আরাফাত পারভেজ
পৃথিবীতে এ যাবত কম সভ্যতার উৎপত্তি হয়নি, আবার অসংখ্য সভ্যতা হারিয়ে গেছে চিরতরে। প্রত্যেক সভ্যতার আলাদা আলাদা স্থাপত্য থাকে, যেগুলো বহন করে সেই সভ্যতার পরিচয়। প্রাচীনতম মায়া সভ্যতা কিংবা ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যান হারিয়ে গেছে বহু আগে। তাদের হারানো অনেক স্থাপত্যের নিশানা আমরা আবিষ্কার করছি অনেক পরে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বিশ্বের আরো অনেক বিরল স্থাপত্য এখনো আমাদের চোখের সামনে ধ্বংস হচ্ছে। এই সমস্ত সৃতিস্তম্ভ আর কখনো আমরা দেখতে পাবো না। এমন কিছু স্থাপত্য নিয়ে এই আয়োজন :
ইরাকের নিমরুদ : ইরাকের নিনেভ প্রদেশ ঘিরে গড়ে ওঠা প্রাচীন আসিরীয় শহর। স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন হিসেবে ইরাক বরাবরই উন্নত ছিল। এখানে প্রচুর শৈল্পিক সৃতিস্তম্ভও ছিল। কিন্তু ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণে এর বেশিরভাগই ভেঙেচুরে যায় এবং অনেক শিল্প পাচার হয়ে যায়।
সিরিয়ার আলেপ্পো দুর্গ : সিরিয়ার আলেপ্পো দুর্গ বহুপুরনো ঐতিহাসিক নিদর্শন। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সময় থেকে রোমান সাম্রাজ্য, মোগল সাম্রাজ্য এবং অটোম্যান সাম্রাজ্য পার হয়ে টিকে ছিল আজ অবধি। কিন্তু সাম্প্রতিক সিরিয়া যুদ্ধে এটাকে সেনাঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং এর বেশ কয়েকটি দালান ধ্বংস হয়ে যায়।
সিরিয়ার হামার চাকা : এই ২০ মিটার চওড়া পানি চাকা পঞ্চম শতকের নিদর্শন। এটাই সর্বপ্রথম কৃষিকাজে জলসেচ করার কাজে ব্যবহৃত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। হামাতে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ ছিল এটা। কিন্তু ২০১৪ সালে এটাকে পুড়িয়ে ফেলা হয়।
সিরিয়ার প্রাচীন শহর বসরা : আড়াই হাজার বছরের পুরাতন এই শহরটি একসময় ছিল রোমানদের আরব রাজধানী। রোমানরা এটার সামনের অংশকে ব্যবহার করতেন নাটকের মঞ্চ হিসেবে। কিন্তু সাম্প্রতিক যুদ্ধে ভারি গোলার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে শহরটি।
আফগানিস্তানের বুদ্ধ মূর্তি : যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে দাঁড়িয়ে থাকা সবচেয়ে দীর্ঘ বুদ্ধ মূর্তির মধ্যে একটা। পনেরোশ’ বছরের পুরনো এই কীর্তি খোদাই করা হয়েছিল বালি খুড়ে। কিন্তু তালেবানরা এটাকে মূর্তি পূজা মনে করে ধ্বংস করে ফেলে।
সিরিয়ার পালমিরা : সিরিয়ার মরুভূমিতে অবস্থিত এই আরামায়িক শহরটি যিশুখ্রিস্টের জন্মেরও অনেক আগে থেকে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে সেই সময়ের আধুনিক স্থাপত্যের সমস্ত গুণাবলী বিদ্যমান। কিন্তু বর্তমানে জঙ্গি সংগঠন আইএসের হাতে শহরটির নিয়ন্ত্রণ থাকায় তারা এর বেশিরভাগ স্তম্ভ এবং দুর্গ ভেঙে ফেলেছে।
গাজার আল ওমারি মসজিদ : জাবালার কেন্দ্রে অবস্থিত এই মসজিদ তৈরি হয়েছিল মামলুক পিরিয়ডে। কিন্তু মসজিদের দেয়াল এবং গম্বুজ ভেঙে যায় সাম্প্রতিক সময়ে গাজাতে ইসরায়েলি বিমান হামলায়।
পাকিস্তানের কায়েদে আজম ভবন : ১২১ বছরের পুরনো এই ভবনটি কাঠের তৈরি। পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর মোহাম্মদ আলি জিন্নাহ শেষ বয়সে এখানে ছিলেন। ২০১৩ সালের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের রকেট হামলায় ভবনটি ধ্বংস হয়ে যায়।
লিবিয়ার সিরেন শহর : গ্রিক এবং রোমানদের ব্যবহৃত এই শহরটি তৈরি হয়েছিল যিশু খ্রিস্টের জন্মের সাড়ে ছয়শো বছর আগে। কিন্তু লিবিয়া বিপ্লবের সময় এটাকে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
ইরাকে ইউনুস (জোনাহ) নবীর কবর : হযরত ইউনুস (আ.) তিমি মাছের পেটে গিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন। এখানে সেই তিমির একটি দাঁতও সংরক্ষিত করা ছিল। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ৮শ’ বছর পূর্বের এই নিদর্শন মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা এখানে বোমা বর্ষণ করে ধ্বংস করে দেয়। সৌজন্যে : বাংলামেইল