Skip to content

রেলে চড়ে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন

Grand-Canyon3

লিয়াকত হোসেন খোকন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা স্টেটের উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ৪৪৬ কিলোমিটার বিস্তৃত পাথুরে ভূমির মধ্য দিয়ে কলোরাডো নদী বয়ে গিয়ে সৃষ্টি করেছে আশ্চর্য গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। এখানে যেতে হয় ট্রেনে চড়ে। সে এক বিচিত্র ব্যাপার।

উইলিয়ামস জংশন থেকে ট্রেনে চড়ে লোকজন যায় গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে। উইলিয়ামস শহরের পাশে রয়েছে রেললাইন- এটা লস অ্যাঞ্জেলস শিকাগো রেললাইন। এ রেললাইনে যাত্রীবাহী ট্রেন থেকে শুরু করে মাল ট্রেনও হু হু করে চলাচল করে।

ট্রেনে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন যাওয়ার পথে এই উইলিয়ামস শহরটাতে সবাইকে আসতে হয়। উইলিয়ামস শহরটা একেবারেই ছোট। শহর বললে ভুল হয়। মফস্বলের মতো। কয়েকটা দোকান আর বাড়ি পেরিয়ে উইলিয়ামস জংশনের লেভেল ক্রসিং। গোটা শহরটাই লজ আর রেলস্টেশন নিয়ে ছিমছাম। এটাই বিশ্রামের জায়গা। যে ট্রেনগুলো এ পথে চলাচল করে সেগুলোর ডাইনিং বগিটা খানিক পুরনো ধাঁচের ব্রিটিশ স্টাইলের কাঠামো। মাথার ওপর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন রেলের ছোট মডেলটা কু-ঝিকঝিক করে সারা বগি পরিক্রমা করে থাকে। পাউরুটি, মাখন, স্ট্রবেরি, দই, কফি ও নানা রকম ফল রয়েছে এখানে।

এ স্টেশনে কালো কুচকুচে স্টিম ইঞ্জিন এসে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ পর পর। তারই পাশে এসে দাঁড়ায় গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন রেল। এ ট্রেনের প্রথম ফ্লোরটি ফার্স্ট ক্লাস, সেখান থেকে সিঁড়ি ভেঙে আবার উপরে উঠতে হয়। এ ট্রেনের অবজারভেটরি ডোম ক্লাসে দু’পাশে দুটো করে চেয়ার। ট্রেনটি ডিজেল ট্রেন। কু ঝিক ঝিক করতে করতে ট্রেন চলে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের পথে।

Grand-Canyon

সেই ১৯০১ সাল থেকে এ ট্রেন যাত্রীদের পৌঁছে দিচ্ছে নির্দিষ্টপথে। কিছুক্ষণ পর পর ট্রেনের কোচ অ্যাটেনডেন্ট মাইকে ঘোষণা করেন, এটা একটা হেরিটেজ ট্রেন। ৪৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিটে পৌঁছে দেয় গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে। চলার পথে এ ট্রেন ক্রমশ উপরে ওঠে। এরই পাশ দিয়ে চলেছে পাকা রাস্তা। দু’ধারে ধু ধু করছে মাঠ। মাঝে মাঝে সাদাকালো রঙের গরু চরতে দেখা যায়। এ পথে হঠাৎ হঠাৎ দেখা যায় দলবেঁধে কী যেন ট্রেনের শব্দে ছুটতে ছুটতে এগিয়ে আসে। ঠিক যেন থমকে দাঁড়ায় তারা। তখন ভালো করে দেখা যায়, প্রঙহর্ন অ্যান্টিলোপের দল ফ্যালফ্যাল করে ট্রেনের যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে থাকে। একটু যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় তারা। আঁকাবাঁকা পথে ট্রেন এগিয়ে চলে। কখনও বাঁ দিকে, কখনওবা ডান দিকে। ট্রেনে গান বাজনার আসরও বসে। হঠাৎ দেখা মেলে গিটার হাতে নিয়ে শিল্পীরা টুং টাং শব্দ করছেন।

ফটোগ্রাফাররাও এ ট্রেনে উঠে একের পর এক ছবি তোলেন। চলতে চলতেই হঠাৎ ট্রেন থেমেও যায়। সবার মুখেই তখন প্রশ্ন জাগে। এমন সময় কয়েকজন লোক মাথায় টুপি, মুখ কাপড়ে ঢাকা, হাতের বন্দুক যাত্রীদের দিকে তাক করে বলে, যার যা সোনাদানা আছে সব দিয়ে দাও।

তখন ভয়ে সবাই চুপ। কিন্তু এটা আসলে ঠাট্টা করা- তারপর কিছু না নিয়েই তারা নেমে পড়ে। এই ট্রেনে এটাই হল এন্টারটেনমেন্টের শেষ পর্ব।

ধু ধু মাঠ পেরিয়ে এক সময় গভীর সবুজ জঙ্গলে ট্রেন ঢুকে যায়। দু’পাশে ঘন পাইনের সারি এখানে। মাঝখানে ট্রেন লাইন। কাইবার ন্যাশনাল পার্কের ঘন জঙ্গলের পরেই ক্যানিয়ন রেঞ্জ। ট্রেন এখানে কিছু সময় থামিয়ে রাখার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা নেমে পড়েন। তারপর উল্টোদিকে চলা শুরু করেন। গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নেমেই দেখা মেলে হোটেল আর হোটেল। এখানের নামিদামি হোটেল হল হেরিটেজ হোটেল। একসময় অ্যালবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন এ হোটেলে। সৌজন্যে : যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *