Skip to content

‘মোটাসোটা’ বিমানসেবিকাদের বাদ দিচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া

শুভজ্যোতি ঘোষ
ভারতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া তাদের প্রায় সোয়াশো কেবিন ক্রু বা ‘এয়ার হোস্টেস’কে অতিরিক্ত ওজনের কারণে গ্রাউন্ড-ডিউটিতে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে যে সব কেবিন ক্রু বা বিমানসেবিকার ‘বডি মাস ইনডেক্স’ একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের চেয়ে বেশি, তারা আর ফ্লাইটে ডিউটি করতে পারবেন না।

শ্রমিক সংগঠনগুলো এয়ার ইন্ডিয়া-র এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করলেও বেসামরিক পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার ব্র্যান্ডকে আধুনিক করে তুলতে ‘মোটাসোটা’ এয়ারহোস্টেসদের সরিয়ে দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই।

ভারতে এখন আধুনিক মানের অন্তত ছ-সাতটি ঝাঁ-চকচকে বেসরকারি এয়ারলাইনের সঙ্গে নিয়মিত পাল্লা দিতে হয় সরকারি সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াকে। কিন্তু দেশের একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ার আশিস ধরের অভিজ্ঞতা বলে, এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে উঠলেই বেশির ভাগ সময় মোটাসোটা, বয়স্ক ও ভারিক্কি এয়ারহোস্টেসরাই কেবিনে তাদের স্বাগত জানিয়ে থাকেন।

Air-India

যাত্রীদের মধ্যে এই ধরনের ক্ষোভ সামাল দিতেই এয়ার ইন্ডিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সোয়াশোরও বেশি ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ও এয়ারহোস্টেসকে তারা অন্য কাজে সরিয়ে দেবে।

আশিস ধরের মতে সিদ্ধান্তটা সঠিক, কারণ প্লেনের ভেতর আসলে নড়াচড়ার জায়গাও যে খুব অল্প। তার কথায়, ‘সরু আইলের মধ্যে অনেক সময় যাত্রীদের সাহায্য করতে এয়ারহোস্টেসদের বেশ বেগ পেতে হয়। সেখানে তারা নিজেরাই যদি বিশালবপু হন, তাহলে সেটা তো মুশকিল বটেই!’

কিন্তু দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই এয়ার ইন্ডিয়ার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এর আগে তারা একটা বয়সের বেশি এয়ারহোস্টেসের বসিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল, এখন তাদের বক্তব্য এয়ার ইন্ডিয়া ওজনের অজুহাতেও বৈষম্য করতে চাইছে।

জাতীয় শ্রমিক নেতা ও পার্লামেন্টারিয়ান তপন সেন বিবিসিকে বলছিলেন, ‘এয়ার ইন্ডিয়ার সার্ভিস রুলে ওজনের কারণে কোনও কর্মীর সাথে বৈষম্য করার কোনও সুযোগ নেই। তারপরেও যদি ফিটনেসের প্রশ্ন থাকে, সেখানেও নির্বাচিত ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসে নির্দিষ্ট বিধিমালা তৈরি করে তবেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে।’

কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নগুলোর এই বক্তব্যকে বিন্দুমাত্র আমল না-দিয়ে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লোকসানে ধুঁকতে থাকা এয়ার ইন্ডিয়াকে চাঙ্গা করতে হলে এ ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে – কারণ এয়ারলাইন ইন্ডাস্ট্রিতে এটাই রেওয়াজ।

সেন্টার ফর এশিয়া প্যাসিফিক এভিয়েশনের ডিরেক্টর কপিল কাউলের কথায়, ‘গ্রাহক-পরিষেবা নির্ভর এই শিল্পে বেশি ওজনের কেবিন ক্রু রাখাই যায় না। বেশি ওজনের একজন কেবিন ক্রু পুরো এয়ারলাইনের ফিটনেস বা স্বাস্থ্য সম্পর্কেও মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন নয়।’

তিনি আরও বলছেন, ‘ক্রু-দের হতে হবে চটপটে, সপ্রতিভ, সুন্দর দেখতে – আর তা না-হলে সেই এয়ারলাইনকে নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবেই। ফলে মোটাদের সরিয়ে দেওয়া নিয়ে এত হইচইয়ের কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।’

তবে বিষয়টি স্পর্শকাতর, এটা অনুধাবন করে এয়ার ইন্ডিয়া এখনও এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও বিবৃতি দেয়নি।

তবে সংস্থার সূত্রগুলো বলছে – বিষয়টা ঠিক ওজনের নয়, বরং বডি মাস ইন্ডেক্সের – এবং এয়ারলাইন শিল্পে কেবিন ক্রু অনেক ধরনের আপদকালীন পরিস্থিতি সামলাতে হয় বলেই তাদের ফিটনেসের সঙ্গে কোনও আপস করা সম্ভব নয়। সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *