এএফপিটেমস নদীতে সুসজ্জিত রাজকীয় নৌবহর। তারপর তোপধ্বনি। বেজে উঠল লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবির গির্জার ঘণ্টা। বাকিংহ্যাম প্যালেসের সামনের রাস্তায় জনতার ভিড়। পতাকা উড়িয়ে ও হর্ষধ্বনি দিয়ে আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন। এসব আয়োজনই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নিয়ে। তিনি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ সিংহাসনে আসীন থাকার নজির স্থাপন করলেন গতকাল বুধবার।
ঐতিহাসিক এই দিনে রানি ব্যস্ত সময় কাটান স্কটল্যান্ডে। সেখানে উদ্বোধন করেন একটি রেললাইন। এডিনবরা থেকে বাষ্পীয় ইঞ্জিনের বিশেষ ট্রেনে চড়ে পৌঁছান টুইডব্যাংকে। সেখানে জনতার উদ্দেশে বললেন, ‘দীর্ঘ এক জীবনে অবধারিতভাবে অনেক মাইলফলকই অতিক্রম করতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আমি আপনাদের এবং দেশে-বিদেশে অবস্থানরত সবাইকে ধন্যবাদ জানাই মন ছুঁয়ে যাওয়া বার্তাগুলো পাঠানোর জন্য।’
৮৯ বছর বয়সী এলিজাবেথ স্কটল্যান্ডের ব্যালমোরাল ক্যাসেলে গতকাল একটি ব্যক্তিগত ভোজ দেন। স্কটল্যান্ডের শিশুরা আনন্দধ্বনি আর স্কটিশ ও ব্রিটিশ পতাকা উড়িয়ে রানিকে অভিবাদন জানায়। এ সময় তাঁর সঙ্গী ছিলেন স্বামী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপ। উপস্থিত ছিলেন স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজন।
ব্রিটিশ সিংহাসনে ৬৩ বছর ৭ মাস ২ দিন ১৬ ঘণ্টা ২৩ মিনিট আসীন থাকার দীর্ঘতম নজিরটি এত দিন ছিল রানি ভিক্টোরিয়ার (১৮৩৭ সালের ২০ জুন থেকে ১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত)। গতকাল তাঁকে ছাড়িয়ে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ২৫ বছর বয়সে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। ব্রিটিশ রাজত্বে সবচেয়ে প্রবীণ শাসকও তিনি। বর্তমানে জীবিত শাসকদের মধ্যে রাজত্বকাল বিবেচনায় এলিজাবেথের চেয়ে এগিয়ে আছেন শুধু থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবল। তিনি এলিজাবেথের চেয়ে বয়সে দুই বছরের ছোট হলেও ক্ষমতায় আছেন তাঁর চেয়ে ছয় বছর বেশি সময় ধরে। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী রানি এলিজাবেথ একটি অনন্য নজির স্থাপন করেছেন—বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেশের মুদ্রায় ব্যবহৃত হয়েছে তাঁর ছবি।
লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে বিটি টাওয়ারে ভেসে ওঠে লেখা, ‘তাঁর শাসনামল দীর্ঘ হোক’। আর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রানিকে অভিবাদন ও শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দেন আইনপ্রণেতারা। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘তিনি আমাদের রানি এবং তাঁকে নিয়ে আমরা যারপরনাই গর্বিত। তিনি নির্ভুল অনুগ্রহ, মর্যাদা ও শিষ্টাচারের সঙ্গে এ দেশের সেবা করেছেন এবং তাঁর এ অবদান অব্যাহত থাকুক।’
বাবা পঞ্চম জর্জের মৃত্যুর পর রানি হিসেবে অভিষেক হয় এলিজাবেথের। তাঁর শাসনামলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রভাব ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সাবেক উপনিবেশগুলো একে একে স্বাধীন হয়। মানুষের জীবনমানের অনেক উন্নতির পাশাপাশি ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করে বিশ্ব। ১৯৫৭ সালে প্রথম টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণ দেন রানি এলিজাবেথ। এতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আপনাদের যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারি না। আমি আপনাদের জন্য আইন প্রণয়ন বা বিচার পরিচালনা করি না। কিন্তু অন্য কিছু করতে পারি। আমার হৃদয় ও ভালোবাসা দিতে পারি আপনাদের, যাঁরা এই দ্বীপ দেশ এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বিভিন্ন জাতির মানুষ।’
নরম্যান রাজা উইলিয়াম দ্য কনকোরার ১০৬৬ সালে ব্রিটিশ সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় ৪০তম উত্তরসূরি হিসেবে রাজত্ব করছেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তাঁর শাসনামলে উইনস্টন চার্চিল থেকে শুরু করে ১২ জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে যুক্তরাজ্য। সানডে টাইমস পত্রিকা এক জনমত জরিপের ভিত্তিতে বলেছে, ব্রিটিশরা এলিজাবেথকে দেশের শ্রেষ্ঠতম শাসক মনে করে। জরিপে তিনি প্রথম এলিজাবেথ এবং ভিক্টোরিয়ার চেয়েও এগিয়ে রয়েছেন।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি ও গার্ডিয়ান। সৌজন্যে : প্রথম আলো