নেপালের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে বাচ্চাদের কীভাবে দিন কাটাতে হচ্ছে, সেই ছবি টেলিভিশনে দেখে নিজের জমানো টাকা দান করে দিয়েছে ভারতের কলকাতার এক কিশোর।
দেড় বছর ধরে নিজের কিছু শখ মেটানোর জন্য ওই টাকা জমিয়েছিল ঘটের মত দেখতে একটি মাটির ব্যাঙ্কে ।
সেটাই ভেঙ্গে হাজার তিনেক টাকা ১২ বছরের ওই কিশোর তুলে দিয়ে এসেছে কলকাতায় নেপালী দূতের কাছে।
আকাশ মুখার্জীর কথায়, “মায়ের সঙ্গে বসে টিভিতে ভূমিকম্পের খবর দেখছিলাম। আমারই বয়সী বাচ্চারা দেখলাম বলছে ওদের খাবার নেই, ঘর নেই – খোলা আকাশের নীচে শুতে হচ্ছে, জল নেই। দেখে আমার খুব দু:খ হল। মাকে বললাম আমি তো বেশী কিছু তো করতে পারব না, কিন্তু মাটির ব্যাঙ্কে যে টাকা জমেছে, সেটা তো দিতেই পারি।”
একটি বহুজাতিক সংস্থার বিপণন বিভাগের কর্মকর্তা আকাশের বাবা গোরা মুখার্জী ছেলের এই পরিকল্পনার কথা জেনে যোগাযোগ করেন কলকাতায় নেপালের দূতাবাসে।
মি. মুখার্জী বলছিলেন ছেলেকে নিয়ে তারা যখন নেপালী দূতাবাসে গেলেন, কূটনীতিকরা বেরিয়ে এসে তার ছেলেকে রীতিমতো জড়িয়ে ধরেছিলেন।
“ওঁরা বললেন, আকাশ কত টাকা দিতে পারছে সেটা বড় ব্যাপার না, এত ছোট একটা ছেলে যে এরকমভাবে সাহায্য করার কথা ভেবেছে, সেটাই আসল। মাটির ব্যাঙ্কটা যখন ভাঙ্গা হল, তখন চারদিকে খুচরো পয়সা ছড়িয়ে গিয়েছিল। দূতাবাস কর্মীদের সাহায্য নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সব গোণা হল। তখনও বোঝা যাচ্ছিল না যে আসলে কত টাকা রয়েছে।”
আকাশের মা, মণীষা মুখার্জীর জানান নিজের শখের জিনিষগুলো মুহূর্তের মধ্যে অন্যকে দিয়ে দেওয়ার অভ্যাস আকাশের ছোটবেলা থেকেই। ‘‘তবে আমাদের কিছু উদ্যোগও ছিল। যেমন ওর পাঁচ বছর বয়স থেকে প্রতিটা জন্মদিন আমরা মাদার টেরিসার অনাথ আশ্রমে কাটাই। ওর নিজের পছন্দের যেসব জিনিষ – বই, খেলনা, জামাকাপড়, খাবার – এগুলো ও নিজেই দেয় অনাথ শিশুদের।’’
যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা আকাশ নেপালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাঠিয়েছে, সেটা দিয়ে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা ছিল আকাশের। বাবা মায়ের জন্য কিছু উপহার কেনা, নিজের জন্য একটা নতুন ফুটবল কেনা এবং বন্ধুদের খাওয়ানো।
“কিন্তু সে সব তো পরেও হতে পারে,” বলছিল ওই কিশোর।
নতুন একটা মাটির ব্যাঙ্ক উপহার পেয়েছে সে। আর তার মধ্যে একটা দুটো করে খুচরো পয়সা আবারও জমাতে শুরু করেছে আকাশ। সূত্র : বিবিসি বাংলা
