Skip to content

মেটেপিঠ লাটোরা

সৌরভ মাহমুদ
ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান শুধু গাছপালায় সমৃদ্ধ, তা কিন্তু নয়। এই উদ্যানে দেখা মেলে বহু প্রজাতির বুনো পাখির, যার বড় একটি অংশ হলো আমাদের আবাসিক পাখি। তবে শীত, গ্রীষ্ম ও বর্ষায় কিছু বিরল প্রজাতির পরিযায়ী ও পান্থ পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে এখানে। বন-খঞ্জন, দেশীয় নীল রবিন, আশটে দামা ইত্যাদি। মেটেপিঠ লাটোরা এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

Latora

ছোট ঝাউগাছে বসে আছে মেটেপিঠ লাটোরা। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান থেকে তোলা l ছবি: লেখক

মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে পাখি দেখতে গিয়ে একটি মেটেপিঠ লাটোরা দেখি। একটি ছোট ঝাউগাছের ডালে বসে শীতের সকালে রোদ পোহাচ্ছিল সে। গত বছরও এখানে একটি মেটেপিঠ লাটোরা দেখেছিলাম। তবে প্রথম দেখি ২০০৮ সালে মৌলভীবাজার জেলার শাহাবাজপুরের কাছে একটি চা-বাগানের পাহাড়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি সে পাহাড়ের কাছের ঝোপে শিকার করছিল বনের পোকা। তারপর ২০১০ সালে একটি দেখেছিলাম গোপালগঞ্জ শহরের কাছে একটি সরকারি বিশ্রামাগারের বাগানে।

মেটেপিঠ লাটোরা পাহাড়ের পাশের ছোট ঝোপে, বনমধ্যস্থ খোলা জায়গায়, আবাদি জমির প্রান্তদেশে এবং শহর-গ্রামের খোলামেলা বাগানে বিচরণ করে। শীতকালীন আবাসে একা থাকে। ঝোপে বসে এ পাখি সার্বক্ষণিক শিকারের খোঁজে মগ্ন থাকে। শিকার পেলে এক উড়াল দিয়ে মাটিতে নেমে শিকার ধরে ফেলে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে পঙ্গপাল, ঝিঁঝিপোকা, ফড়িং, পাখির ছানা, টিকটিকি, ছোট ইঁদুর ইত্যাদি। শীতের আবাসে একই জায়গায় অনেক দিন বিচরণ করে। তবে কোনো ভয় পেলে জায়গা পরিবর্তন করে।
শীতের সকালে রোদ পোহানো হলে খাবারের সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। গোধূলিবেলায় এ পাখি গান করে এবং মাঝেমধ্যে অন্য পাখির ডাক অনুকরণ করে। মেটেপিঠ লাটোরা বাংলাদেশের দুর্লভ পরিযায়ী পাখি। শীত মৌসুমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট বিভাগে দেখা যায়। ভারত, নেপাল, ভুটান মিয়ানমারসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের দেখা যায়।

এ পাখির পিঠের পালকের রং কালচে মেটে। পেটের পালক হালকা লালচে। দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ সেন্টিমিটার, ওজন ৫০ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিক ধূসর, দেহের নিচের দিক ফিকে লালচে। কপাল, মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পেছনের অংশ ধূসর। কোমর লালচে। চোখ বাদামি। গলা সাদা। পা ও পায়ের নখর কালো। ঠোঁটের নিচের অংশের গোড়া ফিকে। ছেলে ও মেয়ে পাখির চেহারা ও গড়ন একই রকমের। মেটেপিঠ লাটোরার বৈজ্ঞানিক নাম Lanius tephronotus। ইংরেজি নাম Grey-backed Shrike। এ পাখি বাংলাদেশে বাসা বানায় না। প্রজননকাল জুন-জুলাই। শীতের আবাস থেকে চলে গিয়ে হিমালয় ও তিব্বতের ছোট গাছ অথবা কাঁটাওয়ালা ঝোপে পশম, ঘাস, পালক দিয়ে বাটির মতো বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমের রং ধূসর-সবুজ, সংখ্যায় তিন থেকে ছয়টি। প্রায় ১৪ দিনে ডিম ফুটে ছানা হয়। এরা কৃষকের পরম বন্ধু। পোকা খেয়ে এ পাখি পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। সৌজন্যে : প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *