বিশ্বের ‘সি ট্যুরিজমের’ অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো ক্রুজশিপ বা বিলাসবহুল জাহাজ। এসব প্রমোদতরী গভীর সমুদ্রে ভেসে থাকা সত্ত্বেও এখানে রয়েছে আধুনিক সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং নীল জলরাশি ও আকাশের মিতালি উপভোগ করার সকল ব্যবস্থা। একই সঙ্গে কাটানো যায় অবকাশের সেরা সময়গুলোও। তবে নানা জটিলতায় বারবার উদ্যোগ নেয়া হলেও বিলাসবহুল ক্রুজশিপে চড়ে ঘুরে বেড়ানো আমাদের জন্য এতদিন অধরাই ছিল।
তবে এবার সেই সুযোগের দুয়ার উন্মোচন হতে যাচ্ছে বিদেশি ক্রুজশিপ বে ওয়ান’ এর বদৌলতে। সমুদ্রের নোনা হাওয়ায় বিলাসবহুল ক্রুজে শরীরটাকে মেলে দিয়ে ভেসে পড়ার সুযোগ এবার চাইলেই মিলবে। আর এই অভূতপূর্ব সুযোগ করে দিচ্ছে চট্টগ্রামের বিখ্যাত ‘কর্ণফুলী শিপবিল্ডার্স লিমিটেড’।
প্রতিষ্ঠানটির একটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, পর্যটকদের আন্তর্জাতিক মানের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা দিতে জাপান থেকে বিলাসবহুল এই বিদেশি ক্রুজশিপ বে ওয়ান’ কেনা হয়েছে। জাহাজটির আগের নাম ‘সালভিয়া মারু’ হলেও বাংলাদেশে নিয়ে এসে এটিকে ‘ক্রুজশিপ বে ওয়ান’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর, শনিবার জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়।
সম্প্রতি সরকারের অনুমোদনক্রমে আগামীকাল ২১ ডিসেম্বর প্রমোদতরীটি পর্যটকদের সেবা দেয়া শুরু করবে। এ উপলক্ষে উদ্বোধনী দিন আজ ২০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান মালা’র।
প্রাথমিকভাবে ভ্রমণপিপাসুদের কক্সবাজার সৈকত থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত সাগরে ভ্রমণের আনন্দ দেবে এই রাজকীয় জাহাজ। তবে জাহাজটি যেহেতু আইএমও রেজিস্ট্রার্ড সমুদ্রগামী তারকামানসম্পন্ন জাহাজ, সে ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ও আশপাশের দ্বীপাঞ্চলেও প্রমোদভ্রমণের চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে জাহাজটি বার্থিংয়ের জন্য কক্সবাজারের দরিয়ানগরে জেটিঘাট নির্মাণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে।
জাপানের কোবেই শহরের মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজে তৈরি এই ক্রুজশিপটির দৈর্ঘ্য ৩৯৩ ফুট, প্রস্থ ৫৫ ফুট ও ১৮ ফুট প্রায় ড্রাফট রয়েছে। এটির গড়গতি ঘণ্টায় ১৬ দশমিক ১ নটিক্যাল মাইল এবং সর্বোচ্চ গড়গতি ঘণ্টায় ২৪ নটিক্যাল মাইল। তবে বাংলাদেশের উপকূলীয় সমুদ্রপথে এই জাহাজ প্রতিঘণ্টায় গড়ে ১৮ থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম।
এ প্রমোদতরীতে রয়েছে প্রেসিডেন্ট স্যুট, বাংকার বেড কেবিন, টুইন বেড কেবিন, আরামদায়ক চেয়ারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির আসন। আরও আছে একটি রেস্তোরাঁ, স্বয়ংক্রিয় ভেন্ডিং মেশিন এবং কয়েন পরিচালিত ঝর্ণা। কর্তৃপক্ষ জাহাজটিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েছেন, এর ফলে জাহাজে এখন দুই হাজারের বেশি আসনের ব্যবস্থা থাকছে।
জাহাজটি একসময় টোকিও থেকে ওশিমা-তোশিমা-নিজিমা-শিকিনিজিমা-কোজুশিমা এবং গ্রীষ্মে টোকিও বে নাইট ক্রুজ ‘টোকিও ওয়ান নুরউইসন’ হিসেবে যাত্রা করতো।