Skip to content

মুস্তাফিজের স্কুল

Mustafiz2

মুস্তাফিজুর রহমানের উদ্‌যাপনটা কেমন লাগে তোমার? নিশ্চয় বলবে, উইকেট পাওয়ার আনন্দে মুখে একটি সরল হাসি ফুটিয়ে দুই হাতে তালি দেওয়ার ওই দৃশ্যটা কার না ভালো লাগে? যেন উঠোনের গাছ থেকে পড়া আমটা কুড়িয়ে পেয়েছে এক কিশোর!

হ্যাঁ, কিশোরই তো। এখনো কৈশোরের গন্ধটা লেগে রয়েছে শরীরে। গ্রামের আলো-হাওয়ায় বেড়ে ওঠা সাধারণ ছেলেটাই মাঠে হয়ে যান অসাধারণ। উপহার দেন একের পর এক বিস্ময়। মাত্র পাঁচ মাসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কত্ত রেকর্ড তাঁর!

Mustafiz

Mustafiz3ক্রিকেটে ব্যস্ততার মধ্যেও মুস্তাফিজের মনটা পড়ে থাকে সাতক্ষীরা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে শান্ত-সবুজ তেঁতুলিয়া গ্রামে। এখানেই বেড়ে ওঠা। এখানেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি। এটিই তাঁর ঠিকানা। ক্রিকেটের ব্যস্ততার কারণে আপন ঠিকানায় ফেরা হয়নি বহুদিন। ওয়ানডে, টেস্টে দারুণ সব কীর্তি গড়ে অবশেষে ৮ আগস্ট ফেরা তেঁতুলিয়া গ্রামে।

বাড়ি ফেরার পর থেকেই মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছে তাঁকে দেখতে। এমনিতেই ছোটবেলা থেকেই লাজুক। এতটাই লাজুক ছিলেন, মানুষজনের সামনে খুব একটা আসতে চাইতেন না। সেই মুস্তাফিজকে এখন হাজার হাজার মানুষের সামনে আসতে হচ্ছে। কত কথার উত্তর দিতে হচ্ছে! অবিরত ছবি তুলতে হচ্ছে।

আগ থেকে জানিয়েছিলেন, ঘুরিয়ে দেখাবেন শৈশবের স্কুল ও মাঠগুলো। কিন্তু মানুষের জটলা পেরিয়ে বেরোবেন কীভাবে? বিষয়টি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াল বৈকি। উপায় বের করলেন মুস্তাফিজ নিজেই। ওখানে মারলেন এক ‘কাটার’! কৌশলে বেরিয়ে এলেন। এরপর বাইক ছুটিয়ে নিয়ে গেলেন মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এখানে পড়েছেন ষষ্ঠ থেকে ক্লাসের বাংলা–অঙ্ক খাতাতেই নেওয়া হলো প্রিয় তারকার সইদশম শ্রেণি পর্যন্ত। তপ্ত দুপুরে ঝিম ধরে থাকা স্কুলের পরিবেশটা হঠাৎ গেল বদলে। মুস্তাফিজকে একপলক দেখতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেগে গেল হুটোপুটি। শিক্ষকদের কড়া ধমকেও শান্ত হওয়ার নয়।

একে একে বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে গেলেন। কাছে পেয়ে শিক্ষার্থীদের কী আনন্দ! শিক্ষকদের কঠিন মুখগুলোয় ভেসে উঠল মিষ্টি হাসি। শিক্ষার্থীদের মতো তাঁরাও বিস্ময় নিয়ে দেখছেন মুস্তাফিজকে। এ স্কুলে যখন পড়েছেন, শিক্ষকদের কাছে পড়া না করায় বকুনি খেয়েছেন কত! এমনিতে ছেলেবেলা থেকেই খেলার প্রতি ভীষণ টান। পড়াশোনায় মনোযোগ ছিল কমই। শিক্ষকদের ধমক খাওয়াটা অস্বাভাবিকও নয়। তবে সেসব কথা মনে পড়ে মুস্তাফিজের মন খারাপ হয় না, বরং ভালো লাগে। ভাবেন, আহ্‌, যদি ফিরে পাওয়া যেত শৈশবের মিঠে দিনগুলো!

ঠোফোন হাতে না থাকায় সেলফি তোলা না হলেও হিড়িক পড়ল সই শিকারের। কেউ অঙ্ক খাতা, কেউ বা বাংলা খাতা এগিয়ে দিল মুস্তাফিজের দিকে। হাসিমুখে দিতে থাকলেন অটোগ্রাফ।

এ স্কুলেই পাওয়া গেল দারুণ এক ছবি। বছর পাঁচেক আগে স্কুল দলে খেলার সময়ে তোলা। তবে ক্রিকেট নয়; মুস্তাফিজ তখন খেলেছেন ফুটবল দলে! বোঝা গেল, ফুটবলটাও বেশ পারতেন। এরপর ঢুঁ মারলেন পাশের বরেয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই স্কুলে পড়েছেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। রঙ্গন ফুলে মুস্তাফিজকে অভ্যর্থনা জানালেন প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান। পরীক্ষা চলায় বেশিক্ষণ থাকা হলো না শৈশবের স্কুলে।

চলে এলেন রাস্তার ওপারে বিটিজিআর হাইস্কুল ও তেঁতুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দুই স্কুলের আবার একই মাঠ। এ দুই স্কুলে পড়েননি। তবে স্কুলের এ মাঠে খেলেই হয়েছেন আজকের ‘মুস্তাফিজ’, শত শত শিশু-কিশোরের মনে বুনে দিয়েছেন স্বপ্নের জাল। স্বপ্নদ্রষ্টা হয়ে এভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আসবেন, হয়তো ভাবেননি নিজেও।

দুই স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বললেন, ‘দোয়া করবে যেন আরও ভালো খেলতে পারি। ফিট থাকতে পারি। দেশের জন্য আরও গৌরব বয়ে আনতে পারি।’

শুনলে তো, মুস্তাফিজ কী বললেন? সূত্র : প্রথম আলো

Bhutan-Tour

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *