Skip to content

ময়মনসিংহের পথে প্রান্তরে

মাহমুদ হাসান খান
ময়মনসিংহে রয়েছে দেখার মতো নানা কিছু। তাই একটু সময় ও সুযোগ পেলে একবার ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার খুব কাছের এ জেলায়। চার লেন রাস্তার কাজ প্রায় শেষের দিকে আর তাই যাতায়াতের ভোগান্তিও নেই। খুব সকালের বাসে উঠতে পারলে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন ময়মনসিংহ।  তাই আসুন ময়মনসিংহ জেলা সম্পর্কে একটু চোখ বুলিয়ে নিই।

বাংলাদেশের প্রাচীন জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম ময়মমনসিংহ। ১৭৮৭ সালের ১ মে এই জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে প্রশাসনিক সুবিধা এবং বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশরা এ জেলা গঠন করেছিল। ময়মনসিংহের পুরোনো নাম মোমেনশাহী। মধ্যযুগে মোমেন শাহ নামে এক সাধক ছিলেন, তাঁর নামেই এটি মোমেনশাহী নামে পরিচিতি পায়। পরবর্তীকালে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর ছেলে সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ। কিন্তু এ নামে রাজপুতনায় আরেকটি জায়গা থাকায় নাম পরিবর্তন করে ময়মনসিংহ রাখা হয়।

Mymensing

বোটানিক্যাল গার্ডেন
ময়মনসিংহ নেমেই প্রথমে চলে যান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। বিলুপ্তপ্রায় গাছপালাকে সংরক্ষণ এবং মানুষের কাছে পরিচিত করানোর জন্য ১৯৬৩ সালে এ বোটানিক্যাল গার্ডেনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মধ্যে ঢুকেই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে সারি সারি অচেনা সব গাছ দেখে। সুন্দর বাঁধানো রাস্তা আর তার দুই পাশের সুশোভিত বৃক্ষরাজি ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করবে না। জেনে অবাক হবেন যে এ গার্ডেনে ৫৫৮ প্রজাতি কয়েক হাজার গাছ রয়েছে। এর মধ্য রয়েছে ফুল, ফল, ঔষধি, লতাপাতাসহ নানা জাতের গাছ। প্রজাতি সংখ্যার দিক থেকে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ বাগান।

Mymensing2

শশী লজ
বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখে একটা অটো নিয়ে চলে যান শশী লজ-এ। প্রায় দেড়শ বছর আগে মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী ৯ একর জমির ওপর দোতলা এ নয়নাভিরাম ভবনটি তৈরি করেন। নাম রাখেন তাঁর দত্তক ছেলে শশীকান্তর নামে। এ বাড়িটি  ‘ক্রিস্টাল প্যালেস’ বা ‘রংমহল’ নামেও পরিচিত ছিল। পরবর্তী সময়ে ১৮৯৭ সালে এটি ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হলেও আবার পুনর্নির্মাণ করেন জমিদার শশীকান্ত। বর্তমানে এটি মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভেতরে ঢুকতে হলে সামনের গেটে নিরাপত্তা প্রহরীর অনুমতি নিতে হবে।

Mymensing3

আলেকজান্ডার ক্যাসেল
শশী লজ দেখা শেষ করে একটু হেঁটে চলে যান আলেকজান্ডার ক্যাসেল-এ। আলেকজান্ডার ক্যাসেল ময়মনসিংহ শহরের পুরোনো একটি স্থাপনা। মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ১৮৭৯ সালে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় করে ততকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের সম্পত্তি রক্ষার্থে এ প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রাসাদটিতে লোহার ব্যবহার বেশি করা হয়েছিল বলে এলাকাবাসী এটিকে ‘লোহার কুঠি’ নাম দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভবনটিতে অনেক বরেণ্য ব্যক্তির পদধূলি পড়েছে। ১৯২৬ সালে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহ সফরের সময়ে আলেকজান্ডার ক্যাসেলে কিছুদিন ছিলেন। এ ছাড়া এখানে আরো এসেছিলেন লর্ড কার্জন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, কামাল পাশা প্রমুখ। এটি বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ণ কেন্দ্রের পাঠাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

Mymensing4

জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা
আলেকজান্ডার ক্যাসেল দেখে হেঁটে হেঁটে চলে যান ব্রহ্মপুত্রের তীরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা দেখতে। ১৯৭৫ সালে এ সংগ্রহশালাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে শিল্পাচার্যের ৭০টি চিত্রকর্ম ছিল কিন্তু কিছু ছবি চুরি হয়ে যাওয়ায় এখন মোট ৬৩টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে। এসব ছবির মধ্যে আছে শম্ভুগঞ্জ ঘাট, শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ, স্কেচ, স্কেচ, স্কেচ, স্কেচ, স্কেচ, স্কেচ (বংশীবাদক), বাস্তুহারা, প্রতিকৃতি এবং অন্যান্য অনেক ছবি। এসব ছবি ছাড়াও রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত জিনিস এবং তাঁর কিছু স্থিরচিত্র। সংগ্রহশালাটি শুক্রবারের দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে। প্রবেশ ফি ২০ টাকা।

সংগ্রহশালার ঠিক পাশেই পৌর পার্ক। সুন্দর সাজানো গোছানো ব্রহ্মপুত্র নদীতীরের এ পার্কটিতে অনায়াসে একটা বিকেল কাটিয়ে দেওয়া যায়। এ পার্কের একপাশে রয়েছে নানা মানের রেস্টুরেন্ট আর স্ট্রিট ফুড শপ। ব্রহ্মপুত্রে নৌভ্রমণ করতে চাইলে রয়েছে তারও ব্যবস্থা, আছে গাছপালার অপূর্ব সমারোহ। মোট কথা, একটি প্রাকৃতিক নির্মল পার্কে যা থাকা দরকার সবই আছে।

তাই আর দেরি নয়। যে কোনো এক ছুটির দিনে চলে যান ময়মনসিংহে। দেখে আসুন বাংলাদেশের প্রাচীন এ জেলাকে।

কীভাবে যাবেন : মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এনা, শামিমসহ বেশ কটি বাস ছেড়ে যায় প্রতি ঘণ্টায়। সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা, ভাড়া নেবে ২০০ টাকা। ময়মনসিংহ নেমে ৩০-৪০ টাকা অটোভাড়া দিয়ে যে কোনো জায়গায় যেতে পারবেন।

কোথায় খাবেন : ময়মনসিংহে খাওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট। সি কে ঘোষ রোডে আছে সারিন্দা, একটু সামনেই নীরব রেস্টুরেন্ট। ভর্তা-ভাজি খেতে চাইলে যেতে পারেন গাঙ্গিনার পাড়ে খন্দকার রেস্টুরেন্টে। আর মিষ্টির জন্য তো কৃষ্ণা কেবিন আছেই।

কোথায় থাকবেন : রাতে থাকার প্রয়োজন পড়লে গঙ্গাদাস গুহ রোডে হোটেল মুস্তাফিজ ইন্টারন্যাশনালে থাকতে পারেন। ফোন : ০১৭১৫-১৩৩৫০৭। ভাড়া নেবে সিঙ্গেলে ৫০০ টাকা, ডাবল ৮০০ টাকা, হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনালও ভালো তবে ভাড়া বেশি। ১৬০০ টাকা থেকে শুরু। সৌজন্যে : এনটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *