচিত জলাধারের না। যদি বিজ্ঞানীদের টর্নেডো তত্ত্বটি ঠিক হয়ে থাকে তবে মাছগুলো আসছে আটলান্টিক মহাসাগর থেকে যা ওই এলাকা থেকে ১২৫ মাইল দূরে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সায়েন্টিস্ট-এর এক দল গবেষকের মতে, হন্ডুরাসে যে মাছ বৃষ্টি হয়, তা সত্যিকার অর্থে আকাশ থেকে পড়ে না। ভারি বর্ষণের কারণে পানি থেকে মাছগুলো ডাঙায় উঠে আসে বলেই মত দিয়েছেন তারা। ১৯৭০ সালে হন্ডুরাসের ইউরো শহরে মাছ বৃষ্টিপাতের উপর গবেষণা চালিয়ে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন। ওই সময় তারা লক্ষ্য করেন উদ্ধার হওয়া মাছগুলো সব দৃষ্টিশক্তিহীন। আর তাই ওই মাছগুলো আকাশ থেকে নয় বরং পানির চাপের কারণে উঠে এসেছে বলে দাবি করেন বিজ্ঞানীরা।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স
