Skip to content

শতবর্ষ পুরানো ‘কুড়িয়ানা নৌকার হাট’

ধান, নদী, খাল – এই তিনে বরিশাল। জালের মতো ছড়ানো ছিটানো নদী আর খালের প্রাধান্য থাকায় এ অঞ্চলে আজও চলাচলের প্রধান যান নৌকা। আর বর্ষার সময় নদী-খালের পানি বেড়ে যাওয়ায় নৌকার ব্যবহারও যায় বেড়ে। বসে নৌকার হাটও।

Boat2

ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক
পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার কুড়িয়ানা হাটে নৌকা নিয়ে যাচ্ছেন কারিগররা। স্বরূপকাঠির সন্ধ্যা নদীর শাখা খাল ‘কুড়িয়ানা’-তে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বসে এ নৌকার হাট। প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জলে ও ডাঙ্গায় বসা এ হাট এই অঞ্চলের ঐতিহ্যেরও ধারক।

Boat3

নৌকা তৈরি করা যাঁদের পেশা
স্বরূপকাঠি উপজেলার এগারোটি গ্রামের প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি পরিবারের প্রধান পেশা নৌকা তৈরি করা। উপজেলার আটঘর, কুড়িয়ানা, আদমকাঠি, জিন্দাকাঠি, ইন্দুরকানি, দলাহার, আতাপাড়া, শেখেরহাট, চামির, গাগর, গগন প্রভৃতি গ্রামের নৌকার কারিগররা সারা সপ্তাহজুড়ে ব্যস্ত থাকেন নৌকা তৈরিতে। আর তারপর শুক্রবার সেই সব নৌকা নিয়ে বিক্রি করেন কুড়িয়ানা নৌকার হাটে।

Boat4

বর্ষায় রবিবারেও বসে হাট
শুক্রবার খুব সকাল থেকেই কারিগররা কুড়িয়ানার হাটে আসতে শুরু করেন। ক্রেতা সমাগম বিকেলে হলেও, ক্রেতা আকৃষ্ট করতে ভালো জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা থাকে এখানে। কুড়িয়ানার হাট সাধারণত সপ্তাহে মাত্র একদিন, অর্থাৎ শুক্রবার বসলেও বর্ষা মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকায় রবিবারেও সীমিত আকারে হাট বসান বিক্রেতারা।

Boat5

দুর্লভ হয়ে উঠেছে সুন্দরী
আটঘর বাজারে সাধারণত বিক্রি হয় কোষা ও ডিঙ্গি নৌকা। এ বাজারের নৌকার কারিগর আশুতোষ জানালেন যে, তাঁর বাপ-দাদারা নৌকা তৈরি করতেন সুন্দরী কাঠ দিয়ে। সে সময়ে সুন্দরী কাঠের সবচেয়ে বড় মোকাম ছিল স্বরূপকাঠি। তবে দিনে দিনে সুন্দরী কাঠ দুর্লভ হয়ে ওঠায়, তাঁরা এখন নৌকা তৈরি করছেন মেহগনি, চাম্বল, রেইনট্রি, গাব, গুলাব, আমড়া, বাদাম প্রভৃতি কাঠ দিয়ে।

Boat6

দু’জন মিলে করি কাজ…
ইন্দুরকানি গ্রাম থেকে আসা নৌকা বিক্রেতা আমজাদ মোল্লা জানান যে, দু’জন মিস্ত্রী দিনে একটি ছোট নৌকা তৈরি করতে পারেন। আকার আর কাঠের রকম ভেদে একেকটি নৌকা বিক্রি হয় দেড় হাজার থেকে চার হাজার টাকায়। তবে নৌকায় গাব, আলকাতরা কিংবা অন্য কোনো কারুকাজ থাকলে দামের তারতম্য তো হয়-ই।

Boat7

নামাজের পর জমে ওঠে বাজার
দিনের প্রথমভাগে নৌকা বিক্রেতারা হাটে এসে অলস সময় কাটান। এই ফাঁকে কেউ কেউ আবার একটিখানি জিরিয়ে বা ঘুমিয়েও নেন। তবে শুক্রবারের জুমার নামাজের পর বাজার জমে উঠলে বিক্রেতাদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়।

Boat8

মুঠোফোনেও হয় লেনদেন
কুড়িয়ানা নৌকার হাটে ক্রেতার অপেক্ষা করছেন বিক্রেতারা। তবে সব সময় এ সব বিক্রেতাকে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকতে হয় না। মোবাইল নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ ও মুঠোফোন সহজলভ্য হওয়ায় অনেক ক্রেতাই আজকাল কারিগরদের কাছে আগাম চাহিদার কথা জানান। পরে হাটের দিনে এসে যাচাই বাচাই করে সে নৌকা বুঝে নেন।

Boat9

এক নৌকায় দুই মৌসুম
কুড়িয়ানা হাটে ক্রেতারা নৌকা কেনার আগে ভালো করে যাচাই বাচাই করে নেন। স্বল্প আয়ের এ সব মানুষদের প্রতিটি নৌকা দিয়ে কমপক্ষে দুটি মৌসুম পার করতে হয়। প্রত্যেক ক্রেতাই তাই তাঁদের টাকার সর্বোচ্চ মূল্য পেতে সচেষ্ট থাকেন। তারপর নৈকা কিনে আনন্দে ঘরে ফেরেন তাঁরা।

Boat10

বৈঠাও বিক্রি হয় বাজারে
নৌকা চালানোর জন্য দরকার বৈঠা। কুড়িয়ানা বাজারে কোনো কোনো বিক্রেতা তাই শুধু নৌকার বৈঠা বিক্রি করেন। আর ক্রেতারা নৌকা কেনার পর আকার অনুযায়ী বৈঠা কিনে নেন বাজার থেকে। কুড়িয়ানা নৌকার হাটে সাধারণত একেকটি বৈঠার দাম ৮০-২০০ টাকা। বলা বাহুল্য, কাঠের ধরণ ও আকার অনুযায়ী বৈঠার দামের তারতম্য হয়।

Boat11

নানা কাজে ব্যবহৃত হয় নৌকা
কুড়িয়ানা বাজারে বিক্রি হওয়া নৌকাগুলো এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন কাজে বহুল ব্যবহৃত হয়। সাধরণত মাছ ধরা, কোথাও বেড়াতে যাওয়া, বাজারে পণ্য সরবাহ, পেয়ারা ধরা, হাট-বাজারে যাওয়াসহ নানান কাজে এ সব নৌকার ব্যবহার হয়।

Boat12

ভাসমান হাট বেশি দূরে নয়
স্বরূপকাঠির পার্শ্ববতী ঝালকাঠি জেলার ভিমরুলি গ্রামের কৃত্তিপাশা খালে বসে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ভাসমান হাট। বর্ষা ও শরতে এ হাটে শত শত নৌকা বোঝাই পেয়ারা আর আমড়া বিক্রি হয়। আর এ সব নৌকার বেশিরভাগেরই যোগান আসে কুড়িয়ানার নৌকার হাট থেকে।

Boat13

পাশেই রয়েছে আরেক হাট
কুড়িয়ানার পাশেই আরেকটি হাট ‘আটঘর’। ভাসমান এ হাটেও ছোট ছোট নৌকায় কৃষিপণ্য নিয়ে জড়ো হন বিক্রেতারা। এ বাজারেও কুড়িয়ানা হাটের নৌকারই প্রাধান্য। সূত্র : ডয়চে ভেলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *