মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে সর্বনিম্ন ভাড়ায় বিমান ভ্রমণের সুযোগ দিয়েছে দেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। চট্টগ্রাম থেকে মাত্র ৩৯ হাজার টাকা এবং ঢাকা থেকে ৩৯ হাজার ৫০০ টাকায় আসা-যাওয়ার নতুন ভাড়া ঘোষণা করা হয়েছে। এই ভাড়া এই রুটে যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত আরো দুটি বিমান সংস্থার চেয়ে আট হাজার টাকা কম। আগামী ৭ এপ্রিল নতুন বোয়িং বিমান ৭৩৭-৮০০ দিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু উপলক্ষে এই সুযোগ দিয়েছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। এর মধ্য দিয়ে সংস্থাটি প্রথম মধ্যপ্রাচ্যের দেশে যাত্রা শুরু করছে।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুফ হাবিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যাত্রীদের জন্য আমরা সব সময় একটি প্রতিযোগিতামূলক ভাড়া দিয়েছি, মাসকাটের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। আর যাত্রীদের আরামদায়ক ভ্রমণে কোনো ছাড় দিই না বলেই সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া রুটে বড় ও শীর্ষ বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা সফল হয়েছি।’
মাশরুফ হাবিব আরো বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে বাংলাদেশি কর্মীরা খুবই সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। সেখানে ভিসা প্রাপ্তিতে কড়াকড়ি না থাকায় বাংলাদেশিদের একটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। সেটি লক্ষ রেখে ১৮৩ আসনের নতুন বোয়িং বিমান দিয়ে যাত্রা করছি।’
রিজেন্টের নতুন সময়সূচি অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে চার দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম-মাসকাট রুটে ফ্লাইট চলাচল করবে। প্রতি মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র ও রবিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে প্রথমে চট্টগ্রাম এবং সেখান থেকে রাত সাড়ে ৮টায় ছেড়ে রাত পৌনে ১২টায় (স্থানীয় সময়) মাসকাট পৌঁছবে। সেখান থেকে মধ্যরাত পৌনে ১টায় ছেড়ে সকাল সাড়ে ৭টায় চট্টগ্রাম এবং পৌনে ৯টায় ঢাকা এসে পৌঁছবে।
এ বিষয়ে রিজেন্ট এয়ারের চিফ অপারেটিং অফিসার আশীস রায় চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিগত দুই বছরে আন্তর্জাতিক রুটে আমাদের অনটাইম সার্ভিস, যাত্রীদের দ্রুত ব্যাগেজ পৌঁছানো নিশ্চিত করেছি। ফলে ব্যাগেজের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকতে হয়নি। একই সঙ্গে বিদেশি কর্মীদের দেশে আসতে সবচেয়ে বেশি লাগেজ সুবিধাও দিচ্ছি।’
জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকেই জনশক্তি রপ্তানিতে শীর্ষস্থান দখল করেছে ওমান। সরকারি হিসাবে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি কর্মী সেখানে চাকরি করছে। প্রতিবছর সেই সংখ্যা বেড়েই চলছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট জনশক্তি রপ্তানির সাড়ে ২৩ শতাংশ অর্থাৎ এক লাখ ২৯ হাজার কর্মী গেছে ওমানে। ২০১৬ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত মোট জনশক্তির ২৫ শতাংশের বেশি কর্মী গেছে ওমানে। ধারাবাহিকভাবে কর্মী রপ্তানি বাড়তে থাকায় এই রুটে যুক্ত হচ্ছে রিজেন্ট এয়ার। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে মাসকাট রুটে যাত্রী পরিবহন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিমান ও ওমানের জাতীয় বিমান সংস্থা ওমান এয়ার। দেশীয় বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ার আগে চললেও এখন বন্ধ।
জনশক্তি রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে প্রতিদিন ফ্লাইট চালাত ওমান এয়ার। গত অক্টোবর থেকে পরিধি বাড়িয়ে ঢাকা থেকেও সপ্তাহে প্রতিদিন ফ্লাইট চালাচ্ছে সংস্থাটি। ওমান এয়ারের ঢাকা-মাসকাট রুটে আসা-যাওয়ার সর্বনিম্ন ভাড়া সাড়ে ৪৮ হাজার টাকা। আর চট্টগ্রাম-মাসকাট রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া ৪৭ হাজার ৭০০ টাকা। আর বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-মাসকাট রুটে আসা-যাওয়ার সর্বনিম্ন ভাড়া সাড়ে ৪৪ হাজার টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ বিমানও ৭৩৭-৮০০ বোয়িং বিমান দিয়ে প্রতিদিন ফ্লাইট চালাচ্ছে এই রুটে। আর ওমান এয়ার একই ধরনের বিমান দিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে।
এদিকে একই রুটে রিজেন্টে সব ধরনের করসহ ঢাকা-মাসকাট সর্বনিম্ন ভাড়া ওয়ানওয়ে ২০ হাজার ৫৬৫ টাকা এবং আসা-যাওয়ার ভাড়া ৩৯ হাজার ৪৭৮ টাকা, চট্টগ্রাম-মাসকাট ওয়ানওয়ে ১৯ হাজার পাঁচ টাকা এবং আসা-যাওয়ার ভাড়া ৩৯ হাজার ২৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে মাসকাট থেকে ঢাকা সর্বনিম্ন ভাড়া ওয়ানওয়ে ৫০ ওমানি রিয়াল এবং আসা-যাওয়ার ভাড়া ১৩০ রিয়াল এবং মাসকাট-চট্টগ্রাম ওয়ানওয়ে ৬০ রিয়াল এবং আসা-যাওয়ার ভাড়া ১৩৫ রিয়াল নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে ওমান এয়ারের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ খন্দকার কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন না ধরায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে বাংলাদেশ বিমানের পরিচালক (মার্কেটিং) শাহ নেওয়াজের সঙ্গেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম অফিসের কেউই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। সূত্র : কালের কণ্ঠ