Skip to content

মীরজুমলার দুর্গের নিচে এত কলস কেন …

১৬৬০ সাল। বাংলায় তখন মোঘলদের রাজত্ব। সে সময় পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মুন্সীগঞ্জের ইদ্রাকপুরে একটি দুর্গ তৈরি করেন বাংলার সুবাদার মীরজুমলা।

গত সাড়ে ৩০০ বছরে বহুবার সংস্কার করা হয়েছে এই দুর্গের। কিছুদিন আগে দুর্গের ভেতরে জাদুঘর ও সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। সেজন্য প্রথম ধাপের কাজ শেষ করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরুর প্রক্রিয়াও প্রায় চূড়ান্ত।

Inderkpurসংস্কার কাজের অংশ হিসেবে শহরের কোর্টগাঁও এলাকায় অবস্থিত ইদ্রাকপুর দুর্গ সংস্কারের কাজ চলছিল। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে দুর্গের মূল মঞ্চের মেঝে ভাঙার সময় সেখানে শত শত কলসের সন্ধান পায় শ্রমিকরা।

এসব কলস মেঝের নিচে পাওয়ায় প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এগুলোর বয়স ৩৫০ বছরের বেশি। তবে কলসের সন্ধান পাওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক উপকরণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আপাতত খনন কাজ বন্ধ রেখেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে ঢাকা থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তিন সদস্যের একটি দল বিকেলে ইদ্রাকপুর দুর্গ পরিদর্শন করে। যে অংশে কলস নির্মিত মেঝে পাওয়া গেছে সে অংশ সংরক্ষণ করে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাহবুব উল আলম। তিনি বলেন, এ ধরনের নির্মাণকৌশল বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায়নি। ঘরকে শীততাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেই এ ব্যবস্থা। ব্রিটিশ আমলের কোনো এক সময়ে এটি নির্মিত হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে মেঝের নিচে কলস পাওয়ার খবর পেয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ তা দেখতে ভিড় জমায় ইদ্রাকপুর দুর্গ প্রাঙ্গণে। এমনকি কলসগুলো মূল্যবান জিনিসে ভরপুর বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়তে থাকে এলাকায়।

তবে মূল্যবান সামগ্রী লুকিয়ে রাখতে নয় বরং এ পদ্ধতিতে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা হতো বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. স্বাধীন সেন। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি এনটিভি বলেন, ‘এটা মধ্য যুগের নির্মাণ শৈলীর একটা অংশ। ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য এভাবে মেঝের নিচে কলস ব্যবহার করা হতো। সে সময় তো আর শীততাপ নিয়ন্ত্রণের মতো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। তাই বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা করা হতো। আবার অনেক সময় আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল তৈরির জন্যও এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হতো। এ ধরনের নির্মাণশৈলী আমাদের এ অঞ্চলেই দেখা যেত।’

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দুর্গের মূল মেঝের নিচে উল্টো করে রাখা পোড়ামাটির কলসের একটি স্তর। কলসগুলোর ওপরেই বসানো হয়েছে পাটা বা বড় আকারের ইট। কলসগুলোর ওপর চুন-সুড়কির আস্তর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মেঝে। শ্রমিকরা কিছু কলস উদ্ধার করে সেগুলো সাজিয়ে রেখেছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আপাতত খনন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

১৮৪৫ সাল থেকে ইদ্রাকপুর দুর্গ মহাকুমা প্রশাসকের বাসভবন হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এ জন্য দুর্গটি সংস্কার করা হয়। ইট নির্মিত চারকোনা দুর্গটি উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত। এর দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ মিটার ও প্রস্থ ৫৯ দশমিক ৬ মিটার। এই দুর্গের ভেতরে ভরাট করে মধ্যস্থলে একটি কুটির নির্মাণ করা হয় মহাকুমা প্রশাসকের বাসভবন হিসেবে ব্যবহারের জন্য। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মহকুমা প্রশাসকের বাস ভবন হিসেবে দুর্গটি ব্যবহার করা হয়েছে। এর আগে ১৯০৯ সালে দুর্গটি পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয়। সূত্র : এনটিভি

এ সংক্রান্ত আর একটি প্রবন্ধ : মুন্সিগঞ্জের ইদ্রাকপুর কেল্লায় ৪০০ বছরের পুরনো শত শত মাটির পাত্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *