সুমন্ত গুপ্ত
কবিগুরু রবীন্দ্র্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শীষের উপর একটি শিশির বিন্দু…।’ সিলেট থেকে শিলং ঘুরতে আর দেখতে যাওয়ার বেলায় সম্ভবত কবিগুরুর এ কথাটি একেবারেই সত্যি। সিলেট থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টা দূরত্বের পথ শিলং। ছোটবেলায় জাফলংয়ে যখন ঘুরতে যেতাম তখন দেখতাম দুটি পাহাড়ের মিলন ঘটিয়েছে একটি সুন্দর ব্রিজ। মা-বাবা দেখিয়ে বলতেন সামনেই ভারত। মাঝে মধ্যে খুব খারাপ লাগত এত সুন্দর একটি ব্রিজ তা কেন ভারতে পড়ল। তখন মনে মনে ভাবতাম একদিন না একদিন আমি ওই ব্রিজে যাবই। আমি আর আমার ভ্রমণ সঙ্গী আমার মা। গন্তব্য মেঘের আলয়-মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। শিলং-বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে, প্রায় ১ হাজার ৫০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। মেঘের মাঝে মাথাগুজে থাকা এ জনপদে বৃষ্টিপাত প্রচুর হয়।
আমরা শিলং যাওয়ার আগেই এক পরিচিত দাদার মারফত একজন লোক ঠিক করে রেখেছিলাম, তিনি বললেন- রওনা দিলে সকাল সকাল রওনা দিতে, তাহলে ওইদিনই কিছু স্পট ঘুরে দেখা যাবে। কথা অনুযায়ী আমরা সকাল ৮টায় রওনা দেই। প্রথমে বলে নেয়া ভালো, সিলেট-তামাবিল রুটে জাফলং থেকে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন পর্যন্ত রাস্তা খুব খারাপ। সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন অফিসে এসে পৌঁছি। এখানে আধাঘণ্টার মধ্যে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে নোম্যান্সল্যান্ড পার হয়ে ডাউকি সীমান্তে পৌঁছালাম। আমাদের জন্য গাইড অপেক্ষ করছিলেন। প্রথমে পরিচয় হল বাপ্পী দা’র সঙ্গে। তিনিই ইমিগ্রেশনের সব ঝক্কি-ঝামেলা শেষ করালেন। এরপর রওয়ানা দিলাম শিলংয়ের উদ্দেশে। পাহাড়ি রাস্তা, এক পাশে খাদ আর এক পাশে পাহাড়, মজার ব্যাপার হল ভারত সীমান্তে ঢোকার পরও প্রায় ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া গেল। প্রায় ২০ মিনিট পর দেখা মিললো সেই ব্রিজের, যেই ব্রিজটি ছোটবেলা থেকেই আকর্ষণ করত আমাকে। ব্রিজটি আবার ওয়ান ওয়ে, পথে পথে ঝর্ণার শো শো শব্দ মনটা ভরে যায়।
সেখান থেকে বেশ কিছুক্ষণ বাংলাদেশ দেখা গেল। পাহাড়ি পথ আর ঝর্ণার মাঝ দিয়া আমরা এগিয়ে চলছি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার ফুট উপর দিয়ে। কেবল খাড়া নয়, রাস্তা ২০/৩০ হাত পর পর ভয়ানক মোড়। ট্যাক্সি থেকে বাইরে তাকালেই মনকাড়া পাইন গাছের সারি। গাড়ি থেকে নিচে থাকালেই মন একেবারে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। চোখ চলে যায় কয়েক হাজার ফুট নিচে। শহরের যত উপরে উঠছি ততই ঠাণ্ডা লাগছে। বিশাল বিশাল পাহাড় আর তার বুক চিরে রাস্তা। দু’পাশে পাহাড়ি খাদ। এ খাদের মাঝে আবার দু-এক জায়গাতে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ি নদী, সাপের মতো পাহাড়র গা বেয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে।
গাড়িতে বাজছে গান আর বাইরে সবুজ পাহাড় ঝর্ণা- সব মিলিয়ে অসাধারণ পরিবেশ, কিছুক্ষণ পরই আমরা হারিয়ে গেলাম মেঘের রাজ্যে। পথে ছবি তোলার সুযোগ আর ছাড়লাম না। শিলংয়ে যাওয়ার রাস্তা অসাধারণ সুন্দর, আঁকা-বাঁকা। প্রথমে মাথা ঘোরে, পরে ঠিক হয়ে যায়। দুপুর ১২টার মধ্যে আমরা পুলিশ বাজার পৌঁছে যাই। পৌঁছে হোটেল খোঁজা শুরু করি। পুলিশ বাজারে মোটামুটি সব হোটেলই আছে, তাই ঘুরে ঘুরে খুঁজে নিলাম পছন্দের হোটেল। হোটেলে গিয়ে ফ্রেস হয়েই আমরা বেরিয়ে পড়লাম ঘুরতে- প্রথমে গেলাম হায়দার পার্কে। এটি আসামের গভর্নরের স্ত্রী লেডি হায়দারীর নামে নামকরণ করা হয়েছে। এখানে একটি মিনি চিড়িয়াখানা আছে। এরপর গেলাম চার্চ-এ। অসাধারণ শিল্প নৈপুণ্য ভেতরে ও বাইরে। এটিই এশিয়ার সর্ববৃহৎ চার্চ। ভেতরে ছবি তোলা নিষেধ। এরপর গেলাম ওয়ার্ড লেক, চারপাশে বাগান দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম লেক। লেকে ফুটে আছে অসংখ্য শাপলা ফুল, ঘুরে বেড়াচ্ছে রাজহাঁসের দল- দেখলে মন ভরে যায়। লেকে বোট-এ ঘোরার ব্যবস্থাও আছে, আমরা ভেবেছিলাম বোট-এ ঘুরবো কিন্তু আরও অন্তত দুটো স্পট ঘুরে দেখার কথা, তাই আর বোট-এ ওঠা হল না।
এরপর গেলাম শিলং গলফ কোর্স-এ। যা ৫২০০ ফুট উচ্চতায় এবং এতে ২২টি হোল আছে। সবুজে ঘেরা মাঠ দেখলে যেন মনে হয় ঘাসের ওপর বসে দিনপার করে দেই, কিন্তু এখনও আমাদের আরও একটি স্পট-এ যেতে হবে- তা হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেখানে বসে তার শেষের কবিতা লেখেন সেই বাড়িতে। ১৯১৯ সালে অক্টোবর মাসে কবি আসেন। বাড়িটি এখন মেঘালয় রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায়। প্রথমে ঢুকতেই রবীন্দ্রনাথের বিশাল প্রতিকৃতি। বিধিবাম, যেতে যেতে রবীন্দ্রনাথ আর্ট গ্যালারিটি বন্ধ হয়ে গেছে, অগত্যা আমরা বাইরে কিছু ছবি তুলে ফিরে এলাম হোটেলে।
হোটেলে খাবার শেষ করে হোটেল রুম থেকে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বসেছিলাম। মজার ব্যাপার হল যে, শিলং-এ কোনো রিকশা নেই। টাটা সুমো মোটর গাড়িই একমাত্র ভরসা। এরপর দু’ঘণ্টার মতো বিশ্রাম নিয়ে আবার রাত ৭টার দিকে বেড়িয়ে পরলাম শহরে ঘুরতে। এখানে শহর বলতে পুলিশ বাজার এরিয়াটাই, ছোট-বড় শপিং মলে ঘুরে বেড়ালাম। কাপড়-চোপড়ের দাম একটিু বেশি, রাত ৮টার মধ্যেই সব দোকানপাঠ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আমরা একটিমাত্র বাঙালি হোটেল ‘সুরুচি’ খুঁজে বের করি। সুরুচি ছোট্ট হোটেল, কিন্তু মানুষের দীর্ঘ লাইন। আমরা লাইন দিয়ে বসে বাঙালি খাবার চানার ডাল, বেগুন ভাজা, লাবরা আর খাসির মাংস খেলাম। এরপর আবার হোটেলে এসেই শুয়ে পড়লাম। কারণ বিভিন্ন স্পট দেখতে গিয়ে অনেক ক্লান্তির কারণে চোখে ঘুম ছিল। এক ঘুমে ভোর ৬টায় উঠি, ঘড়িতে এলার্ম দেয়া ছিল। তা না হলে ওঠা সম্ভব হতো না।
সকাল হতেই বাপ্পী দা এসে হাজির, গন্তব্য চেরাপুঞ্জি। এখানে আকাশ সব সময় মেঘাচ্ছন্ন। কখনও ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি। চেরাপুঞ্জি যাওয়ার রাস্তাটা অসাধারণ। আঁকা-বাঁকা রাস্তা কোথাও মেঘে ঢাকা, কোথাও আলো। আমরা চেরাপুঞ্জির প্রবেশ দ্বারে এসে পৌঁছলাম। এখানে প্রথমে আমরা ব্রিজ থেকে মেঘের ভেলা দেখলাম। অসাধারণ মেঘ যেন আমাদের ছুঁয়ে যাচ্ছিল। এরপর গেলাম মাও ট্রপ ভিউ পয়েন্ট-এ। পথে আমরা সকালের নাশতা করে নিলাম। অরেঞ্জ রেস্টুরেন্ট-এ। এ রেস্টুরেন্টের বৈশিষ্ট্য হল- এখানে ১৫০ রুপি দিয়ে ৬টি আইটেম সঙ্গে পাপড়, রুটি, ভাত যে কোনো কিছু যত খুশি তত খেতে পারবেন। আর পরিবেশন পদ্ধতিও বেশ চমৎকার। এরপরে বাপ্পী দা বললো, তাড়াতাড়ি যেতে হবে সেভেন সিস্টার্স ফল দেখতে হলে, কারণ এ ফল প্রায় সময়ে মেঘে ঢাকা থাকে; কপাল ভালো থাকলে দেখা মেলে। আমরা এলাম সেই কাক্সিক্ষত সেভেন সিস্টার ফলে। অসাধারণ দৃশ্য যেন কেউ তুলির পরশ দিয়া এঁকে রেখেছেন। বাপ্পী দা’কে জিজ্ঞেস করলাম এই সেভেন সিস্টার ফলস্ কেন বলা হয়- দাদা বললেন, প্রচলিত আছে যে, ৭টি জেলা নিয়ে এই মেঘালয় প্রদেশ যার প্রতিটিতেই নারী প্রধান, তাই একে সেভেন সিস্টার ফলস বলে।
এরপর গেলাম ইকো পার্কে এখান থেকেই সেভেন সিস্টার ফলসে পানি বেয়ে নামে। এরপর আমরা গেলাম মাওসমাই গুহায়। ছোট একটি গুহা। ভেতরে সুড়াঙ্গের মতো রাস্তা। এখানে পর্যটকদের চলাচলের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা আছে। গুহাটা অসাধারণ এবং কিছুটা ভয়ঙ্কর। ভেজা, কাদামাখা পথ কিছু জায়গায় গুহাটির এত সরু যে, আমাদের প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে পার হতে হয়েছিল। তবে গুহাটিতে বয়স্ক মানুষ নিয়ে না ঢোকাই ভালো। গেলাম রামকৃষ্ণ মিশন চেরাপুঞ্জিতে। যেটি ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে আদিবাসীর হাতে তৈরি জিনিস বিক্রি হয়। সঙ্গে আছে মিউজিয়াম, আদিবাসীদের ঐতিহ্য বেশকিছু নিদর্শন আছে মিউজিয়ামটিতে। আর মিশন পরিবেশও বেশ নিরিবিলি। এখানে ২২০০ ছাত্র পড়াশোনা করে আদিবাসী ও বাঙালি মিলে। এর পরের গন্তব্য Mawtro Trop এখানে বিশাল দৈত্যাকার একটি পাথরের দেখা মেলে যা খাশিয়াদের উল্টানো চোঙ্গাকৃতির ঝুড়ির মতো। প্রচলিত লোক কাহিনী মতে, পাথরের ঝুড়িটি একটি অশুভ দৈত্যের, যে নাকি মানুষের ক্ষতিসাধন করে বেড়াত, দৈত্যটির হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ তাকে ধারালো লোহা এবং পেরেক মিশ্রিত খাবার খেতে দিয়েছিল, এতে করে দৈত্যটির মৃত্যু ঘটে। দৈত্যটি যে ঝুড়ি ফেলে গেয়েছিল সেটি ২০০ ফিট উঁচু পাথরে পরিণত হয়।
চেরাপুঞ্জিতে ঘুরে বেড়ানোর সুবিধা হল সব ঝর্ণা গাড়িতে বসে ঘুরে দেখা যায়। পাহাড়ে ট্রেকিং করে যাওয়ার দরকার হয় না। আমরা কিছু সময় বিরতি দিয়া আবার রওনা দিলাম শিলংয়ের পথে। পথে আরও বেশ কয়েকটা ঝর্ণা দেখলাম। শিলং ফিরতে ফিরতে দুপুর ১টা আরও ৪টি স্পট দেখতে হবে। প্রথমেই গেলাম Don-Bosco-Museume-এ, এখানে পুরো নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়ার সংস্কৃতির পুরো ধারণা পাওয়া যাবে। এই মিউজিয়াম ভালোভাবে ঘুরে দেখতে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। আমরা আধাঘণ্টা দেখে শেষ করে পরবর্তী গন্তব্যের দিকে ছুটলাম। এরপর এলাম বড়াপানি লেকে, বিশাল লেক। এখানেও স্পিড বোট দিয়া ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা আছে, তাই আর লোভ সামলাতে পারলাম না। কারণ এর আগে Words lake-এ বোটে উঠতে পারিনি সময়ের অভাবে। এরপর গেলাম Elephant falls-এ খাসিয়ারা এই ঝর্ণাটিকে তিন ধাপের ঝর্ণা বলত। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরা এর নাম দেয় ‘এলিফেন্ট ফলস’; কারণ ঝর্ণাটির বাম পাশে হাতির মতো একটি পাথর ছিল, ১৯৮৬ সালের ভূমিকম্পে পাথরটি ধ্বংস হয়ে যায়। Elephant falls-এ একদম নিচে নামা যায়, তবে ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে- বাচ্চা ও বয়স্কদের নিয়ে নিচে না নামাই ভালো।
আমার শেষ গন্তব্য হল শিলং পিক মেঘালয়ের সব থেকে উঁচু স্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯৬৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এখানে watch tower-এ উঠে পুরো মেঘালয় দেখা যায়। ৬০ রুপির বিনিময়ে খাসিয়া রাজা-রানীর পোশাক পরে ছবি তোলারও ব্যবস্থা আছে এখানে; তবে বলে রাখা ভালো। Shillong peak india ainforc-এর সংরক্ষিত যায়গা, এখানে ঢুকতে হলে অবশ্যই পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে এবং তা জমা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে এবং বের হওয়ার সময় নিয়ে বের হতে হবে।
Elephant falls দেখে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা। হোটেলের রুমে এসেই কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম শহর ঘুরতে। শিলং অসম্ভব সাজানো-গোছানো সুন্দর একটি ছোট শহর। শহরে দেখা মেলে সুন্দর সব একতলা, দোতলা বাড়ি, রাস্তাঘাট বেশ ভালো, ঘুরে বেড়াতে বেশ মজা। সবচেয়ে অদ্ভূত ব্যাপার যা চোখে পড়ল প্রায় সব বাড়ির সামনেই ফুল গাছের ঝাড়। ঘর যত ছোট হোক না কেন ফুলের স্নিগ্ধ ছোঁয়া তাতে থাকবেই। পুলিশ বাজার খুঁজে পেলাম মিষ্টির দোকান। বিভিন্ন ধরনের নাম না জানা মিষ্টি দেখলেই জিভে জল আসে। পরে ৪ রকমের মিষ্টি খেলাম। অন্যরকম স্বাদ মিষ্টিগুলোতে। বাসার জন্য কিছু শুকনো মিষ্টি নিয়ে নিলাম। রাত ৯টারও বেশি বেজে গেল হোটেলে ফিরতে, রাতেরবেলা পাহাড়ের ওপর বাতি জ্বালানো শহরগুলোর রূপ অসাধারণ। পরদিন দেশের পথে ফিরতি যাত্রা, সকালে রওনা দিতে হবে। সকালে ফিরতে পথে আরও দুইটি স্পট দেখতে হবে। সকাল ৮টায় হোটেল থেকে বিদায় নিয়ে Mawalynnong (The Cleanest village) যাত্রা। মুষল ধারায় বৃষ্টি শুরু হল- এ দুইদিন এত বৃষ্টির মুখোমুখি হইনি। Mawalynnong গ্রামটি শিলং থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখান থেকে ডাউকি ৩৫ কিলোমিটারের মতো। Mawalynnong এশিয়ার সব থেকে পরিষ্কার গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামের প্রতিটি ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং বেশ গোছানো আর শিক্ষার হার শতভাগ। এরপর আমরা গেলাম Riwai Root Bridge or Living Root Bridge-এ। একদিকে প্রচণ্ড বৃষ্টি অন্য দিকে বনের ভিতর ঝিঝি পোকার ডাক এক মধুর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। গন্তব্যে কিছু অংশ সিঁড়ির পরই পিচ্ছিল রাস্তা তাও বেশ নিচে নামতে হয়। Riwai Root Bridge দেখতে হলে তাই বেশ সাবধানতার সঙ্গেই নিচে নামলাম। বট গাছের শিকড় দিয়ে দুই পাশের সংযোগস্থল তৈরি হয়েছে, নিচে দিয়ে নদী বয়ে যাচ্ছে। এরপর আমরা গেলাম Balancing Rock দেখতে, বিশাল বড় একটি পাথর প্রায় একটি বিন্দুর ওপরে, তার ভারসাম্য বজায় রেখেছে। Balancing Rock দেখে আমরা ডাউকির দিকে যাওয়া শুরু করলাম। বেলা তখন ১টা বাজে, বাপ্পি দা বললেন, এখন এক জায়গায় নিয়ে যাব, তোমরা যতগুলো ঝর্ণা দেখেছ তার মধ্যে সবচেয়ে বড়।
খুব সুন্দর রাস্তা সঙ্গে বিএসএফের চৌকি, অপর পাশে বাংলাদেশ আমরা এলাম সেই ঝর্ণার পাশে। বিশাল বড় ঝর্ণা। তীব্র গতিতে পানি নামছে। একদিকে মুষল ধারায় বৃষ্টি, ওই বৃষ্টির মধ্যেই গাড়ি থেকে নেমে ঝর্ণার পাশে গেলাম। পথে আসতে বেশ কিছু ঝর্ণার দেখা মেলে। সর্বশেষে দেখলাম ডাউকি থেকে জাফলংকে।
দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম বর্ডারে। এবার দেশে ফেরার পালা, মনটা খুব খারাপ লাগছিল শিলংয়ের পরিবেশ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছেড়ে যেতে।
কখন যাবেন
শিলংয়ে যাওয়ার ভালো সময় জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝা মাঝি সময়। কারণ অক্টোবর মাস থেকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকে আর ঝর্ণাগুলোর পানিও কমে যায়, তাই আদর্শ সময় হল জুলাই-আগস্ট মাসে। এ সময় বৃষ্টি থাকে তাই ঝর্ণাগুলো অপরূপ রূপ ধারণ করে। তবে সঙ্গে হাল্কা গরম কাপড় এবং ছাতা অবশ্যই নিতে হবে। বৃষ্টিপাত এ অঞ্চলে যখন-তখন হতে পারে।
পরিবহন ব্যবস্থা
শ্যামলী ও বিআরটিসি নতুন বাসসার্ভিস চালু করেছে। বৃহস্পতিবার গিয়ে সোমবার ফেরে। অথবা ভেঙে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে সিলেট, এরপর মাইক্রোবাস অথবা সিএনজি করে তামাবিল বর্ডার, সেখান থেকে জিপ/ট্যাক্সি ভাড়া ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩০০০ রুপি, শিলং থেকে চেরাপুঞ্জি জিপ/ট্যাক্সি ভাড়া ৩০০০ থেকে ৩৫০০ রুপি (সাইটসিন ভিজিটসহ)। এ ছাড়া লোকাল বাস আছে তবে সব জায়গা ঘুরে দেখতে হলে ট্যাক্সি/জিপ ভাড়া করে নেয়াই ভালো। শিলং শহর স্পটগুলো দেখতে সারা দিনের জন্য ২৫০০ থেকে ৩০০০ রুপি। শিলংয়ে কিছু জায়গা আছে দেখার সময় টিকিট কাটতে হয়। ক্যামেরার জন্য আলাদা করে ১০/২০ রুপি দিতে হয়। সূত্র : যুগান্তর
Pingback: ঈদের বন্ধে শিলং-চেরাপুঞ্জি | Dhaka Tourist Club
Pingback: শিলং-চেরাপুঞ্জির ভ্রমণ খরচ কমলো স্পট বাড়লো | Dhaka Tourist Club
Pingback: ১৫ ডিসেম্বর শিলং-চেরাপুঞ্জি-গৌহাটি ট্যুর | Dhaka Tourist Club
Pingback: ২ ফেব্রুয়ারি শিলং-চেরাপুঞ্জি-সোনংপেডাং ফেমিলি ট্যুর | Dhaka Tourist Club
Pingback: শিলং-চেরাপুঞ্জি-জৈন্তা হিলস ঈদ ট্যুর | Dhaka Tourist Club
Pingback: এবারের চেরাপুঞ্জি ট্যুর ভরা বর্ষায় | Dhaka Tourist Club
Pingback: চেরাপুঞ্জি-শিলং ঈদ ট্যুরে থাকছে নতুন ও আকর্ষণীয় অনেক কিছু | Dhaka Tourist Club
Pingback: ঈদে চলুন শিলং-চেরাপুঞ্জি ঢাকা ট্যুরিস্টের সাথে | Dhaka Tourist Club
Pingback: বিশেষ গ্রুপ ট্যুরে শিলং-চেরাপুঞ্জি চলুন নভেম্বরের ১ তারিখে | Dhaka Tourist Club
Pingback: ঈদে চলুন শিলং-চেরাপুঞ্জি ঢাকা ট্যুরিস্টের সাথে | Dhaka Tourist Club