Skip to content

লাংকাউইয়ের পথে প্রান্তরে

ফারিহা কবির চৈতি
প্রায় সোয়া একঘণ্টা ক্রুসে ভাসার পর লাংকাউই জেটিতে পৌঁছলাম আমরা। জেটি থেকে বাইরে এসে গন্তব্য চেনাং বিচের জন্য ট্যাক্সি খুঁজতে লাগলাম। এরইমধ্যে দুইশ’ রিঙ্গিতের বিনিময়ে একটা কাভার্ড ভ্যান পেয়ে পেলাম।

Langkawai

এ পর্বে একটা ভুল হয়ে গিয়েছিল আমাদের। আর তা হলো আসার আগে কোনো হোটেল বুক না করা। এই ভুলে বেশ বড় ধরনের মাশুল দিতে হয়েছিল।

এই সময়টাকে বলা হয় ট্যুরিস্ট সিজন। সেই সঙ্গে স্থানীয় সরকারি ছুটিও ছিল। তাই পুরো লাংকাউইতে কোনো হোটেল খালি ছিল না বললেই চলে!

অনেক খোঁজাখুঁজির পর একটা রিসোর্টে দু’টো রুম খালি পাওয়া গেল। রিসোর্টটি ছিল একদম বিচের কাছাকাছি। রিসোর্ট থেকেই বিচ দেখা যায়, এতে আসতো সমুদ্রের হাওয়া!

Langkawai2
যাহোক, রিসোর্টে উঠে ফ্রেশ হয়ে সবাই বেরিয়ে পড়লাম খাবারের সন্ধানে। বাঙালি খাবার খুঁজে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত মালয় খাবারেই নির্ভর করতে হলো। মেন্যুতে ছিল স্যুপ, মালয় চিকেন ও ফ্রাইড রাইস। বেশ মজা করেই দুপুরের খাওয়ার পাট চুকলো।

এবার আসল উদ্দেশ্য সাধন অর্থাৎ লাংকাউই দর্শনের পালা। পরদিনই কুয়ালালামপুর ফেরার পরিকল্পনা থাকায় যত দ্রুত সম্ভব শহরটা ঘুরে দেখতে বেরিয়ে পড়লাম সবাই।

৪০০ রিঙ্গিতের বিনিময়ে একটা কাভার্ড ভ্যানও মিলে গেলো পুরো লাংকাউই ঘুরে দেখার জন্য। প্রথমেই গেলাম ওরিয়েন্টাল ভিলেজ লাংকাউইয়ে।

Langkawai3

উদ্দেশ্য ক্যাবল কারে চড়া। কিন্তু ট্যুরিস্টদের ভিড় খুব বেশি থাকায় পরিকল্পনা বদলে শুধু ওরিয়েন্টাল ভিলেজ ঘুরেই এ পর্বের ইতি টানতে হলো। গাড়িতে ফিরলে ড্রাইভার একটা জাপানিজ জেকুজি’র কথা জানালেন।

যেখানে মেডিটেশন, ইয়োগা এসব করা হয়ে থাকে। সময় থাকায় এ জায়গাটিও ঘুরে রওয়ানা হলাম পরবর্তী গন্তব্য তেলেগা তুযুহ ওয়াটারফলের উদ্দেশে।

পথে পড়লো সারি-সারি ইয়ট দিয়ে সাজানো ইয়ট পার্ক। দেখতে দেখতেই সন্ধ্যে, হোটেলে ফিরলাম সবাই।

Langkawai4

কুয়ালালামপুরে ফেরার জন্য লাগেজ গোছানোর আগেই সিদ্ধান্ত হলো কালই ফিরছি না আমরা। এতো কষ্ট করে লাংকাউই এসে অনেক কিছু না দেখে এভাবে ফিরে যাওয়ার কোনো মানে হয় না!

পরদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই রিসোর্টটি ছেড়ে পাশেই একটা ভালো হোটেলে উঠলাম। সেই সঙ্গে মামা একটা এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে আইল্যান্ড হপ্পিংয়ের প্যাকেজ নিয়ে নিলেন, এতে ব্যয় হলো মাথাপিছু ১০০ রিঙ্গিত।

ওই এজেন্সির একটা কাভার্ড ভ্যানে আমরা ১৫ মিনিটেই গন্তব্যে পৌঁছলাম। ঝড়োগতির একটি স্পিড বোটে চড়ে আমরা দায়াং বান্টিং আইল্যান্ডে এসে পৌঁছলাম।

Langkawai5

এটি আসলে অসাধারণ একটি দ্বীপ। দ্বীপের চারদিকে বিভিন্ন আকৃতির পাহাড় আর সাজানো গোছানো সবকিছু। এখানকার সমুদ্রের পানি খুব স্বচ্ছ ও সুন্দর। অনেকেই এখানে স্মার্কলিং করতে আসে।

দায়াং বান্টিংয়ের মুগ্ধতা চোখে নিয়ে দুপুরের মধ্যেই লাংকাউই ফিরে এলাম। একটা ভারতীয় রেস্তোরাঁয় সেরে নিলাম আমাদের দুপুরের ভোজ। এরপর ছুটলাম লাংকাউইয়ের অন্যতম আকর্ষণ আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ড দেখতে।

আন্ডার ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের ভেতরে ঢুকে তো অবাক! মনে হচ্ছিল বিশাল সমুদ্রের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেখলাম চারদিকে।

Langkawai6

অ্যাকুরিয়ামটা ঘুরে একটা ডিউটি ফ্রি শপিং সেন্টারের ভেতর দিয়ে বের হলাম। ডিউটি ফ্রি শপিং মানেই বিশাল ছাড়। অনেক কেনাকাটার পর হোটেলে ফেরা হলো।

হোটেলে রাতের খাওয়া সেরে বের হলাম রাতের লাংকাউই দেখতে। এখানে রাতের বেলা রোড শো হয়। রোড শো মানে রাস্তায় কনসার্ট। রাতের চেনাং বিচটাই বা বাদ থাকবে কেন?

মামীকে বলতেই রাজি হয়ে গেলেন। রাতের বিচ যে আরও অনেক বেশি সুন্দর তেনাং না এলে বুঝতাম না।

Langkawai7

পরদিন সকালেও তেনাংয়ে আরেক দফা সমুদ্র দর্শন হল। দুপুরে স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় মালয়দের প্রিয় খাবার পেনকেক খেলাম। এই পেনকেকটা অনেকটা আমাদের মোগলাই পরোটার মতো। সীমিত সময়ের মধ্যেও ঈগল স্কয়ার যেতে ভুলি নি, যেখানে অনেক হিন্দি সিনেমার চিত্রায়ন হয়। বাংলাদেশের কয়েকটি ছবির চিত্রায়নও হয়েছে এখানে।

এবার কুয়ালালামপুর ফেরার পালা। লাগেজ গোছিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আমরা ক্রুসে উঠে বসলাম। বেলা ২টায় ক্রুস ছেড়ে দিল। খুব মন খারাপ লাগলেও বিদায় জানাতে হল, বিদায় লাংকাউই, অসাধারণ মুগ্ধতা উজাড় করে দিয়েছো তুমি।

Langkawai8

টানা ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর আমরা আবার কুয়ালা পার্লিসে পৌছালাম।সেখান থেকে আবারও বাস। দীর্ঘ নয় ঘণ্টার যাত্রা শেষে স্থানীয় সময় রাত ১১টায় আমরা পৌঁছলাম কুয়ালালামপুরে।

এভাবেই শেষ হল- লাংকাউই যাত্রা। সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

Malaysia

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *