:: আফসানা সুমী ::
লিপকসি মন্দিরের অবস্থান অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলায়। মন্দিরটি অত্যন্ত প্রাচীন আর ভাবগাম্ভীর্য্যপূর্ণ। তবে এর খ্যাতির মূলে রয়েছে মন্দিরের স্তম্ভগুলো। আপনি ভাবছেন, স্তম্ভ তো যে কোনো ভবনেই থাকে। এতে আবার রহস্য কি? তবে এখানে ব্যাপার সেটা নয়। ব্যাপার হলো এই স্তম্ভগুলো ঝুলন্ত। অর্থাৎ মাটি স্পর্শ করেনি তারা!
লিপকসি মন্দিরে এমন নকশা করা ঝুলন্ত স্তম্ভের সংখ্যা ৭০টি। বিশ্বাস হচ্ছে না? স্তম্ভ ঝুলে থাকলে তো মন্দির দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না! ধসে পড়বে! এটাই তো রহস্য এখানে! কীভাবে এই স্তম্ভগুলো ঝুলন্ত অবস্থায় টিকে আছে এই নিয়ে আজও চলে গবেষণা, তৈরি হয় নানান উপাখ্যান।
স্তম্ভ এর নিচ দিয়ে পাতলা কাপড় সহজেই বের করে নিয়ে আসতে পারবেন আপনি। এবং মন্দিরে হরহামেশা এটা করতেও দেখা যায়। কারণ ভক্তরা মনে করেন এতে তাদের জীবনে বাড়বে সমৃদ্ধি। বিষয়টি কতটা সত্য সেটি ভিন্ন ভাবনার বিষয়। তবে যুগের পর যুগ ধরে ঝুলন্ত স্তম্ভ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লিপকসি নিয়ে রহস্য কিন্তু কাটছে না।
মধ্যযুগের এই মন্দিরের মূল নাম বীরভদ্র মন্দির। লিপকসি গ্রামে অবস্থানের কারণে এটি লিপকসি নামেও পরিচিতি পায়। মন্দিরের নির্মাণের সময়ের নানান কাহিনী প্রচলিত আছে। নির্মাণের খরচ রাজার দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাজকোষের দায়িত্ব থাকা ভিরুপান্না রাজাকে বিষ প্রয়োগে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। রাজা তার চোখ তুলে নেওয়ার আদেশ দিলে ভিরু নিজেই নিজের চোখ উপড়ে ফেলেন এবং মন্দিরের স্থানে ছুড়ে দেন। সেখানে এখনো ভিরুর রক্তের দাগ আছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
একজন ব্রিটিশ প্রকৌশলী একবার মন্দিরের ঝুলন্ত স্তম্ভের রহস্য উদ্ঘাটনের অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হন তিনি। এরপর অনেক প্রকৌশলীই এর নির্মাণ রহস্য ভেদ করতে চেয়েছেন। কিন্তু পারেননি।
রহস্য মন্দিরটিকে বিখ্যাত করেছে ঠিকই। তবে রহস্য বাদ দিলেও মন্দিরের দেয়ালের কারুকাজ, অপূর্ব সৌন্দর্য, স্থাপত্য শৈলী আপনাকে তাক লাগিয়ে দিতে যথেষ্ট। তাই কখনো অন্ধ্র প্রদেশ বেড়াতে গেলে ছোট্ট গ্রামের এই মন্দিরটিকে ভুলে যাবেন না যেন। সৌজন্যে: প্রিয়ডটকম