Skip to content

মানুষ যোদ্ধাদের মতই হামলায় দক্ষ ডলফিন সেনারা

Dolphin

সাগরে গুপ্তচরবৃত্তি ও হামলার জন্য সবচেয়ে উপযোগি বটলনোজ ডলফিন।

মাহমুদা আক্তার
সাগরের নিরীহ প্রাণি ডলফিন। সাধারণত পর্যটন ব্যবসায় এদের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে নানা ধরনের শারিরীক কসরৎ পদর্শন করে দর্শণার্থীদের অনন্দ দিতে এদের জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু সাগরের এই নিরীহ প্রাণিটিকে নিজেদের নৌবাহিনীতে যুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ গুটিকয়েক দেশ। গোয়েন্দাগিরি ও শত্রুপক্ষের জাহাজগুলোতে টহলদারিসহ হামলার কাজে পর্যন্ত ডলফিন বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নতুন করে ডলফিন বাহিনী গড়ে তোলা তোলার উদ্যোগ নিয়েছে রাশিয়াও। নৌবাহিনীতে এসব ডলফিনদের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়েই এই প্রতিবেদন।

রাশিয়ার সেনাবাহিনী তাদের নৌবাহিনীর জন্য কিছু উন্নতমানের ডলফিনের সন্ধান করছে। মজবুত দাঁত ও নির্দিষ্ট উচ্চতার মোট পাঁচটি ডলফিন নেয়া হবে বলে জানা গেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে চলতি সপ্তাহে স্থানীয় এক অনলাইন পত্রিকায় এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।

তিনটি পুরুষ ও দুটি মাদি ডলফিনের খোঁজ পেতে উপযুক্ত একজন ঠিকাদার চেয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের পছন্দমত ডলফিনের খোঁজ দিতে পারলে ওই ঠিকাদারকে প্রায় ২৪ হাজার ডলার পারিশ্রমিক দিতেও রাজি আছে তারা। তবে শর্ত আছে। এগুলো হতে হবে বোতলনৌজ জাতের ডলফিন এবং প্রতিটি প্রাণির উচ্চতা হবে প্রায় ৮ ফুট। তবে নৌবাহিনীতে এরা ঠিক কি ধরনের ভূমিকা পালন করবে তা এখনো খোলসা করেনি রুশ সামরিক বিভাগ। এর আগে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইতারতাসেও এই ডলফিন সেনা নিয়োগের কথা জানানো হয়েছিল। সেনাবাহিনীতে এসব প্রাণিদের কোন কাজে ব্যবহার করা হবে সে সম্পর্কে তারাও কিছু জানায়নি। তাছাড়া এগুলোর দাঁতই বা অত মজবুত হতে হবে কেন সেটিও একটি রহস্যই বটে।

Dolphin2

হামলাকারী এক ডলফিন সেনা।

এর আগে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের যুগেও রুশ নৌবাহিনীতে একটি ডলফিন ইউনিট ছিল। ওই ডলফিন সেনারা গুপ্তচরবৃত্তি, তদন্ত, উদ্ধারকারী এবং গুপ্তঘাতক হিসেবেও কাজ করেছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের যুগে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সেভাস্তোপোলকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছিল একটি ডলফিন ইউনিট। সোভিয়েত যুগের পতনের পর দু’হাজার সালে প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনের কাছে ওই পশুগুলোর দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। সেগুলোকে পর্যটন পেশায় যুক্ত করেছিল ইউক্রেন সরকার, যাদের কাজ ছিল নানা কসরৎ করে ভ্রমণকারীদের আনন্দ দেয়া। কিন্তু তাদের পক্ষে এই ডলফিন বাহিনীর লালন পালনের বিশাল ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই পরে তারা এগুলোকে ইরানের কাছে বিক্রি করে দেয়।

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, ২০১২ সালে ইউক্রেন একটি নিজস্ব ডলফিন সেনা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে তাদের ক্রিমিয়া অংশটি রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার পর সেইসব ডলফিন ও তাদের প্রশিক্ষণের নিমিত্তে তৈরি সামরিক একুরিয়ামটি মস্কোর দখলে চলে যায়। তখন এ নিয়ে ইউক্রেনের কোনো ওজর আপত্তি গ্রাহ্য করেনি রাশিয়া।

ওই একই বছর রিয়া নোভস্তি সংবাদ মাধ্যমে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে নতুন করে ডলফিন প্রশিক্ষণ শুরু করার খবর বেরিয়েছিল। যদিও তখন সে খবরের সত্যতা স্বীকার করেনি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তখন ‘ডলফিনরা সেনাবাহিনীর সম্পদ নয়’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন মন্ত্রালয়ের এক মুখপাত্র ।

দীর্ঘদিন পর নৌবাহিনীতে ফের ডলফিন সেনা নিয়োগ করতে যাচ্ছে রাশিয়া। ডলফিনদের রয়েছে অত্যাশ্চর্য শ্রবণশক্তি। যার ফলে তারা সহজেই সাগরে নৌযান ও মাইন সনাক্ত করতে পারে। এছাড়া নিখোঁজ নাবিক ও সাঁতারুদের খুঁজে বের করা এবং সাগরে শত্রুপক্ষের গতিবিধির ওপর নজরদারিতেও প্রাণিটির জুড়ি মেলা ভার। এ কারণে গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে ডলফিনদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

Dolphin3

সোভিয়েত যুগের ডলফিন সেনা।

কিন্তু সোভিয়েত যুগে গুপ্তসেনা ডলফিনদের ঘাতক হিসাবেও প্রশিক্ষণ দেয়া হত। চলতি সপ্তাহে গার্ডিয়ান পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অবসরপ্রাপ্ত রুশ সেনা কর্মকর্তা ভিক্টর বারানেতস বলেছেন, তারা ডলফিনদের দিয়ে শত্রুদের জাহাজে বিস্ফোরক পদার্থ মোতায়েন করাতেন। এর আগে দু হাজার সালে এক ডলফিন প্রশিক্ষক বিবিসি’কে বলেছিলেন, এসব প্রাণির দেহে হারপুন সংযুক্ত করে দেয়া হত। তারা এগুলো দিয়ে শক্রপক্ষের ডুবুরি ও সাঁতারুদের আঘাত করত। এছাড়া তারা বিদেশিদের জাহাজে ‘কামিকাজ’ হামলা চালাতেও দক্ষ ছিল। কামিকাজ জাপানি শব্দ। জাপানিরা মার্কিন যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করে যে ধরনের আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাত যা কামিকাজ নামেই পরিচিত ছিল। এসব ডলফিন সেনারা কেবল শব্দ শুনে অতি সহজেই সোভিয়েত ও বিদেশি সাবমেরিনের পার্থক্য করতে পারত এবং হামলা চালাত।

মার্কিন নৌবাহিনী ডলফিন সেনাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ৫০য়ের দশক থেকে ডলফিদের অস্ত্র প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। নৌ কর্মকর্তাদের ধারণা, এসব প্রাণি বিশেষ করে বোটলনোজ ডলফিন ও সি লায়ন ডুবুরিদের কাজে সহায়তা করতে পারবে।

Dolphin4

সান দিয়াগোর ডলফিন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চলছে প্রশিক্ষণ।

জৈবিকভাবেই ডলফিনদের শ্রবণশক্তি উন্নতমানের। আর সাগরের নিচে সবকিছু স্পষ্ট দেখতে ও শুনতে জুড়ি নেই সি লায়নদেরও। তারা সহজেই সাগরের অনেকখানি গভীরে যেতে পারে যা মানুষের পক্ষে সহজ নয়। পাশাপাশি তাদের বশ মানানো ও প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজটাও খুব সোজা। যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন মেরিন মামল প্রোগামের আওতায় সান দিয়াগোতে তাদের প্রশিক্ষণ চলে।

ভিয়াতনাম ও পারশ্য উপসাগরীয় যুদ্ধে আমেরিকানদের রক্ষা করেছে ডলফিন বাহিনী। বর্তমানেও ডলফিন ও সি লায়ন বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নৌবন্দর ও নৌবাহিনীর বিভিন্ন নৌ সরঞ্জামাদি পাহারা দেয়ার কাজ করে থাকে। তারা সাগরের নিচে বিভিন্ন সামগ্রি খুঁজে বের করা ও খনিগুলো রক্ষার ক্ষেত্রেও তাদের জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া সি লায়নগুলোকে শক্র বাহিনীর সাঁতারুদের পায়ে ক্ল্যাম্প সংযুক্ত করারও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে মার্কিন সেনারা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ডলফিন ও সি লায়নের হামলা চালানোর সক্ষমতার কথা কখনোই স্বীকার করে না।

নৌবাহিনী তাদের দ্য মেরিন মামল প্রোগ্রামের ওয়েবসাইটে বলছে, ডলফিনরা শত্রু ও বন্ধুদের নৌযান এবং ডুবুরি ও সাঁতারুদের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। তাই তাদের হামলার কাজে ব্যবহার করা কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। যদিও তারা নিজেরাই বহু বছর ধরে সেই বুদ্ধিহীনতার কাজটি করে চলেছে! সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট, সৌজন্যে : বাংলামেইল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *