দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা শহর রংপুর। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া রংপুরের পায়রাবন্দে জন্মগ্রহণ করেছেন। সাবেক রাষ্ট্র্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্মস্থানও রংপুর। অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন তাজহাট জমিদার বাড়ি রংপুরে অবস্থিত। বেসরকারি উদ্যোগে নির্মিত উত্তরাঞ্চলের সেরা বিনোদন পার্ক ভিন্নজগৎ রংপুরের খলেয়া গুঞ্জিপুর এলাকায়। রংপুরের মিষ্টি খেতে খুব মজার।
তাজহাট জমিদার বাড়ি : রংপুর শহর থেকে কিলো বিশেক দূরে তাজহাট গ্রাম। এখানে অবস্থিত তাজহাট জমিদার বাড়ি। জমিদার গোবিন্দ রায়ের ছেলে গোপাল রায় বাড়িটি নির্মাণ করেন। অষ্টদশ শতাব্দীর শেষ দিকে বাড়িটি নির্মাণ সম্পন্ন হয়। জমিদার বাড়ির স্থাপত্য সৌন্দর্য মনোমুগ্ধকর। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা জমিদার বাড়ি দেখতে আসেন। ১৯৮৭ সালে জমিদার বাড়ি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। এর আগে ১৮৯৭ সালে বাড়িটি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে ১৯১৭ সালে এটির পুনর্নির্মাণ সম্পন্ন হয়। প্রায় দুই হাজার রাজমিস্ত্রি কাজ করেন। তখনকার সময়ের মূল্যে খরচ হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা। জমিদার বাড়ির সামনে শ্বেতপাথর, ভেতরে চুনাপাথর, লাল ইট ব্যবহার করা হয়েছে। বাড়ির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় রাজা গোপালের ব্যবহৃত জিনিস রয়েছে। জমিদার বাড়িতে রয়েছে ২৮টি কক্ষ। বাড়ির সামনের মার্বেল পাথরের দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা রয়েছে। এ ছাড়া বাড়ির চার পাশে মেহগনি, কাঁঠাল, আম, কামিনীগাছের বাগান। পাশাপাশি বাঁধানো ঘাটসহ পুকুর বাড়ির শোভা বর্ধন করেছে। জাদুঘরে রয়েছে মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তি, শিবলিঙ্গ, ছোট কুরআন শরিফসহ পঞ্চাধিক প্রত্নসম্পদ। দেশ-বিদেশ থেকে আগত পর্যটকেরা এখানের ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ উপভোগ করেন। জাদুঘরের প্রবেশ ফি ১০ টাকা।
পায়রাবন্দ : ‘অন্ততপক্ষে বালিকাদিগকে প্রাথমিক শিক্ষা দিতেই হবে। শিক্ষা অর্থে প্রকৃত সুশিার কথাই বলি। গোটা কতক পুস্তক পাঠ করিতে বা দুই ছত্র কবিতা লিখিতে পারা শিক্ষা নয়। আমি চাই সেই শিক্ষা যা তাহাদিগকে নাগরিক অধিকার লাভে সক্ষম করিবে, তাহাদিগকে আদর্শ ভগিনী, আদর্শ গৃহিণী ও আদর্শ মাতা রূপে গঠিত করিবে।’ উপরোক্ত কথাগুলো নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার। ১৮৮০ সালে তিনি রংপুরের পীরগঞ্জের পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম-মৃত্যু একই দিনে। ৯ ডিসেম্বর ১৮৮০, মৃত্যু ১৯৩২। তার বাবা ছিলেন জমিদার জহির উদ্দিন মোহাম্মদ হায়দার সাবের চৌধুরী। প্রায় তিন শ’ বিঘা জমি নিয়ে ছিল বেগম রোকেয়ার বাড়ি। এখন যদিও কিছুই নেই সেখানে। ১৯৯৬ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় পায়রাবন্দে গড়ে তোলে বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র। এখানে মিলনায়তন, সেমিনার কক্ষ, গবেষণা কেন্দ্র, রোকেয়া ও তার উত্তরসূরিদের ব্যবহৃত জিনিস নিয়ে জাদুঘর, অতিথিশালা ও একটি তোরণ রয়েছে। রংপুর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে পায়রাবন্দ। রিকশা, অটোয় যাওয়া যায়।
ভিন্নজগৎ : ভিন্নজগৎ উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সেরা বিনোদন কেন্দ্র। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার খলেয়া গুঞ্জিপুর এলাকায় এটি অবস্থিত। ২০০১ সালে ভিন্নজগৎ চালু হয়। পুরো পার্কটিতে নানা রকম লোকশিল্প উপকরণ ছড়িয়ে রয়েছে। পিকনিক করার জন্য পার্কটি আদর্শ স্থান। রান্নার ব্যবস্থা আছে। নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো। শিশু ও বড়দের জন্য রয়েছে- শিশু কানন, মেরি গো রাউন্ড, সুইমিংপুল, স্পাইডার জোন, এয়ারপ্লেন রাইড, নাগরদোলা, হেলিকপ্টার, ফায়িং জোন ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে দেশের প্রথম পানেটোরিয়াম, রোবট স্ত্রিল জোন, জলতরঙ্গ, ওয়াক ওয়ে, বীরশ্রেষ্ঠ এবং ভাষাসৈনিকদের ভাস্কর্য, শাপলা চত্বর, সি প্যারাডাইস। এখানের আজব গুহা সত্যিই আজব। গুহার মধ্যে গা ছমছম করা পরিবেশ। ভিন্নজগতের মধ্যে খাবার রেস্তোরাঁ রয়েছে। রাতে থাকার ব্যবস্থা আছে। শহরের মেডিক্যাল মোড় থেকে বাসে যেতে হবে পাগলাপীড়। পাগলাপীড় থেকে রিকশা কিংবা ভ্যান ভিন্নজগৎ যাওয়ার মাধ্যম।